,

বানিয়াচংয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে- জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেছেন, বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। রয়েছে কর্মক্ষম জনগণ। তাদেরকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে মানবসম্পদে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তবে সকল সম্ভাবনার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধাণ না করলে, বাইরে থেকে এসে কেউ সহজেই সমাধান করতে পারে না। তাই স্থানীয়ভাবে সমাধানের নজর দেয়া প্রয়োজন। হবিগঞ্জের বিশাল সম্ভাবনাকে নিয়ে বিজ্ঞান মেলায় প্রকল্প হলে তা থেকে হবিগঞ্জবাসী উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে বিজ্ঞান মেলার সমাপনী ও পুুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ থেকে দেশের ৬০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ হয়। জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হয় ২০০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এখানে সৃষ্টি হচ্ছে শিল্পায়ন ও কর্মংস্থান। কিন্তু তা পরিকল্পিতভাবে না হওয়ায় পরিবেশ এবং কৃষির ক্ষতি হচ্ছে। তাই কিভাবে পরিবেশবান্ধব এবং দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে সেইদিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট তৈরী করতে পারে। হবিগঞ্জের খোয়াই নদী সমস্যা, হাওরে ফসলহানী এবং শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়েও চিন্তা করা উচিত শিক্ষার্থীদেরকে। প্রয়োজন রয়েছে বর্ধিত জনসংখ্যার পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে প্রকৃতির প্রতি যদি আমরা বিরূপ আচরণ করি, তাহলে প্রকৃতি চরম প্রতিশোধ নেয়। এ থেকে পরবর্তী প্রজন্ম রেহাই পাবে না। তিনি আরো বলেন, হবিগঞ্জের কৃষি এবং মৎস্য সম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এগুলো এখানকার মূল সম্পদ। হাওর ও নদীর প্রাকৃতিক মাছ সংরক্ষণ করতে হবে। তার জন্য বানিয়াচংয়ে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। চুনারুঘাটে যে ইকনোমিক জোন হবে, সেখানেও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জেলায় যে বিপুল পরিমাণ সব্জি উৎপাদন হয়, তা প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে। বাল্লা স্থলবন্দরের কাজ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে তাতে অনেক এগিয়ে যাবে হবিগঞ্জবাসী। আমরা সকল জায়গায় জয় চাই। আমরা মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাই। “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মূল শক্তি” স্লোগানকে সামনে রেখে হবিগঞ্জে ৩ ব্যাপী ৪০ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, বিজ্ঞান মেলা সমাপ্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মর্জিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ সফিউল আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব নার্গিস আক্তার ডলি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনিল কৃষ্ণ মজুমদার, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান আলফাজ উদ্দিন এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. শাহ ফখরুজ্জামান প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসনা শারমিন মিথি। পরে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেন। মেলায় বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রদর্শনের বাহিরে উপস্থিত বক্তৃতা ও অলিম্পিয়াডের আয়োজন ছিল। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীরা হলেন জুনিয়র গ্রুপে প্রকল্প প্রদর্শনীতে প্রথম আজমিরীগঞ্জ এবিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। তাদের প্রজেক্ট ছিল নিরাপদ পৃথিবী। ডিজিটাল বাড়ি প্রজেক্টের জন্য ২য় স্থান অর্জন করে মাধবপুরের আন্দিউড়া উম্মেতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, সেচ প্রকল্প প্রজেক্টের জন্য ২য় হয় লাখাইর রাঢ়িশাল উচ্চ বিদ্যালয়। সিনিয়র গ্রুপে আলোর মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার প্রজেক্ট নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ প্রথম, কন্ট্রোলিং সার্ভিসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মটর নিয়ন্ত্রণ, পোড়া ইটের বিকল্প ইট প্রস্তুকরণ প্রজেক্টের জন্য শাহজালাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ২য়, ব্যাংক সিকিউরিটি সিস্টেম, ভেকুয়ামত কিনার ও লাইব্রেরী সৃষ্টির জন্য ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ৩য় স্থান অর্জন করে। বিশেষ গ্রুপে স্পাই ভেনিক্যাল প্রজেক্ট নিয়ে ১ম হয় জি ইনভেন্টর সাইন্স ক্লাব এবং ইন্ট্রোডাকশন উইথ সম্পার্ট টেকনোলজি প্রজেক্টের জন্য ২য় স্থান অর্জন করে জেএমএস ইনভেনশন ক্লাব। উপস্থিত বক্তৃতা জুনিয়র গ্রুপে ১ম হয় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফাতিম ইশরাক, ২য় স্থান অর্জন করে চুনারুঘাটের দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জয়শ্রী বিশ্বাস জুই এবং ৩য় স্থান অর্জন করে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামিয়া একাডেমী এন্ড হাইস্কুলের শাকিবুর রহমান। সিনিয়র গ্রুপে ১ম স্থান অর্জন করে সরকারি বৃন্দাবন কলেজের মোঃ আব্দুল মুঈন খান, ২য় স্থান অর্জন করে একই কলেজের শেখ মহসিন আহমেদ এবং ৩য় স্থান অর্জন করে চুনারুঘাট সরকারি কলেজের ইসরাত জাহান। বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার জুনিয়র গ্রুপে ১ম স্থান অর্জন করে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামিয়া একাডেমি এন্ড হাইস্কুলের ইশতিয়ার আহমেদ আনান, ৩য় স্থান অর্জন করে বাহুবলের মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের রনি দত্ত, ৩য় স্থান অর্জন করে ৩ জন। এরা হলেন মাধবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নিলয় চক্রবর্তী, বাহুবলের মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের জেরিন আলম প্রীতি এবং সানশাই প্রি ক্যাডেট এন্ড হাইস্কুলের ফাহিম মুনতাসির। সিনিয়র গ্রুপে ১ম স্থান অর্জন করে শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের মোস্তফা গালিব শাকিব, ২য় স্থান অর্জন করে সরকারি বৃন্দাবন কলেজের উল্লাস দে ঋত্বিক এবং ৩য় স্থান অর্জন করে একই কলেজের মোঃ আব্দুল মুঈন খান।


     এই বিভাগের আরো খবর