,

বিএনপির নির্দেশনা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া যাবে না

সময় ডেস্ক :: দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য নেতাকর্মীদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর ইতিবাচক মতামতও গ্রহণ করছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। একই সঙ্গে তাদের এখন থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার জন্য বলা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত সোমবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নন প্রত্যাশীদের এক সাক্ষাৎকারে দলের হাইকমান্ড এসব নির্দেশনা দেন। গতকালও স্কাইপে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশগ্রহণ করেন। সকাল ৯টা থেকে বরিশাল বিভাগের সাক্ষাৎকার পর্বে বরিশাল-১ আসন দিয়ে শুরু  হয়। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ২১টি সংসদীয় আসনে ১৮৪ জন এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৬টি আসনে ২৯০ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গত রোববার সাক্ষাৎকারের প্রথম দিন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা। পার্লামেন্টারি বোর্ডে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকারে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছাড়াও দলের সংশ্নিষ্ট জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে আসা দলের সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত শহীদুল হক জামালকে নেতাকর্মীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তিনি বরিশাল-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। কয়েক দিন আগে তাকে দলে সক্রিয় করা হয়। এ সময় নেতাকর্মীরা তার অতীত ভুল রাজনীতি নিয়ে কটাক্ষ করেন। সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় জামাল তার ভুল স্বীকার করলে নেতাকর্মীরা তার পথ ছেড়ে দেন। একইভাবে ঝালকাঠি জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো ও বরিশালের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ রশিদ হাওলাদারের বিরুদ্ধেও নেতাকর্মীরা ¯েøাগান দিতে থাকেন। দুপুরের পর খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মনোনয়ন নেওয়ার সময়ে এই জেলার নেতাকর্মীরা গুলশান কার্যালয়ের বাইরে দলের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বাগেরহাট-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী রামপাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান তুহিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপির সহায়তায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এখন তার টাকায় ভুয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য। শেখ মোহাম্মদ মাসুম নামের একজন কর্মী জানান, সরকারের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে বিএনপি নেতা তুহিন ছাড়াও জুলফিকার ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাইছেন। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পকেট কমিটিতে তারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তারা এ বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানোর জন্য এসেছেন। সাক্ষাৎকারে আসা বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সাক্ষাতে তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। তিনি সব প্রার্থীর কাছে জানতে চান- দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারা তার পক্ষে কাজ করবেন কি-না? এ সময় সব মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তবে ব্যতিক্রম ঘটনায় বরিশাল-৫ আসনে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার চুপ করে থাকেন। এ সময় তারেক রহমান তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মজিবর রহমান সাহেব কোনো কথা বলছেন না। পরে এর উত্তরে সরোয়ার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। ভোলা-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার আক্তার হোসেন বলেছেন, ভোলার চারটি আসনের সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে একসঙ্গে ডাকা হয়। এ সময়ে মনোনয়ন বোর্ডে এক ধরনের বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই প্রথম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ড কাজ করছে। তাই প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশীই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তবে তারেক রহমানের বক্তব্যের পর সবার মধ্যেই আলাদা প্রাণচাঞ্চল্য কাজ করে। তিনি প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে সারাদেশের নির্যাতিত নেতাকর্মী, গণতন্ত্র, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অংশগ্রহণ করা একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি কথা বলেন। অপর একজন নেতা জানান, মনোনয়ন বোর্ডে প্রবেশের পর দলের মহাসচিব ভূমিকা বক্তব্য দেন। দলের হাইকমান্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়েছেন, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এই দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। কিন্তু এমন বৈরী পরিবেশ তারা কখনও দেখেননি। সারাদেশে এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলাসহ অন্য একাধিক মামলা হয়নি। শুধু রাজনৈতিক কর্মীরাই নয়, বিভিন্ন পেশাজীবীও এসব নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। তাই দল ও দেশকে বাঁচাতে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন বলেছেন, তাদের জেলার চারটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একসঙ্গে ডাকা হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডে তাদের তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। শুধু তারেক রহমান বলেছেন, বাঁচতে হলে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে, দেশের জনগণের মুক্তি মিলবে, গণতন্ত্রের মুক্তি মিলবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই নির্বাচনযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেছেন, তারেক রহমানের বক্তব্য শেষে দলের মহাসচিব তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে প্রতিশ্রুতি আজ দিয়েছেন, আশা করব দলের স্বার্থে, খালেদা জিয়ার মুক্তির স্বার্থে এবং গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের জন্য তা রক্ষা করবেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন নেতা বলেন, বোর্ড সদস্যরা বলেছেন- এবার একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোট হচ্ছে। তাই সবাই কৌশলগত এই নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। সব সময়ে রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন হয় না। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তাই এবারের জাতীয় নির্বাচন তাদের কাছে আন্দোলনের কৌশল। এখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে টিকে থাকতে হবে। ভোটের মাঠ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই যারা নিজ নিজ এলাকায় বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে ভোটের মাঠে থাকতে পারবেন, ভোটারদের সঙ্গে থাকতে পারবেন, তাদেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রার্থীদের মনোবল কতটা শক্ত, প্রার্থীর জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীরা কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারবেন, সেটা দেখা হচ্ছে। খুলনা-৫ আসনের প্রার্থী ড. মামুন রহমান এফসিএ বলেন, তাদের সাক্ষাতে তারেক রহমানের বক্তব্যের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। দলের মহাসচিব তাদের সবার সঙ্গে নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের তৃতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ, দুপুর আড়াইটা থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগ; আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ, দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর