,

আজ কে হাসবেন শেষ হাসি?

হবিগঞ্জে ৪টি আসনে লড়ছেন ২৪ জন প্রার্থী

মতিউর রহমান মুন্না :: টানা কয়েক দিন স্ব স্ব এলাকার বাতাস গরম ছিলো নিবার্চনী হাওয়ায়। পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে আজ রোববার সম্পন্ন হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হবে বলে সবাই আশাবাদী। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। গতকাল থেকেই নিরাপত্তা রায় কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। বাকি ছিল শুধু ভোট দেয়ার পালা, আজই দেয়া হচ্ছে সেই মূল্যবান ভোট। তবে সবার মনে একটাই প্রশ্ন- কে হাসবেন শেষ হাসি, আর কে পরবেন বিজয়ের মালা?। হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ৪টি সংসদীয় আসন ৯টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়ন। এ জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৫শ ৬৪। ৪টি আসনের মধ্যে (নবীগঞ্জ-বাহুবল) নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনটি আলোচিত বেশি। এ আসনে এবার লড়াই করছেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। তারা দুজনই বর্ষীয়ান দুই নেতার পুত্র। একজন দেওয়ান গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদগাজী। তিনি দেওয়ান ফরিদগাজীর পুত্র। অপর জন ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি শাহ এএমএস কিবরিয়া।
দুজনই একই উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের। রাজনীতির আড়ালে দুই প্রার্থীর পারিবারিক ইমেজ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। ড. রেজা আর মিলাদগাজী এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক। দুটি উপজেলা, ১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯শত ৩৯। চা-শ্রমিক অধ্যুষিত ২৩৯ নং সংসদীয় এ আসনটিতে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। তবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্যরা। আসনটি মুলত আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (মই), কৃষক শ্রমিক জনতালীগের মো. নূরুল হক (গামছা), বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের জুবায়ের আহমেদ (মোমবাতি) ও ইসলামী আন্দোলনের আবু হানিফা আহম্মদ হোসেন (হাত পাখা)। এখানে দৃশ্যত মহাজোটের একক প্রার্থী নেই। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, মুলত লড়াই হবে নৌকায় ও ধানের শীষে। ১১৫টি ভোটকেন্দ্রে ৪৮০টি বুথ রয়েছে। এর মধ্যে হিসেবের তালিকায় রয়েছে ৭২টি। এর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ২০টি গুরুত্বপূর্ণ ৫২টি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন পুলিশের এসআই এবং এএসআইর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আনসার ভিডিপি অফিস সূত্র জানায় ওই উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৩৮০ জন আনসার সদস্য ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা টহলে থাকবেন। সেনাবাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর থাকবে।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ)-ঃ দুটি উপজেলা, ১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪০ নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৯শ ৭৮। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং ও বৃহত্তর সিলেটে ভাটি বাংলা হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। তবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্য কোন প্রার্থী। এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত করেছে খেলাফত মজলিসের আল্লামা আব্দুল বাছিত আজাদকে। এ আসনটিতেও দৃশ্যত মহাজোট নেই। এখানে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির শংকর পাল। আসনটি মুলত আওয়ামীলীগের ঘাটি হলেও এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। তাদের মতে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটারের কারণে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল। আর মহাজোট না থাকায় সুবিধা নিচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী। এ আসনে অন্যান্যরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আফছার আহমদ রূপক (সিংহ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনমোহন দেবনাথ (গামছা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি’র পরেশ চন্দ্র দাশ (আম) ও ইসলামী আন্দোলনের আবুল জামাল মসউদ হাসান (হাতপাখা)।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ)ঃ  ৩টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪১ নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৩শত ৬৩। এখানে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তবে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্য ৩ প্রার্থী। আওয়ামীলীরে প্রার্থী হয়েছেন একাধিকবার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আবু জাহির। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন একাধিক বার নির্বাচিত পৌর মেয়র ও বিএনপি মনোনীত আলহাজ্ব জি কে গউছ। এ আসনটিতে সর্বশেষ ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী। এবার আওয়ামীলীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে সর্বশেষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। এখানে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির আলহাজ্ব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মুহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল (হাতপাখা) ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিবি) পীযুষ চক্রবর্তী (কাস্তে)।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)ঃ ২টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ২১ ইউনিয়ন নিয়ে চা-শ্রমিক অধ্যুষিত জাতীয় সংসদের ২৪২নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শত ৮৪। এবারের নির্বাচনে এখানে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তবে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়া অন্যদের কোন খবরই নেই ভোটের মাঠে। এ আসনে মহাজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হয়েছেন খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আব্দুল কাদের। আসনটি মূলত আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ইসলামী আন্দোলনের শেখ মোঃ শামসুল আলম (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা সোলায়মান খান রাব্বানী (মোমবাতি) ও জাকের পার্টির আনসারুল হক (গোলাপফুল)।
এদিকে, নির্বাচনে যেকোনো প্রকারের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা ঠেকাতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিরো টলারেন্স নীতির ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সার্বিক বিষয় তদারকি করবে সেনাবাহিনী। এ ছাড়াও সিলেট বিভাগের আলোচিত ওই আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), বাসদের চৌধুরী ফয়ছল শোয়েব (মই) কৃষক শ্রমিক জনতালীগের অ্যাডভোকেট নুরুল হক (গামছা) ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আবু হানিফ (হাতপাখা) ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী আলহাজ হাফেজ জোবায়ের আহমেদ (মোমবাতি)।


     এই বিভাগের আরো খবর