,

হবিগঞ্জে আজ পতাকা উৎসব ৯টি উপজেলার ১৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে উৎসবের উদ্বোধন করবেন ডিসি মাহমুদুল কবীর মুরাদ

জাতীয় পতাকার সঠিক মাপ নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষার্থীদের মনে পতাকার
সম্মানবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

মতিউর রহমান মুন্না ॥ জাতীয় পতাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিধিমালা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পতাকার রঙ, মাপ ইত্যাদি নিয়ে রয়েছে নানা গরমিল। এসব ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে হবিগঞ্জে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জাতীয় পতাকার সঠিক মাপ নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষার্থীদের মনে পতাকার সম্মানবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে আজ ২ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জে উদযাপিত হবে পতাকা উৎসব। জেলার ৯টি উপজেলার ১ হাজার ৫শ ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সকল শ্রেণী পেশার লোকজন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। তিনি বলেন, এখনও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়সারাভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর সঠিক মাপ ও যথাযথ সম্মানের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারণা নেই। অথচ আমাদের একটি পতাকা বিধি আছে। তা অনেক সময়ই মানা হয় না। সঠিকভাবে পতাকা ব্যবহার করা হয় না। সঠিক মর্যাদা দেয়া হয় না।
তিনি আরো বলেন, আমরা মহান জাতীয় পতাকার গুরুত্ব ও সম্মানবোধের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মনে স্থান করে দিতে চাই। আমরা এ উৎসবের মাধ্যমে জেলার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। যেখানে এ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসক আজ ২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই পতাকা উৎসবের উদ্বোধন করবেন। একই সময়ে সকল উপজেলা সদরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হবে। জেলার ১৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ ফুট বাই ৩ ফুট সাইজের এই জাতীয় পতাকা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্ধারিত বেদীতে ১০ ফুট এসএস পাইপে উত্তোলন করা হবে এই পতাকা। জেলা প্রশাসনের এই অনন্য উদ্যোগের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়া এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বমহল থেকে এর প্রশংসা করা হয়।
হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক ইউনিট কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি চমৎকার উদ্যোগ। অনেকেই জানেনা কিভাবে পতাকা উত্তোলন করতে হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সাইজ ও রংয়ের পতাকা উত্তোলন করে। এতে করে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা হচ্ছে।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘জাতীয় পতাকা আমাদের অহংকার। কিন্তু এর যথাযথ মূল্যায়ন যখন হয়না তখন আমরা দুঃখ পাই। নতুন প্রজন্মকে জাতীয় পতাকার মর্যাদা বোঝাতে এবং অনুভব করাতে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটি জেলা প্রশাসনের একটি ভাল ও সৃজনশীল উদ্যোগ। বছরের প্রথম দিনে আমরা বই উৎসব করে থাকি। এবার যুক্ত হয়েছে পতাকা উৎসব। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, সকল প্রতিষ্ঠানেই যাতে একই রং ও আকারের পতাকা উত্তোলন করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা করেনি। এ ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে জেলা প্রশাসনের একটি ভাল উদ্যোগ। এই পতাকার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা। আর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই রংয়ের ও সাইজের পতাকা উত্তোলন করলে দেখতেও ভাল লাগবে। এই পতাকা দেখলেই গর্বে আমাদের বুকটা ভরে যায়।’
বিশিষ্ট নাট্যকার রুমা মোদক বলেন, ‘এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। এর মাধমে জাতীয় পতাকাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যতেও যাতে এই পতাকা উৎসব অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’


     এই বিভাগের আরো খবর