,

পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তৃতি ঘটছে বিশ্বব্যাপী – লন্ডনে ওয়াল্ড সিন্দি কংগ্রেস কনফারেন্সে আলোচকবৃন্দ

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন থেকেঃ বিশ্বে একমাত্র দেশ হচ্ছে পাকিস্তান যেখানে ধর্মকে পূঁজি করে  রাষ্ট্রীয় পৃষ্ট পোষকতায় উগ্রবাদের উত্থান ঘটেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানে প্রতিদিন ঘটছে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা।  আর পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তৃতি ঘটছে বিশ্বব্যাপী। সিন্দু এবং বেলুচিস্তানে প্রতিদিনই ঘটছে ধর্ষন, হত্যা, গুম  ও জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করার মত অমানবিক ঘটনা। ওয়াল্ড সিন্দি কংগ্রেস আয়োজিত ৩০তম বার্ষিক কনফারেন্সে ‘‘ হিউম্যান রাইট সিচুয়েশন এন্ড এনফোর্সড ডিসএ্যাপিয়ারেন্স’’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত আলোচকবৃন্দ এঅভিমত ব্যক্ত করেন।

আলোচবৃন্দ তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন  পাকিস্তান হচ্ছে একমাত্র দেশ যেখানে ধর্মের নামে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় গড়ে উঠেছে জয়সী মোহাম্মদ ও লস্করী তৈয়বার মত একাধিক টেররিস্ট সংগঠন। এই সংগঠন গুলো এতই বেপরোয়া যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

সিন্দুতে বছরের পর বছর ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশত্যাগে বাধ্য করতে সরকার ভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামতের কোন তোয়াক্কা না করে সিন্দু নদীতে একের পর এক ডেম নির্মানের ফলে সিন্দু নদের পানি প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে একটি অঞ্চল সম্পুর্ণ মরুভ‚মিতে পরিনত হয়েছে, সেখানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এসব কারনে স্থানীয় অধিবাসীরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।  ওয়াল্ড সিন্দি কংগ্রেসের লন্ডন সাপ্টারের সেক্রেটারী লাকু লোহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে পেনেলিষ্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের সদস্য জুলি ওয়ার্ড, জুলি ওয়ার্ড সিন্দুর মানুষের প্রতি তার পূর্ন সমর্থনের কথা ব্যক্ত করে টেলিকফােেরন্স বলেন সিন্দুতে বছরের পর বছর ধরে চলছে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এটি খুবই বেদনা দায়ক। ইউকে পিএনপির প্রেসিডেন্ট শওকত কাশ্মিরী বলেন পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআ্ইয়ের মদদে জঙ্গিগোষ্টী কাশ্মির ভ‚খন্ডে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে যার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারন কাশ্মিরীদের। পাকিস্তানী বংশদ্ভোত ব্রিটিশ মেইন ষ্ট্রীমের সাংবাদিক রেহাম খান বলেন, পাকিস্তানকে নিয়ে আমরা আর গর্ববোধ করিনা এখন লজ্বাবোধ করি, তিনি ২০১২ সাল থেকে কয়েক বছর তার পাকিস্তানে অবস্থানের বর্ণনা দিয়ে বলেন পাকিস্তানের মানুষ উগ্রমৌলবাদীদের কাছে জিম্মি, উগ্রবাদীদের ইচ্চায় চলে সরকার, তিনি বেলুচিস্থান এবং সিন্দুর মানুষের বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে বলেন প্রতিদিনই সেখানে ঘটছে মানবাধিকার লংঘনের অসংখ্য ঘটনা। ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী রাগবির সিং সৌধ বলেন সিন্দুতে এমন অবস্থা আরো কয়েক বছর চলতে থাকলে সিন্দু অঞ্চল মানুষের বসবাসের অযোগ্য হযে পড়বে। আফগান ইউনিটি মুভমেন্ট ইউকের ড. সালাউদ্দিন সাইদী বলেন সুন্দর দেশ আফগানিস্থানকে ধ্বংশ করতে পাকিস্তানই দায়ী, তিনি বলেন পাকিস্তানের কয়েকটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দল এবং পাক সরকারের পৃষ্টপোষকতায় তালেবানরা আফগানিস্থানে শক্তিশালী হয়ে উঠে। এখনও পকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আফগান জঙ্গিগোষ্টীকে সহায়তা করছে। বেলুচিস্তানের হিউম্যানরাইট এক্টিভিষ্ট হাম্মাল বালুচ বলেন বেলুচিস্তানে প্রতিদিন ঘঠছে হত্যা ধর্ষনের ঘটনা এসব ঘটাচ্ছে পাকিস্তানী সৈন্যরা এবং জঙ্গিগোষ্টী তালেবান ,  জয়সী মোহাম্মদ ও লস্করী তৈয়বা। বাংলাদেশ থেকে আগত মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন উগ্রমৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠন জামাতে ইসলামী সব সময় নেপথ্যে থেকে পাকিস্তান সরকারকে নিয়ন্ত্রন করছে, আর এই মওদুদীবাদের কারনে পাকিস্তান একটি  উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিন বেলুচ এবং সিন্দুর মানুষের প্রশংসা করে বলেন সেখানকান অধিবাসীরা খুবই অতিথিপরায়ন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন বাংলাদেশে ৩০লক্ষ নীহির মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী আর পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা ৩লক্ষ নারী ধর্ষিত হয়েছে।   বাংলাদেশের ১০মিলিয়ন মানুষ তখন ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্দি ও ভারতের জনগন আমাদের আশ্রয় দেয় এবং তখন তারা আমাদের পাশি দাড়িয়েছে, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন আমাদের দাবী ১৪৮জন পাকিস্তানী সৈন্য যারা বাংলাদেশে গণহত্যা ও ধর্ষনের সাথে জড়িত তাদের বিচার করতে, পাকিস্তান তখন আশ্বাস দিয়েছিল এদের বিচার করবে, হামিদুর  রহমান রিপোর্টেও এর উল্লখ রয়েছে, পাকিস্তানের কোন সরকারই এবিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ কোন গনহত্যাকে সমর্থন কনিনা।  বার্মা থেকে হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা দশলক্ষ মানুষকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে, আমরা চাইছি বার্মার গণহত্যার বিচার হউক সেই সাথে বেলুচিস্তান এবং সিন্দু গনহত্যা সহ বিশ্বব্যাপী সব গণহত্যার বিচারের পক্ষে বাংলাদেশ। এছাড়া এই কনফারেন্মে  সিন্দু এবং বেলুচিস্থানের মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জার্মানী থেকে আগত লেখক গবেষক আতিফ তৌকির ও আমেরিকা থেকে আগত ড. সাফদার সারকি।

ইউনিভারসিটি অব ওয়েষ্ট মিনিষ্টারের হ্যারো ক্যাম্পাসে গতকাল শনিবার ২৭ অক্টোবর ২০১৮ দিনব্যাপী আয়োজিত ৩০তম এই কনফারেন্স শুরু হয় সকাল ১০টায় এবং শেষ হয় রাত ন‘টায়। সকাল দশটায় শুরু হয় রেজিষ্টেশন, দশটা ত্রিশমিনিটে  ওয়াল্ড সিন্দি কংগ্রেসের নতুন কমিটির পরিচিতি ও শপথ গ্রহন। ১১টা ত্রিশ মিনিটে কনফারেন্সের পরিচিতি ও সূচী তলে ধরেন ড. হেদায়েত ভুট্রো। সকাল ১১টা ৪০মিনিটে অনুষ্টানের প্রথম পর্বে ছিল ‘‘স্ট্রাগল ফর হিউম্যান রাইট ও ওয়ার্কিং টৃগেদার শীর্ষক আলোচনা। এতে আলোচনায় অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল সিন্দি ওমেন অগেনাইজেশনের সাউসী লাগারী, সিন্দি সংগাত ইউকের আব্দুস সত্তার সমর,  ইউকে কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ডঃ আফসানা বোরগারী, সিন্দ মাইনরিটি রাইট এক্টিভিষ্ট কৃষান শর্মা,  ইউকে মানবাধিকার কর্মি ডাঃ সরওয়ার শাহ, সিন্দি এক্টিভিস্ট মুজিব শাহ, সাউথ হ্যারো  কাউন্সিলের কাউন্সিলার পিম্যান আসাদ। দুপুর এক ঘটিকায় লাঞ্চ বিরতি এর দুপুর দুই ঘটিকায় শুরু হয় দ্বিতীয় সেশন ‘‘ মিসএ্যাপিয়ারেন্স অব ন্যাচালেন রিসোর্স এন্ড এনভারমেন্টাল জাষ্ট্রিজ শীর্ষক সেমিনার এতে আলোচনায় অংশ নেন নেদারল্যান্ড থেকে আগত পরিবেশ বিষয়ক গবেষক মিস ইয়না বারাকা, ব্রাসেলস থেকে আগত ইউএনপিও‘র সেক্রেটারী রালফ বাঞ্চে,  এর পর পাঁচ মিনিটের একটি সর্ট ডকুমেন্টারী দেখানো হয়, এর পর আরোচনায় অংশ নেন ব্রিটিশ লেখক এ্যালিস আলবিনা, প্রফেসর দানিস মোস্তফা কিংষ্টন বিশ্ববিদ্যায়ল ইউকে, সিন্দি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. হাসান আব্বাস।  তৃতীয় পর্বে মূল সেমিনার ‘‘ হিউম্যান রাইট সিচুয়েশন এন্ড এনফোর্সড ডিসএ্যাপিয়ারেন্স। সন্ধ্যা ছয়টায় সমাপনি বক্তব্য রাখেন ওয়াল্ড সিন্দি কংগ্রেসের চেয়ারম্যান ডাঃ রুবিনা সিন্দ। সন্ধ্যে সাত ঘটিকায় সঙ্গীত সন্ধ্যা ও রাত নয়টায় ডিনারের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।


     এই বিভাগের আরো খবর