,

অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে বাংলাদেশে বছরে আট হাজার লোকের মৃত্যু

সময় ডেস্ক ॥ অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে দেশে প্রতি বছর কমপক্ষে আট হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ।  ২২শে  মে জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘রিপোর্ট অন গ্লোবাল ট্রান্স ফ্যাট এলিমিনেশন ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্যের ওপর ট্রান্স ফ্যাটের ঝুঁকি মোকাবিলায় খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে (বিএফএসএ) যতদ্রুত সম্ভব কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ডাব্লিউএইচও’র রিপোর্টে দৈনন্দিন খাবারগুলো থেকে শিল্পজাত ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলের ওপর জোর দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। কোনো খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ ডাব্লিউএইচও নির্ধারিত মোট ফ্যাটের ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বিএসটিআই ও বিএফএসএ’কে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান অধ্যাপক সোহেল। ট্রান্স ফ্যাট, বা ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ), প্রাকৃতিক বা শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রাকৃতিক ট্রান্স-ফ্যাট (আরটিএফএ) দুধ, মাখন, ঘি, গরুর মাংস, ছাগলের মাংসের মতো প্রাণীজ উৎস থেকে আসে এবং একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত তেমন একটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট (আইটিএফএ) উদ্ভিজ তেলের হাইড্রোজেনেশনের সময় গঠিত হয়। এই আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেল (পিএইচও) শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস। ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেটা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে উচ্চ ট্রান্স ফ্যাটের গ্রহণের কারণে  প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করছে না। তবে সম্প্রতি তারা ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে ভারতের মতো ধাপে ধাপে কাজ শুরু করেছে। ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ভোজ্য তেল ও এ জাতীয় পণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের সীমা ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ করছে। আমাদের খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের ক্রমাগত ও অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতির ফলে হাজারো প্রাণ হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক। তিনি বলেন, এই ঝুঁকি মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং বিএসটিআই ও বিএফএসএ’কে যতোদ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। খাবারে  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মোট ফ্যাটের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাট সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে, দিন দিন মৃত্যু ঝুঁকি আরো বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। শিল্পজাত ট্রান্স ফ্যাটের পরিবর্তে সহজলভ্য বিকল্প রয়েছে, যা খাবারে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া সেগুলো স্বাস্থ্যকরও। বিশ্বের ছয়টি দেশে ২০১৮ সালে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নিষিদ্ধ করেছে এবং আরো ২৫টি দেশ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ) একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পরবর্তী দুই বছরে কার্যকর হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর