,

নবীগঞ্জে সত্যজিৎ ও আজমিরীগঞ্জের বাছিত হত্যা মামলায় ৩ আসামির ফাঁসির আদেশ

২০০৯ সালে ১ হাজার টাকার জন্য সত্যজিৎকে হত্যা \ ২০১৩ সালে পূর্ব-শত্রæতার জেরে বাছিতকে হত্যা

মতিউর রহমান মুন্না :: নবীগঞ্জে বহুল আলোচিত কিশোর সত্যজিৎ হত্যা মামলায় অরবিন্দু দাস (২৯) নামের এক আসামিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আজমিরীগঞ্জের বাছিত চৌধুরী নামের এক যুবক হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদন্ড হয়েছে। সত্যজিৎ হত্যা মামলার আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তার সম্পত্তি বিক্রি করে তা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন এ রায় দেন। এ মামলার অপর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্ত অরবিন্দু দাশ (৩৩) নবীগঞ্জ উপজেলার চৌকি গ্রামের মনিন্দ্র দাশের ছেলে।
অপর দিকে, আজমিরীগঞ্জের বাছিত চৌধুরী নামে এক যুবক হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম নাছিম রেজা। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে সাকিউর চৌধুরী এবং একই গ্রামের রমিজ মিয়ার ছেলে গাজীউর চৌধুরী।
নবীগঞ্জের কিশোর সত্যজিৎ হত্যা মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি রাতে বানিয়াচং উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের প্রবাসী নকুল দাশের ছেলে সত্যজিৎ দাশ (১৪) চৌকি গ্রামে কীর্তন দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এর চারদিন পর ১৫ ফেব্রæয়ারি চন্ডীপুর গ্রামের শ্মশানের পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন সত্যজিতের বোন অলিকা রাণী দাশ বাদী হয়ে চৌকি গ্রামের অরবিন্দুসহ ওই নয়জনকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাইকে হত্যা করেছেন। মামলাটি তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মার্কুলী পুলিশ ফাঁড়ির তৎক্ষালিন এসআই একরামুল হক ৯ জনকেই অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্ত চলাকালে গ্রেফতারকৃত অরবিন্দু দাশ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পাওনা ১ হাজার টাকা না দেয়ায় সত্যজিৎকে হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেন অরবিন্দু দাশ। দীর্ঘ শুনানি ও রাষ্ট্রপক্ষে ১৮ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার এ রায় দেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে দন্ডিত আসামিসহ পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। বাকি চার জন পলাতক। বাদীপক্ষের আইনজীবী হবিগঞ্জ জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. সিরাজুল হক জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। রায়ে বাদীপক্ষের পরিবারও আনন্দিত। এ মামলায় খালাসপ্রাপ্তরা হলেন চৌকি গ্রামের মৃত অক্ষয় দাশের ছেলে অনীল দাশ (৪২) ও সুনীল দাশ (৪৮), একই গ্রামের নৃপেন্দ্র দাশের ছেলে নীরেশ দাশ (২৫), সঞ্জু দাশের ছেলে সুবেন্দ দাশ (২৫), মৃত নারায়ণ দাশের ছেলে প্রদীপ দাশ (৪০), নিবারণ দাশের ছেলে নেপাল দাশ (২৮), মনীন্দ্র দাশের স্ত্রী বিপুলা রাণী দাশ (৫৫) ও তার ছেলে মলয় দাশ (৩২)।
এদিকে, আজমিরীগঞ্জের বাছিত চৌধুরী মামলা সূত্রে জানা যায়, হত্যার শিকার বাছিত চৌধুরী শিবপাশা গ্রামের মৃত বদিউজ্জামান চৌধুরীর ছেলে। ২০১৩ সালের ৯ জুন রাত ১০টার দিকে বাছিতকে বাড়ি থেকে ডেকে একই গ্রামের মুন্সি হাটিতে নিয়ে যান সাকিউর ও গাজিউর। পরে তারা কয়েকজনের সহযোগিতায় বাছিতকে হত্যা করে মরদেহ হাওরের নাইয়াহারা বিলের পানির নিচে পুঁতে রাখেন। এদিকে, বাছিতের কোনো খোঁজ না পেয়ে তার ভাই জিশু মিয়া চৌধুরী ১৩ জুন আজমিরীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ সাকিউর ও গাজিউরকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যা ও মরদেহ গুম করার কথা স্বীকার করেন। ২৪ জুন পুলিশ বিল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। ওই দিনই জিশু মিয়া চৌধুরী ওই দু’জনসহ ১২ জনকে আসামি করে আজমিরীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় সাকিউর ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পূর্ব-শত্রæতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আজমিরীগঞ্জ থানার সেই সময়ের এসআই সাজ্জাদুর রহমান ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ জনের স্যাক্ষগ্রহণ ও শুনানি শেষে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় গতকাল দু’জনকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারক। আর অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বাকি আসামিদের বেখসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় সাউকিউর চৌধুরী আদালতে উপস্থিত থাকলেও গাজিউর পলাতক। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক। তিনি বলেন, যারা ঘটনার নায়ক ছিল তাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে। এসময় মামলার বাদী জিশু চৌধুরী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনিও এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর