,

নবীগঞ্জে আলোচিত প্রবাসীর মা ও স্ত্রী হত্যা ॥ শুভ ও তালেবের বিরুদ্ধে চার্জশীট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জে আলোচিত প্রবাসীর মা মালা বেগম ও তার স্ত্রী রুমী বেগম মামলায় আদালতে ঘাতক বখাটে শুভ ও তালেবের বিরুদ্ধে চার্জশীট আদালতে দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি শাহ আলম হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশীটটি দাখিল করেন। গত রবিবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা অভিযুক্তদের দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবাবন্দিসহ দীর্ঘ তদন্ত শেষে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামীরা হলেন- নবীগঞ্জ উপজেলার আমতৈল গ্রামের আমির হোসেনের পুত্র তালেব মিয়া (২৪) ও বানিয়াচঙ্গ উপজেলার হোসেনপুর (কুর্শাখাগাউড়া) গ্রামের হাফিজুর রহমানের পুত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ।
ঘাতকদের হাতে নিহতরা হলেন কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (৫০) ও তার পুত্রবধূ রুমি বেগম (২২)। নিহত রুমি লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়া চৌধুরীর ছেলে লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী ওরফে গুলজারের স্ত্রী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, নিহত রুমী বেগমের লন্ডন প্রবাসী স্বামী আখলাক চৌধুরী গুলজার তার স্ত্রী রুমী বেগমকে মোবাইলের একটি কাভার কিনে দেয়ার জন্য তার এক বন্ধু রিপনকে বলে। রিপন মোবাইলের কাভারটি কিনে গত ১১ মে তার ভাই জয় এর মাধ্যমে সাদুল্লাপুর প্রেরণ করেন। জয় আসার পথে ওই এলাকায় বসবাসরত বখাটে যুবক জাকারিয়া আহমেদ শুভ এর সাথে দেখা হয়। এ সময় জয়ের সাথে শুভও রুমী বেগমের বাড়ি যায়। সেখানে গিয়ে জয় ঘরে প্রবেশ করলেও শুভ বাহিরে অপেক্ষা করে। পরে মোবাইল কাভার পছন্দ না হওয়ায় রুমী সেটা ফিরত দিয়ে দেন। ওই সময় রুমী বেগমের প্রতি কুনজর পড়ে বখাটে যুবক শুভর। সে খোজ নিয়ে জানতে পারে ওই বাড়িতে অবাদে যাওয়া আসা করে মালা বেগমের পাশের বাড়ির ফুরুক মিয়ার কাজের লোক আবু তালেব। শুভ ঘনিষ্টতা গড়ে তুলে আবু তালেবের সাথে। উদ্দেশ্য ওই বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করা। পরদিন শুভ বাড়ির পাশে একটি ব্রীজে তালেবকে নিয়ে আড্ডায় বসে। এ সময় শুভ তার মোবাইলে থাকা পর্ণূগ্রাফি ছবিও ভিডিও দেখায়। এক পর্যায়ে শুভ প্রবাসীর স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ করে তালেবকে। এতে তালেব রাজী হলে ব্রীজে বসেই দু’জনে পরিকল্পনা করে। এতে রুমীর শাশুরী মালা বেগম বাধ সাধলে তাকে হত্যা করা হবে বলেও এরা সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন গত ১৩ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এরা ওই বাড়ি যায়। তখন পূর্ব পরিচিত হিসেবে তালেব গেইটে গিয়ে ডাক দিলে মালা বেগম গেইট খুলে দেন। এ সময় শুভকে দেখতে পেয়ে তিনি শুভকে ঘরে প্রবেশে বাধা দেন। কথা বার্তার এক পর্যায়ে তালেব তার হাতের ছোরা দিয়ে মালা বেগমকে আঘাত করে। এতে মালা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘরে একটি রুমে প্রবেশ করলে ওড়না দিয়ে বেধে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে মালা বেগমকে হত্যা এরা হত্যা করে। এদিকে শ্বাশুরী মালা বেগমের চিৎকার শুনে তার পুত্রবধু রুমী বেগম শয়ন কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে এ ঘটনা দেখে ফেললে শুভ ছুরি দিয়ে রুমীকেও আঘাত করে। এ সময় রুমী চিৎকার দিয়ে বাঁচার জন্য দৌড় দিয়ে কিছু দুর গিয়ে পড়ে গেলে শুভ ও তালেব উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মালা এবং রুমীর চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমেদ মুসার বাড়িতে বৈঠকে থাকা গ্রামের লোকজন আসতে শুরু করলে তালেব ও শুভ দ্রুত পালিয়ে যায়। যাবার সময় শুভ পাশের খালে রক্তমাখা কাপড় ও ছোরা ফেলে নানার বাড়ি চলে যায়। এদিকে তালেবও তার মালিক ফুরুক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে গোয়াল ঘরে প্রবেশ করে রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করে।
গত ১৩ মে রবিবার রাতে লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই হত্যার মুটিভ উদঘাটনে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে নামে। পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। প্রথমেই সন্দেহজনক ভাবে পুলিশ নিহতদের বাড়িতে আসা যাওয়া পাশের কাজের লোক তালেব মিয়াকে আটক করে। পরে বখাটে জাকারিয়া আহমেদ শুভকে আটক করা হয়। ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদে তালেব ও শুভ নির্মম হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুভ’র নানা মানিক মিয়ার বাড়ির নিকটবর্তী তেতুঁল গাছের পাশে ভক্তখালের মধ্যে লুকানো রক্তমাখা টাউজার এবং চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুছার বাড়ির পুর্বে মরা কুশিয়ারা নদী থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরা উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তালেব ও শুভ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুল জবানবন্দি প্রদান করে।
প্রেস ব্রিফিংকালে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামছুর রহমান ভূইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রবিউল আলম, সহকারি পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন, ডিআই-১ মাহবুবুর রহমান, ডিবির ওসি শাহ আলম, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাজিম উদ্দিন সহ পুলিশের কর্তকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


     এই বিভাগের আরো খবর