,

মায়ারুন আক্তার

নবীগঞ্জের মায়ারুনের পক্ষে ইউপি সদস্য পদ স্থিতাবস্থা’র আদেশ সুপ্রিমকোর্টের

মোঃ সুমন আলী খাঁন ॥ নবীগঞ্জে দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের পর সরকারিভাবে ইউ/পি সদস্য হিসেবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহন করেছিলেন মায়ারুন আক্তার। এদিকে শপত গ্রহনের পরপরই আনন্দ উল্লাসে মায়ারুনের শমর্থকরা মিছিল বের করলে দেবপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এড. মোঃ জাবিদ আলী তাতে বাধা প্রদান করেন এবং সেই সাথে উপস্থিত সবাইকে শান্তনা দিয়ে মায়ারুন আক্তারকে তার দায়িত্ব বুঝে জনগণের কাজ ঠিকঠাক মতো করার পরামর্শ দেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে উপস্থিত সকলেই ইউপি চেয়ারম্যানের প্রশংসা করে তার পরামর্শ মেনে নেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মায়ারুন আক্তারকে শপথ গ্রহণের যে আদেশ প্রদান করেন তার
বিরুদ্ধে মোছাঃ হোসনা বেগম বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার জজে আপিল দায়ের করেন। তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান গত রোববার মোছাঃ মায়ারুন আক্তার এর পক্ষে ইউপি সদস্য পদ স্থিতাবস্থা’র আদেশ প্রদান করেন। মোছাঃ মায়ারুন আক্তারের পক্ষে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে মামলা পরিচালনা করেন এড. ফয়েজ আহমদ। অপরদিকে হবিগঞ্জের নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ও নির্বাচন আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন এড. মোঃ জসিম উদ্দিন (৩) ও হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড. মোঃ আব্দুল হান্নান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৮মে দেবপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে মায়ারুন আক্তার এবং হোছনা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন চলাকালে ওই ৩টি ওয়ার্ডে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার ৮নং ওয়ার্ডের  কেন্দ্র দেবপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র দিনারপুর আইনগাঁও মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট গণনা হলেও কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করেননি। কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় মায়ারুনের এজেন্টকে। কিন্তু এজেন্ট থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রথমে মায়ারুন আক্তার বিজয়ী হিসেবে তার পে আনন্দ মিছিলও করা হয়। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ রিটার্নিং অফিসার হোসনা বেগমকে বিজয়ী দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন। এই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে মায়ারুন আক্তার বাদী হয়ে ২০১৬ সনের ৩০ জুন হবিগঞ্জ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল জজ আদালত ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩/২০১৬। মামলার বিবরণে জানা গেছে, বিজ্ঞ আদালত গত বছরের ১৬ মে ট্রাইব্যুনালের তত্বাবধানে ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ভোট পুনঃগণনা করা হয়। এতে প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী ৩টি কেন্দ্রে মায়ারুন আক্তার ১ হাজার ৬৬৮ ভোট এবং হোসনা বেগম ১ হাজার ৬৪৫ ভোট পান। এতে ২৩ ভোটের ব্যবধানে মায়ারুন আক্তারকে দেবপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসন-৩ (৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড) এ নির্বাচিত বলে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক তানভীর আহমেদ মামলার রায় প্রদান করেন। পরে গত বছর মোছাঃ হোছনা বেগম ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। নির্বাচনী আপীল মামলা নং ১/১৭। ওই মামলায় দীর্ঘ শুনানী শেষে উভয় পক্ষের আইনজীবির সামনে পূনরায় ভোট গণনা করা হয়। প্রতিটি ভোট আলাদা আলাদা করে দেখা হয় এবং চুল ছেড়া বিশ্লেষন করে মায়ারুন আক্তার তাল গাছ প্রতিকে ৫ ভোট বেশি পান। পরে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল হবিগঞ্জের বিজ্ঞ বিচারক ও যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত সাইফুর রহমান সিদ্দিক ও নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া মায়ারুন আক্তারকে বিজয়ী ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, অত্র নির্বাচনী আপীল মোকদ্দমাটি প্রার্থী রেসপনডেন্ট পরে বিরুদ্ধে দোতরফা বিনা খরচায় নামঞ্জুর হয়। বিজ্ঞ নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ১৬/০৫/১৭ইং তারিখে তর্কিত আদেশ এতদসঙ্গে বহাল ও বলবৎ করা হল। অত্র রায়ের অনুলিপি সহ নিম্ন আদালতের নির্বাচনী ৩/১৬ নং মোকদ্দমার সাথে নথী এবং সংশ্লিষ্ট বস্তাবন্ধ ব্যালট পেপার সমূহ সত্বর ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আদেশের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা, জেলা নির্বাচন অফিসার, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্ণিং অফিসার, ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ বরাবরে প্রেরণের জন্য আদেশে বলা হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর