,

হাওরে মাছ সংকটে হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত

সংবাদদাতা ॥ বিশাল বিশাল নদ-নদী ও হাওর-বাওরের কারণে একসময় মৎসভান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলো হবিগঞ্জ। আগে এসব নদ-নদীতে ধরা পড়ত প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ। কিন্তু প্রতিনিয়ত জলাশয় কমে আসার কারণে এখন আর আগের মতো হাওরে মাছ পাওয়া যায় না। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ না পাওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর
জেলায় শুটকির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, কাঁচা মাছের চেয়ে শুটকির দাম কম, পূঁজির অভাব ও যথেষ্ট পরিমাণে সরকারি ঋণ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শুটকি উৎপাদনকারীয়ে লোকসানের পরিমাণ। একের পর এক লোকসানের মুখে তারা দিতে পারছেন না শ্রমিকদের বেতন। ফলে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কটও। সেইসাথে সরকারিভাবে পরিমাণগত ঋণ না পাওয়ার কারণে মহাজনদের কাছ থেকে অধিক সুদের ঋণ এনে শুটকি উৎপাদন করায়
লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ।
বর্ষার শেষে হবিগঞ্জে পুরোদমে শুরু হয় শুঁটকি উৎপাদন। প্রতিবছরই দেশের চাহিদা মিটিয়ে জেলা থেকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। জেলার বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলার অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার শুটকি উৎপাদনে জড়িত রয়েছেন।
এখানকার উৎপাদিত শুঁটকিতে কোন ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় এর স্বাদ ও কদর আলাদা। কিন্তু এ বছর শুটকি উৎপাদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। প্রতিনিয়ত জলাশয় কমে আসার কারণে এখন আর আগের মতো হাওরে মাছ পাওয়া যায় না। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় শুটকির উৎপাদন কমেছে প্রায় অর্ধেক।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর হবিগঞ্জে জেলায় ১০০ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন হয়েছিল। আর এ বছর উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৬৬ মেট্রিকটনে। তবে শুটকি উৎপাদনকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়িয়েছে ঋণ। সরকারিভাবে পরিমাণগত ঋণ ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে মহাজনদের কাছ থেকে অধিক সুদের ঋণ এনে শুটকি উৎপাদন করছেন অনেকে। ফলে প্রতিমাসেই মহানজনকে দিতে হচ্ছে অধিক হারে সুদ। সেই সাথে সরকারি কোন সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে অনেকে আবার এ ব্যবসা করতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ী সুবল চন্দ্র দাস বলেন, “আগের তুলনায় দিন দিন নদ-নদী কমে আসছে। সেই সাথে হাওরে মাছও আগের মতো পাওয়া যায় না। যার ফলে শুঁটকি তৈরি করতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে।”
বানিয়াচং উপজেলা ভাটিপাড়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র দাস বলেন, “মাছ কম পাওয়ায় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় শুঁটকির দাম বাড়েনি।”
তিনি বলেন, “বাপ-দাদার ব্যবসা ছাড়তে পারি না, তাই লাভ লোকসান নিয়েই কোন রকমে আছি। আবার মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে ঋণ আনার কারণে আমাদের লোকসান আরও বেশি বাড়ে।”
একই গ্রামের ববিতা রানী দাস বলেন, “আমরা শুঁটিতে কোন ধরণের ঔষধ ব্যবহার করি না। আমরা যে শুঁটকি উৎপাদন করি তা অন্য এলাকার চেয়ে অনেক ভালো। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে ঋণ দেয়া হলে আমরা আও ভালোভাবে ব্যবসাটা করতে পারতাম। তাছাড়া আমাদের সরকারি উদ্যোগে আরও বেশি করে প্রশিক্ষণ দেয়া হলে ভালো হত।”
তবে এ বছর শুটকি উৎপাদনের জন্য ৭০টি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাদা খায়রুল।
তিনি বলেন, “নিয়মিত মাঠ পরিচর্যা করা হচ্ছে। তাছাড়া, শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আগামী বছর শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জড়িতদের জন্য বিশেষ সু-ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জলাশয় কমে আসার সাথে সাথে হাওরে দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। যার ফলে আগের তুলনায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে।”
এদিকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, সরকার থেকে প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মাঠ পরিচর্যা এবং মাছের অভয়াশ্রম তৈরিতে অণুকুল পরিবেশ তৈরি করলে আবারও শুঁটকি শিল্পে সুদিন ফিরে আসতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।


     এই বিভাগের আরো খবর