,

নবীগঞ্জে প্রাণের উচ্ছাসে পহেলা বৈশাখ পালিত

মোঃ জসিম তালুকদার ॥ ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ পুরনো বছরের সব গ্লানি, অপ্রাপ্তি, বেদনা মুছে দিয়ে জীবনে নতুন সম্ভাবনার শিখা জ্বালাতে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ। একটি নতুন দিন, একটি নতুন বছরের শুভ সূচনা। আর বছরের সুচনা লগ্নেই বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন নবীগঞ্জ বাসী। বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও গর্বিত ঐতিহ্যের রূপময় ছটায় উদ্ভাসিত সর্বজনীন উৎসবের দিন ছিল গেল মঙ্গলবার। নব প্রভাতে জাতির কায়মনে প্রার্থনা, যা কিছু ক্লেদ, গ্লানি, যা কিছু জীর্ণ-শীর্ণ-বিদীর্ণ, যা কিছু পুরনো জরাগ্রস্থ- সব বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাক। আনন্দ-উৎসব আর উচ্ছ্বাস-উষ্ণতায় পুরো জাতি এই দিনটিতে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে। সবার হৃদয়ে রবীন্দ্র-নজরুলের সুর জেগে উঠে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…’ কিংবা ‘…ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশেখী ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। এবারও পহেলা বৈশাখে নাড়া দিয়ে গেছে নবীগঞ্জবাসীদের। তাই নানা আয়োজনে নবীগঞ্জে বরণ করা হয়েছে বঙ্গাব্দ ১৪২২ কে। বরাবরের মতো গত মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতেই নবীগঞ্জে শুরু হয় নতুনকে বরণ করে নেয়ার নানান আয়োজন। সকালে জাহাঙ্গীর রানা গীতি পরিষদ, রাজাবাদ ও পিরোজপুর আনন্দ ও শিখন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আনন্দ নিকেতনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শহরে বের করে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালী। র‌্যালীতে বাদ্যযন্ত্রসহ শুভা পায় ফ্যাষ্টুন, নানা রঙের ব্যানার। দেখা যায় একে অপরের গায়ে রং লাগানোর মহোৎসব। পরে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্টিত হয় নানা অনুষ্টান। সব বয়সের মানুষ এসে জড়ো হয় হিরা মিয়া গার্লস স্কুলের মাঠ ও নবীগঞ্জ শিশু শিক্ষা সাংস্কৃতিক একাডেমীর মাঠ এবং জে.কে স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জে পালিত হয়েছে দিনব্যাপি বৈশাখী উৎসব। বাংলা বর্ষের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে উপজেলা প্রশাসন ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দ নিকেতন আয়োজন করে বৈশাখী অনুষ্টানের। অনুষ্টানের মধ্যে ছিল মঙ্গল নৃত্য, লোকগীতি, বাউল, ভাটিয়ালি, জারি-সারি, লালন গানের আসর। এবার বৈশাখীতে অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষন ছিল বৈশাখী পিঠা। পিঠার দোকান গুলোতে ক্রেতাদের ছিল উপছেপড়া ভীড়। সাদা রঙের শাড়ি পরে মাথায় বেলি ফুলের কোপায় রমনীদের আনন্দটা অনেকটাই মণে করে দিয়েছিল যে মঙ্গলবার পহেলা বৈশাখ। শুধু তাই নয় ছেলেরা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে মণে করিয়ে দিলো মঙ্গলবার বাঙ্গালীদের মিলন মেলার দিন। শুধু ছেলে মেয়ে নয় শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই মগ্ন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। বন্ধু-বান্ধব একসাথে দলবেধে আসে অনুষ্ঠানে। নববর্ষের আনন্দে মেতে উঠে সব বয়সের নারী পুরুষ। প্রাণের বন্ধনে সবাই একত্র করতে প্রতিটি অনুষ্টানকে নজর কাড়া রুপ দেয়া হয়। তাছাড়া শহর ও শহরের বাইরে আয়োজন করা হয় পান্তা-ইলিশের। তবে ইলিশের দাম বেশি থাকায় এর স্বাধ অনেকেই নিতে পারেননি। তবুও যেন কোন অংশে কমতি ছিলনা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে। নবীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দ নিকেতনে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও নবীগঞ্জ শিশু শিক্ষা সাংস্কৃতিক একাডেমী প্রাঙ্গনে দিন ব্যাপী বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করে। তাদের অনুষ্ঠান মালায় ছিল আলোচনা সভা, সংগীত, নৃত্য, কবিতা, আবৃত্তি নাটিকাসহ র‌্যাফেল ড্র ও পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পরে উক্ত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে প্রধান আকর্ষন হিসাবে গান পরিবেশন করেন সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ। দিনব্যাপি চলে তাদের অনুষ্ঠান। অনুষ্টানগুলো পরিদর্শন করেন, হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, প্যানেল মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, সাংগঠনিক মোস্তাক আহমদ মিলু, প্রেসক্লাব সভাপতি এটিএম সালাম, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু দাশ রানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ বেলাল, সাংবাদিক সলিল বরন দাশ, তছনু চৌধুরী, মতিউর রহমান মুন্না প্রমুখ। অপর দিকে সন্ধ্যায় পরিষদের কার্যালয়ের সামনে জাহাঙ্গীর রানা গীতি পরিষদ আয়োজন করে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। পরিষদের সভাপতি বিপ্লব দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শাহ আবুল খয়ের, প্রেসক্লাব সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর এটিএম সালাম এবং গোপেশ দাশ। অনুষ্টানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সোহেল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওস্তাদ জিএম সোনা মিয়া, সামছ খেলা প্রমূখ। সারা দিন উৎসবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও ওইদিন নবীগঞ্জের ঘরে ঘরে ছিল নববর্ষের নানা আয়োজন। তার সঙ্গে পান্তা-ইলিশের স্বাদ উৎসবে যোগ করে ভিন্নমাত্রা। এ দিকে নববর্ষ উদযাপন নির্বিঘœ করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। নবীগঞ্জ শহরের বাইরে আউশকান্দি র.প স্কুল এন্ড কলেজ ও পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ পালিত হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর