,

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ শুটকী ব্রীজ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: ঝুঁকিপূর্ণ হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডের শুটকী নদীর বেইলী ব্রীজটি সাময়ীক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রীজটির লোহার প্লেটগুলোতে গর্ত এবং বিভিন্ন স্থানে ফাটলের দেখা দিলে দুর্ঘটনার স্থানে পরিণত হয়। নাজেহাল ব্রীজটিতে গত সোমবার থেকে। মেরামত চলবে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত।
যদিও জনগনের দাবি, ব্যস্ততম হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়ক’র ব্রীজটিকে সাময়ীক সংস্কার নয়, শুটকী নদীতে নতুন আরোও একটি উন্নত ব্রীজ স্থাপন করার। এদিকে ব্রীজ সংস্কারের অযুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর থেকে বানিয়াচং-আজমীরিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ইটনাসহ জেলার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শুটকী ব্রীজ। ব্রীজটির উপর দিয়ে প্রতিনিয়তই ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ব্রীজটির স্টিলের এবং লোহার প্লেটগুলোতে বাঁকা আকৃতির ধারণ করে গর্তের সৃষ্টিসহ বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময়ে ব্রীজটি দুলতে থাকে।
ব্রীজটির অতিক্রমের প্রবেশদ্বারেই সওজ কর্তৃক সাইবোর্ডে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু হিসেবে উল্লেখ করে সর্বোচ্চ ৫ টন এর অধিক মালামাল নিয়ে যাতায়াতের নিষেধ থাকলেও মানছে না কোন মালবাহী যানবাহন।
স্থানীয়রা জানায়, ব্যস্ততম ব্রীজটিতে প্রায়ই সাময়ীকভাবে মেরামত করা হলেও কিছুদিন পরে আবারও তা ঝুঁকিপূর্ণতার সৃষ্টি হয়। কারণ হাইওয়ে রোডের ভারী মালবাহী ট্রাকগুলো হরহামেশাই চলাচল করে ব্রীজটি দিয়ে। শুধু তাই নয় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসও প্রায়ই চলাচল করে। ব্রীজটি দিয়ে দুটো গাড়ী একই সঙ্গে যাতায়াত করতে পারে না, এতে করে নদী পারাপারের সময়ে উভয় দিক থেকে আস গাড়ীগুলোর মধ্যে যে কোন একদিকের গাড়ীগুলোকে থেমে থাকতে হয়। একদিকের গাড়ি পার শেষ হলে অন্যদিকের গাড়িগুলো চলাচল করতে পারে।
তাছাড়া হবিগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বানিয়াচং-আজমীরিগঞ্জে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তাই ব্রীজটিকে সাময়ীক মেরামত না করে নতুন ব্রীজ স্থাপন করতে দ্রæত প্রদক্ষেপ নেয়ার দাবি ভূক্তভোগিদের।
এদিকে, যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীদের অসুবিধার সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বানিয়াচংগামী পরিবহন খাতে সিএনজি, অটোরিস্কা, ছোট-ছোট মিনিবাস, মেক্সিসহ জিপগাড়ীগুলো। হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচং এর দুরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। পূর্বে সিএনজিতে করে হবিগঞ্জ বানিয়াচং স্ট্যেন্ড থেকে বানিয়াচং নতুন বাজার অথবা বড় বাজারের ভাড়া জন প্রতি ৪০ টাকার স্থানে বর্তমানে শুটকী ব্রীজ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৪ কিলোমিটার এর ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা করে। যাত্রীরা শুটকী ব্রীজ পার হয়ে অপর এক সিএনজিতে করে বানিয়াচং নতুন বাজার অথবা বড় বাজার যেখানে ৪ কিলোমিটার দুরত্বের স্থানে পৌঁছাতে গুণতে হচ্ছে ২০ টাকা করে। তেমনি ছোট-ছোট মিনিবাস এবং মেক্সিগুলো হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচং এর পৌছাতে জনপ্রতি ভাড়া ২৫ টাকার স্থানে, শুটকী ব্রীজ পর্যন্ত ২০ টাকা এবং শুটকী ব্রীজ পার হয়ে ১৫ টাকা নিচ্ছে।
ব্রীজ সংস্কারের কারণে পারাপার হতে যাত্রীদের এমনিতেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তার উপরে বাড়তি ভাড়া কেন গুণতে হবে এমন প্রশ্নে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি ড্রাইভার জানায়, পূর্বে তাঁদের স্ট্যেন্ড ছিল দুটি এখন স্ট্যেন্ড ৪টি। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে চারজন ম্যানেজার। পূর্বে শুধুমাত্র হবিগঞ্জ বানিয়াচং (খোয়াই নদী তীরবর্তী) এবং নতুন বাজার/বড় বাজার বানিয়াচং স্ট্যেন্ড ছিল, এখন শুটকী ব্রীজের এপার-ওপারে দুটি নতুন স্ট্যেন্ড সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক স্ট্যেন্ড থেকে গাড়ি ছেড়ে আসার সময়ে ১০ টাকা হারে চাঁদা জমা দিতে হয়। আবার অপর স্ট্যেন্ড থেকে ফেরৎ আসতে ১০ টাকা জমা দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন- বর্তমানে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডে সিএনজি সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। যাত্রীবাহী এসব প্রত্যেকটি যানচলাচলের সময়েই সকল ড্রাইভারকে একই হারে চাঁদা জমা দিতে হয়। যদি স্ট্যেন্ড এর নিয়ম মেনে চলা না হয় তাহলে আমরা নির্দিষ্টভাবে গাড়ি চালাতে পারছি না। যখন ব্রীজটি ঠিক হয়ে যাবে তখন পূর্বের হারেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হবে।
আজমীরিগঞ্জ উপজেলার পরিষদের এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে বলেন, আমি হবিগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বানিয়াচং হয়ে আজমীরিগঞ্জ যাতায়াত করে থাকি।
ব্রীজটির সংস্কার হচ্ছে এতে একদিকে আমাদের জন্য কল্যাণকর অন্যদিকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতেও হচ্ছে। কারণ পূর্বে হবিগঞ্জ হতে এক গাড়িতেই বানিয়াচং পৌছাতে পারতাম, এখন নদীপার হয়ে অন্য আরেকটি গাড়ি ধরতে হচ্ছে।
তিনি বলেন- এতে আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে অফিস করতে পারছি না। তাছাড়া যাত্রাপথে বাড়তি ভাড়াগুনতে গিয়ে মাসিক বেতনের হিসেবেও সমস্যায় পড়তে হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন- ‘শুটঁকি নদীর উপর ব্রীজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানায়নি।


     এই বিভাগের আরো খবর