,

লন্ডন প্রবাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আত্মসাতের চেষ্টায় গাজীউর রহমানের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অংশীদারকে ঠকানো জিএস ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অংশীদার গাজিউর রহমান-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করার পর অংশীদারকে ধার্য্যকৃত টাকা প্রদান না করে উল্টো সালিশ বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন তিনি। এই ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা হলে জনরোষের ভয়ে নি¤œ আদালত থেকে জামিন না নিয়ে উচ্চ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেন গাজী। এনিয়ে আদালতপাড়ায় শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। অভিযোগে জানা যায়, ২০০৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চুনারুঘাট উপজেলার গাজিউর রহমান এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার লন্ডন প্রবাসী আবুল কালাম ও সামছুল ইসলাম রাজু মিলে অংশীদারীর ভিত্তিতে জিএস ব্রাদার্স সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন। চুক্তি অনুযায়ী এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৫৫ শতাংশ লভ্যাংশ পাওয়ার কথা গাজিউর রহমান গংদের এবং ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ পাওয়ার কথা আবুল কালাম ও রাজুর। ব্যবসার শুরুতেই অংশীদারদের সরলতার সুযোগ নিয়ে গাজীউর রহমান গং মৌলভীবাজারের প্রবাসী আবুল কালাম ও রাজুর নাম বাদ দিয়ে ফিলিং স্টেশনের জমি নিজের নামে ক্রয় করে এবং যৌথ ব্যবসার টাকা দিয়ে নিজের নামে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করে। চুক্তিতে বলা হয় ব্যবসা পরিচালনা করবে গাজী এবং তার ভাই। তাছাড়া প্রতি বছর চুক্তি মোতাবেক এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ বন্টন করা হবে। কিন্তু প্রায় ১০ বছর যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ করলেও গাজিউর রহমান কালাম ও রাজুকে লভ্যাংশের কোন ভাগ দেয়নি। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিরোধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারদের লাভের অংশ পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও প্রতিকার পায়নি কালাম ও রাজু। উপরোন্তু দেশে এসে লভ্যাংশ দাবি করলে কালাম ও রাজুকে হত্যার হুমকি দেয় গাজী। এই বিষয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে মৌলভীবাজারের প্রবাসী আবুল কালাম ও সামছুল ইসলাম রাজু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দিয়ে জীবন বাজি রেখে দেশে আসেন। পরবর্তী বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এড. মোঃ আবু জাহির এর স্মরণাপন্ন হন তারা। এমপি আবু জাহির উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে উনার ঢাকাস্থ এমপি হোস্টেল বাসভবনে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ সালিশ বৈঠক আহবান করেন। সালিশে উভয়পক্ষ তাদের মনোনিত মুরুব্বীয়ানগণসহ উপস্থিত ছিলেন। যদিও আবুল কালাম ও রাজু গং গাজিউর রহমানের কাছে ব্যবসায়িক হিসাব অনুযায়ী ৪ কোটি টাকা পাওনা দাবি করলেও গাজীউর রহমানের দেওয়া হিসাবমতে এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অংশীদারদের পাওনা হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে গাজিউর রহমানের স্বীকারোক্তি মোতাবেক সালিশের সভাপতি এমপি এড. মোঃ আবু জাহির আবুল কালাম গংদের অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের পাওনা হিসেবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অংশীদাদরদের নেওয়ার অনুরোধ করে রায় দিলে উভয়পক্ষ তা মেনে নেয়। সালিশে সিদ্ধান্ত হয় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা গাজিউর রহমান সালিশের সভাপতির নিকট জমা দিবে এবং আবুল কালাম গং তাদের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ প্রত্যাহার করবে। এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামায় সম্পাদিত হয়। এতে উভয়পক্ষসহ উপস্থিত মুরুব্বীয়ানও স্বাক্ষর করেন। যা এমপি আবু জাহির এর নিকট সংরক্ষিত রাখা হয়। পরবর্তীতে এই রায় অনুসারে গাজিউর রহমান বিভিন্ন তারিখে ভিন্ন ভিন্ন চেকে এমপি এড. মোঃ আবু জাহির এর এর ভাই মোঃ আল আমিন, ছেলে মোঃ ইফাত জামিল এবং মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির নামে ৫০ লাখ টাকা জমা দেন। আবুল কালাম গংদের সম্মতিতে অবশিষ্ট ৭০ লাখ টাকার চেকও তাদের নামে জামানত দেন গাজিউর রহমান। যার ফলশ্রুতিতে সালিশের সভাপতি গাজীকে অঙ্গীকারনামার কপি তাকে দেন। যাতে করে বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে দেয় অভিযোগগুলো সহজে নিষ্পত্তি করতে পারে। পরবর্তীতে গাজী কর্তৃক ৭০ লক্ষ টাকার চেকে উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে গাজীউরের অংশীদার আবুল কালাম ও রাজু সালিশের সভাপতি এড. মোঃ আবু জাহিরকে বার বার তাগিদ দিলে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত সময়ে চেকগুলো নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করলে হিসাবধারী কর্তৃক লেনদেন স্থগিত বলে এগুলো ডিজঅনার করা হয়। চেকগুলো ডিজ অনার হওয়ার পর বার বার গাজিউর রহমানকে এমপি আবু জাহির তাগিদ দিলেও বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। যেহেতু চেকের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর্যায়ে চলে যায় সেই হিসেবে এমপি আবু জাহির এর ছেলে ইফাত জামিল ও মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তি লন্ডনে থাকায় তারা দেশে এসে এমপি আবু জাহির এর ভাই আল-আমিনকে আমমোক্তার নামা প্রদান করে যান। মোঃ আল আমিন সেই আম মোক্তারনামাবলে ১৮ জুলাই ২০১৯ইং তারিখে একটি এবং ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে আরো দুইটি মোট ৩টি চেক ডিজ অনার মামলা গাজীউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হয়। উক্ত মামলাগুলো হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল আদালত-১ আমলে নিয়ে গাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে সমনজারী করেন এবং ২৯ অক্টোবর মামলার তারিখ ধার্য্য করেন। কিন্তু জামিনযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও সালিশ বিচারকের সাথে প্রতারণার জন্য এবং জনরোষের ভয়ে নি¤œ আদালতে হাজির না হয়ে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেয় গাজিউর রহমান। পরবর্তীতে ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সে নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পন করে। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট থেকে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে কোন প্রকার নির্দেশনা না আসায় তা আগামী ১২ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালত এ ব্যাপারে শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেন। এদিকে গাজিউর রহমান প্রতারণা করে তার অংশীদারকে ঠকানোর পরও সালিশ বিচারের সভাপতির বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। উক্ত সালিশ বিচারের সভাপতি এড. আবু জাহির একজন সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তিনিসহ তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে ঢাকার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের অর্থ ঋণ আদালতে চেকের মাধ্যমে  দেয় ৫৫ লাখ টাকা নগদ করায় এবং গাজী কর্তৃক দেয় ৭০ লাখ টাকার চেকসহ মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অন্যায়ভাবে ফেরত পাওয়ার দাবি করে দেওয়ানী আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে গাজীর হীন উদ্দেশ্য সাধনকল্পে হবিগঞ্জের বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে ছাপানোর চেষ্টা করে, যা পরবর্তীতে হবিগঞ্জের সচেতন সাংবাদিক ও পত্রিকার সম্পাদকদের মারফত জানা যায়। এছাড়াও কতিপয় পথভ্রষ্ট লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করে সালিশের সভাপতির মানহানীসহ সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, এমপি আবু জাহির এর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সাথে আতাত করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। এতে হবিগঞ্জবাসীর জনমনে মারাত্মক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সালিশে উপস্থিত থাকা হবিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর শেখ উম্মেদ আলী শামীম ও শায়েস্তানগর পঞ্চায়েতের প্রধান সরদার শহিদুর রহমান লাল বলেন, সমাজে শৃংখলা আনার জন্য হবিগঞ্জের সংসদ সদস্যরাসহ সকল জনপ্রতিনিধিরাই বিভিন্ন সালিশ বৈঠকে যান। যারা সালিশে বিচার করেন তাদেরকে আমরা সবাই সম্মান করি। কিন্তু একজন সংসদ সদস্য নিজের কোন স্বার্থ না থাকার পরও দু’টি পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার পর কোনপক্ষ কর্তৃক এভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা এবং হয়রাণীর চেষ্টা করা দুঃখজনক। এর পিছনে নিশ্চয় কোন ষড়যন্ত্র এবং অপশক্তি কাজ করছে। কেউ যদি এ ধরণের কর্মকান্ড করে তার বিরুদ্ধে আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব। হবিগঞ্জ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান মিয়া বলেন, সালিশ বেঠকে আমিসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা সকলে মিলে এই বিরোধ মিমাংসা করি। কিন্তু গাজিউর রহমান যেভাবে সালিশ বেঠকের সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং অভিযোগ দায়ের করছে তা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। গাজিউর রহমান একজন সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানহানীর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা সকলে মিলে প্রয়োজনে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করবো। প্রতারণার শিকার মৌলভীবাজারের লন্ডন প্রবাসী আবুল কালাম বলেন, গাজীউর রহমানের নিকট আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের পাওনা ছিল ৪ কোটি টাকা। সে টাকা দিতে টালবাহানা করলে আমরা হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এড. মোঃ আবু জাহির এর স্মরণাপন্ন হই। পরবর্তীতে সালিশে যে টাকা ধার্য্য করা হয় আমাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সালিশের সভাপতির অনুরোধে আমরা তা মেনে নেই। কিন্তু সালিশের পরও সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমাদের টাকা না দিয়ে গাজী আমাদেরকে নানানভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সে বলছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। কোন টাকাই সে দিবে না। উপরোন্তু সে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এককভাবে দখল করে নিবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। প্রবাসী হিসেবে এ ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ হবিগঞ্জ জেলাবাসীর কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। অপর অংশীদার সামছুল ইসলাম রাজুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গাজিউর রহমানের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে এমপি সাহেব আমাদের বিচার করে কোন পাপ করেছেন। গাজী আমাদের টাকা না দিয়ে উপরোন্তু আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের পায়তারা করছে। গাজিউর রহমান বলেন, আমি মামলা দায়ের করেছি। তবে এ ব্যাপারে ফোনে কথা বলব না। সরাসরি দেখা করলে কথা বলবো। নি¤œ আদালতে জামিনযোগ্য মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন কেন নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার একান্ত ইচ্ছা। এ ব্যাপারে বাদীপক্ষের আইনজীবী এড. নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গাজিউর রহমান অংশীদারদের টাকা এবং সম্পদ আত্মসাত করায় ভীত-শঙ্কিত হয়ে জামিনযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্যেও মহামান্য হাইকোর্টের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে সালিশ বৈঠকের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এড. মোঃ আবু জাহির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু বিরোধপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় উভয়পক্ষের মুরুব্বীদের নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিরোধটি নিষ্পত্তি করে দেই। বর্তমানে গাজিউর রহমান এ বিষয় নিয়ে যে সকল কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। একজন সালিশকারী হিসেবে ভবিষ্যতে এরকম সালিশ বৈঠকে কোনও জনপ্রতিনিধি সম্পৃক্ত হতে চাইবেন না বলে আমি মনে করি।


     এই বিভাগের আরো খবর