,

নৌকার সরব প্রচারণা, মাঠে নেই ধানের শীষ

মতিউর রহমান মুন্না :: ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, উন্নয়নের মার্কা- নৌকা মার্কা’ এসব ¯েøাগান দিয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি জানান দিয়ে চাওয়া হচ্ছে নৌকার ভোট। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনটিতে সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম থাকলেও এখনও মাঠে নামেনি ধানের শীষের প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই এ আসনে আওয়ামী লীগের তনয় শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী প্রচারণায় নেমেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে প্রার্থী নিজে ও তার কর্মী সমর্থকরা। নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এদিকে নৌকার পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগানো হলেও প্রতিদ্ব›দ্বী কোনো প্রার্থীর পোস্টার এখনও লাগানো হয়নি। এ আসনের মূল দুই প্রতি প্রতিদ্ব›দ্বীই একই ইউনিয়নের। এমনকি দুজনই বর্ষীয়ান দুই নেতার পুত্র। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্ষীয়ান নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজীর তনয় শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী (নৌকা প্রতীক)। ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার তনয় ড. রেজা কিবরিয়া লড়বেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।  দুই জোটের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দুই প্রার্থী নৌকা ও ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকাবাসী ও সাধারণ ভোটাদের মধ্যে চলছে আলোচনার ঝড়।
গতকাল সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকাঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ঝুলছে নৌকার পোস্টার। চলছে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা। পাড়া-মহল্লা, অলিগলি সবখানেই নৌকার মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম। নির্বাচনী ক্যাম্পে চলছে কর্মী ও সমর্থকদের আড্ডা। কিন্তু উল্টো চিত্র ধানের শীষের। রাস্তায় চোখে পড়েনি কোনো পোস্টার। নেই কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পও। গত শনিবার বাহুবল উপজেলায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে ঢাকায় চলে ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি এখনও প্রচারণা শুরু করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক মামলা থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী এলাকায় নেই। আর যারা রয়েছেন তারাও ভয়ে মাঠে নামছে না। প্রার্থী রেজা কিবরিয়া নিজেও অবস্থান করছেন ঢাকায়। অন্যদিকে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন এলাকার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। কে হবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী এমপি তা নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা। মিলাদ গাজীর বাড়ি দেবপাড়া ইউনিয়নের দেবপাড়া গ্রামে ও ড. রেজা কিবরিয়ার এর পাশবর্তী জালালসাফ গ্রামে।
আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীর পিতা দেওয়ান ফরিদ গাজী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কয়েকবার হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে উপনির্বাচেন বিজয়ী হন বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া।  ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মিলাদ গাজীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোটগত কারণে আওয়ামীলীগ আসনটি ছেড়ে দেয় জাতীয় পার্টিকে। তখন বিনা প্রতিন্ধ›িদ্বতায় এমপি হন জাতীয় পার্টির নেতা এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা।
অপর প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন। তার বাবা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়াকে ধানের শীষে প্রতীকে নির্বাচনে মনোনিত করায় স্থানীয় বিএনপির বিশাল একটি অংশে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেননা অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কারণ এ আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া। তাকে দলীয়ভাবে মনোনিতও করা হয়। শেষ পর্যন্ত জোটগত কারণে ঐক্যফ্রন্ট থেকে চ‚ড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে শেখ সুজাত কে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও এই আসনেই রয়েছেন আরো প্রার্থী। মহাজোটের বাহিরেও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (মই), মো. নূরুল হক (গামছা) ও জুবায়ের আহমেদ (মোমবাতি)। এদের মধ্যে আলোচনায় বর্ষীয়ান দুই নেতার ছেলে পরস্পরের প্রতিদ্ব›দ্বী হওয়ায় এই আসনে কে হবেন বিজয়ী তা সবার আলোচনার শেষ নেই।
প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে নৌকা জয়লাভ করে এ আসনটিকে নৌকার আসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারব।


     এই বিভাগের আরো খবর