,

ভয়াল সেই সব ঘূর্ণিঝড়

সময় ডেস্ক :: আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে ২০০৭ সাল থেকে। এর আগে একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের নামকরণ হতো না। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডরের পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এবং ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে নিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিডরকে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন উইন্ডস (সিডর) নাম দেয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ছিল ১৯৭০ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়। এরপর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে সিডর। ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর সবোর্চ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়। সেসময় ১০ থেকে ৩৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল এবং অসংখ্য গবাদি পশু এবং ঘরবাড়ি ডুবে যায়।
অনেকের ধারণা, ওই ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড় উরিরচরের ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত। যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। এটি অল্প জায়গায় হয়েছে ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল না।
১৯৯১ সালে এই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। ১৯৯১ সালের ২৯ ও ৩০শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেয়া হয় শতাব্দীর প্রচন্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে। যাতে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় বিভিন্ন তথ্যে উঠে আসে। ২২৪ কিলোমিটার বেগে আসা এই ঘূর্ণিঝড়ে তেলের ট্যাংকার পর্যন্ত ওপরে উঠে গিয়েছিল। স্থায়ী ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। সিডরে রেডক্রসের হিসেবে ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে ৬ ছয় হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। ২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলার গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার।
১৮৭৬ সালের ১লা নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়টি অনেকের কাছে বাকেরগঞ্জের প্রবল ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত। তাতে প্রাণ হারিয়েছিল ২ লাখ মানুষ, যখন ১০ থেকে ৪৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। ১৯৬০ সালের ৩১শে অক্টোবরের প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। ১৯৬০ সালের ৩১শে অক্টোবর চট্টগ্রামে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে ১লা অক্টোবর ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস এর পূর্বাভাস দেয়া হলেও পরে তা বার্মার উপকূলে আঘাত হানে। ২০১৩ সালের ১৬ই মে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে। ২০১৫ সালের ৩০শে জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড় কোমেন আঘাত হানে। ২০১৬ সালের ২১শে মে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এবং ২০১৭ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে।


     এই বিভাগের আরো খবর