,

হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের অনিয়ম সন্ধ্যা নামলেই ভাড়া দেড়গুন

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ রাস্তা বন্ধ করে স্ট্যান্ড স্থাপন, সন্ধ্যা নামলেই ভাড়া দেড়গুণ, যাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার, প্রতিনিয়ত ট্রাফিক আইন অমান্য। এ সব অনিয়মের মধ্য দিয়েই হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে সিএনজি অটোরিক্সা। প্রভাবশালী নেতা ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে চলছে এই অনিয়ম। আর এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলছেন না কেউ। অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ অর্ধশতাধিক রোডসহ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কেও চলছে সিএনজি অটোরিক্সা। অধিকাংশ এলাকায়ই সাধারণ মানুষ এবং যান চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে স্ট্যান্ড। প্রায় প্রতিটি রোডেই সন্ধ্যা নামলে ভাড়া হয়ে যায় দেড়গুন। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অনিহা প্রকাশ অথবা প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে করা হয় চরম দুর্ব্যবহার। জানা গেছে, এসকল অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় সিএনজি অটোরিক্সা কল্যাণ সমিতি নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশকেও দেয়া হচ্ছে নিয়মিত মাসোয়ারা। হবিগঞ্জ-বানিয়াচং, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোডে খোয়াই নদীর তীরে রাস্তা বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। যে কারণে প্রতিনিয়ত লেগে থাকে যানজট। এ ব্যাপারে নিরব ভূমিকায় রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডে সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। পরে রাস্তায় খানাখন্দের দোহাই দিয়ে বর্ধিত করা হয় ৪০ টাকায়। কিন্তু রাস্তাটি ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও তা আগের ভাড়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। বরং সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। এর প্রতিবাদ করলে শিকার হতে হয় চরম দুর্ব্যবহারের। এমনকি যাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও পরোয়া করে না চালকরা। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনার শিকার এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রতিদিনই তিনি হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডে চলাচল করেন। একদিন সন্ধ্যায় বানিয়াচং থেকে হবিগঞ্জ আসলে তার কাছে ভাড়া চাওয়া হয় ৬০ টাকা। ২০ টাকা অতিরিক্ত কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে চালক তার উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসময় তিনি ৪০ টাকা দিয়ে চলে যেতে চাইলে এক চালক তার শাড়ির আচল টেনে ধরে। পরে তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা ৬০ টাকা দিয়েই স্ট্যান্ড ছাড়তে হয়। শুধু এই স্বাস্থ্য কর্মীই নন প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য যাত্রী এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিক্সা চালক বলেন, হবিগঞ্জ জেলার শতাধিক রোডে দশ হাজারেরও বেশি সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করে। যার অধিকাংশই কাগজপত্রবিহীন এবং চালকদেরও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। যে কারণে হবিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশকে মশোহারা দিতে হয়। কাগজপত্র থাকলে ৩০০ এবং কাগজপত্র না থাকলে প্রতি মাসে দিতে হয় সিএনজি প্রতি ৫০০ টাকা। বানিয়াচং সিএনজি অটোরিক্সা সমিতির সভাপতি শাহেদ মিয়া বলেন, যে কোনো সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। চালকরা কেন এসব করছে বিষয়টি আমার জানা নেই। সিএনজি চালকদের কাছ থেকে মাশোহারা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে হবিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুণ বিকাশ বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিদিন পুলিশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাসে অন্তত ১ হাজার ৫শ’ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর