,

দুই পরীক্ষায় ‘এ’ পেয়েছেন নুসরাত ॥ সহপাঠীদের কান্না

সময় ডেস্ক ॥ ফেনীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। গতকাল বুধবারের প্রকাশিত মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের আলিম পরীক্ষার ফলাফলে ‘কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস’ পরীক্ষায় তিনি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। ওই দুই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পর পরবর্তী পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান নুসরাত। গতকাল বুধবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নুসরাতের সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনরা শোকে বিহবল হয়ে পড়ে। পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখও ছিল অশ্রুসজ্জল। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন আরো বলেন, নুসরাত মেধাবী ছাত্রী ছিল। দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েই ভাল রেজাল্ট করেছে। সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে সে আরো ভালো ফল করতো। ফলাফল জানতে আসা নুসরাতের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিশাত সুলতানা, সহপাঠী তামান্না, নাসরিন সুলতানা জানান, আমাদের সঙ্গে আজ নুসরাতেরও পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমাদের মতো তারও আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নুসরাত আমাদের মাঝে নেই। এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের পরিবারে আজ আনন্দ-উৎসবে ভরে যেত। কিন্তু আমার মেয়ে সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে’। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমার বোন খুব মেধাবী ছিল। ২৭ মার্চের শ্লীলতাহানির ঘটনার পর আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। আমি নিজে তাকে পরীক্ষা হলে নিয়ে যেতাম। বুধবার সকাল থেকে পরিবারে সবাই খুব হতাশ। নুসরাতের বেশ কয়েকজন সহপাঠী ফোন করে তাদের রেজাল্টের খবর জানায়। প্রসঙ্গত, গত ৬ই এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে মাদরাসার ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার অনুসারীরা। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল নিলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওইদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ১০ই এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।


     এই বিভাগের আরো খবর