,

কৃষকের কাছ থেকে আরও আড়াই লাখ টন ধান কিনছে সরকার

সময় ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পড়তি দাম ওঠাতে কৃষকদের কাছ থেকে আরও আড়াই লাখ টন ধান কিনছে সরকার। আগের ঘোষণা অনুযায়ী দেড় লাখ টনের সঙ্গে এ আড়াই লাখ টন মিলিয়ে সরকার এবার চার লাখ টন ধান কিনছে। এতে কৃষক লাভবান না হলে ধান কেনার পরিমাণ আরও বাড়াবে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদসহ কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষিবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আরও আড়াই লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনব। এতেও বাজার না উঠলে ধান কেনার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। কৃষক যেন নায্যমূল্য পান। তিনি বলেন, এবার বোরোর ফলন অনেক উদ্বৃত্ত হয়েছে। দেশের খাদ্য গুদামগুলোর ধারণ ক্ষমতা ১৯ লাখ ৬০ হাজার টন। আর এখন গুদামে আছে ১৪ লাখ টন। খাদ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ২৯ হাজার টন বোরো ধান কেনা হয়েছে। এক লাখ ২১ হাজার টন ধান কেনা এখনও বাকি আছে। আরও আড়াই লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এবার সব মিলিয়ে মোট চার লাখ টন বোরো ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনবে সরকার। ধান কেনায় সরকারের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এবার অরেক সাহায্য করছে। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বসেছি। তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কৃষিতে প্রনোদনা বাড়ানো ও সারের দাম আরও কমানোর চিন্তা করতে হবে। কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকের মজুরি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭শ’ টাকায় ওঠেছে। এটা অবশ্য দেশ যে এগিয়েছে, তার লক্ষণ প্রকাশ করে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৪ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। এরপরও যদি ধান দাম না বাড়ে, তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকের কাছে থেকে সরাসরি আরও ধান কিনবে সরকার। তিনি বলেন, কৃষির অবদান কমলেও সার্বিক অর্থনীতিতে এখনও কৃষির গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতি ও মঙ্গার দেশ। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। আমন ও বোরোতে বেশি ফলন হওয়ায় ধানের দাম কমেছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। গুদাম না থাকায় দেড় লাখ টন ধান কিনে বাজারে প্রভাব ফেলা যায়নি।
মন্ত্রী বলেন, চালকল মালিকদের কাছে সরকারের বকেয়া আছে ৩ শ’ কোটি টাকা। ফলে তাদের মাধ্যমে মিল গেইটে চাল কেনা সম্ভব নয়। তাদের টাকা দিলে তারা মিটারের নামে আবার সমস্যা করবে। তাই সরকার ৩ হাজার মিটার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার চাল রফতানির বিষয়ে ভাবছে। বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে তারা চাল নিতে সম্মত হয়েছে।
সরকার এবছর বোরো মৌসুমে চালকল মালিকদের কাছ থেকে সরকার ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে দেড় লাখ টন বোরো ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ এপ্রিল থেকে প্রতিকেজি ধান ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা দরে ধান-চাল কেনার কথা। কিন্তু সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হতে দেরির কারণে ধানের বাজারে ধস নামে। কৃষক উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামও পায়নি। পানি দামে ধান বিক্রি করেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুব্ধ কৃষক ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের বাঁচাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মন্ত্রণালয়কে বেশি ধান কেনার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দেশের কৃষক সংগঠনগুলো কৃষকের পক্ষে মানববন্ধন করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবী জানায়। খাদ্য মন্ত্রনালয় চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর