,

বাঁশের তৈরি শিল্প অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে

জসিম তালুকদার, নবীগঞ্জ থেকে:  শিক্ষিত কিংবা কমশিক্ষিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা বেকার যুবকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুঁজির সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। বর্তমান সময়ে চাকরির যে প্রতিযোগিতা তাতে টিকে থাকা কষ্টকর। তাই যারা চাকরির দিকে যেতে চান না তারা বাঁস দিয়ে তৈরি শিল্প ব্যবসার কথা ভাবতে পারেন। আদিকাল থেকেই এদেশের হস্তশিল্প দেশ বিদেশে প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছে। তা সে কাপড় তৈরিতেই হোক কিংবা তৈজসপত্রে। প্রাচীন কালে বাংলার আশপাশের দেশে বেশ খ্যাতি ছিলো এদেশের হাতে তৈরি জিনিসের।
পাহারী পরগনা: সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই এদেশের হস্তশিল্প দেশ বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। তা সে টুকরী তৈরিতেই হোক কিংবা ঝাকা তৈরিতে। প্রাচীন কালে বাংলার আশপাশের দেশে বেশ খ্যাতি ছিলো পাহারী অঞ্চলের হাতে তৈরি জিনিসের। আর আজ বিশ্বায়নের যুগে উপমহাদেশ ছেড়ে এ খ্যাতি ছড়িয়েছে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আধুনিকায়নের এ যুগেও তাই এতটুকু ¤øান হয়নি হস্ত শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব। এখনো এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে গ্রাম বাংলার অনেক পরিবার। বিশেষ করে ঈদ কিংবা পূজা পার্বন এলে এখনো যেনো এসব জিনিস তৈরির ধুম পড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিভিন্ন মেলা ও রথ-যাত্রায় স্থান হয় বাঁশের তৈরি ডালা ও লাচ্ছা-সেমাই রাখার খাঁচিসহ কমপক্ষে ৪০ রকমের কুটির শিল্প সামগ্রী। তাইতো নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে পাহারী পড়গনা ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাড়ীতে ঘুরে দেখা গেছে, আজ এখানে তো কাল ওখানে। খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী ভাসমান জগতের বাসিন্দারা গ্রামে ডালা ও ছোট খাঁচি তৈরি করছেন। কেউ বিক্রয়ের জন্য আবার কেউ নিজে ব্যবহার করা জন্য। নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও নানা প্রতিকুলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবিকার তাগিদে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম থেকে গ্রামে। কথা হয় উপজেলার ১৩নং ইউপি, পানিউমদা ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের খাতনের মা নামে পরিচিত বৃদ্ধ মহিলাটির সাথে তিনি তার স্বামীর আমল থেকেই টুকরী, ঝাকা ও পাখা তৈরি করে বিক্রয় করতেন। তবে বর্তমানে উনার স্বামী না থাকায় নিজেদের জন্য বাস দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করেন। আবার নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ও কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এসব হস্তশিল্পের সাথে জড়িত।
বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী তৈরিতে নারী/পুরুষ সমান ভাবে জড়িত। তাদেও জীবন পাতায় আজও সৌখিনতার ছোঁয়া লাগেনি। কম দামের এক টুকরো কাপড় আর দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়েছেন এসব নারী/পুরুষ। ওদের কাছে বেঁচে থাকা মানেই ভালো থাকা। কথায় কথায় শোনা গেল তাদের বৈচিত্রময় জীবনের নানা গল্প। সবক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকা বেশি উল্লেখ করে খাতনের মা ও কাজল মিয়া গ্রামের কাগজ প্রতিনিধিকে জানান, বাঁশ শিল্প তাদের পৈত্রিক পেশা। বাঁশ দিয়ে গৃহস্থালী কাজের জন্য কুলা, চালুন, ঝাকা, ডালা, সর্পোশ, খালই এবং শিশু কিশোরদের খেলনা হিসেবে ছোট কুলা, ফুলতোলা চালুন, জুড়ি, পাখাসহ কমপক্ষে ৩০/৩৫ রকমের সামগ্রী তৈরি করেন তারা। বিভিন্ন রং দিয়ে রাঙানো জিনিসগুলো ডিজাইনের ভিত্তিতে খুচরা ১০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
নবীগঞ্জ সদও ইউনিয়নের ব্র্যাক অফিসে কর্মরত অফিসার আঃ রহিম জানান, বেকার নারীরা বাঁশ দিয়ে এসব খাঁচি, চাঁটাই, বেড়া ইত্যাদি তৈরি করে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিলে কর্মসংস্থানের জন্য বিনা সুদে তাদের ঋণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর