,

চুনারুঘাট সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ এর ২ দিনের বর্ষবরন উৎসব-১৪২২ নববর্ষের গান, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাটক, কবিতা , নৃত্য আর বাউল গানে মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি॥ বাংলার ভূ-প্রকৃতি ও সমাজ জীবনের ধারাবাহিকতায় আসে ঋতুবদলের পালা। এই ঋতু বদলের সাথে বাঙালীর উৎসবপ্রিয়তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালীর ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক উৎসব থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। বরং সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় উৎসবের দিন-ক্ষন। উৎসবমূখরতার উপাদান ছড়িয়ে আছে বাংলার মাটি-জল-আকাশে-বাতাসে। নববর্ষকে সাদরে বরন করতে পিছিয়ে নেই চুনারুঘাটের প্রকৃতি। তাই, বর্ষশুরুর নবপ্রভাতে নতুন দিনের আগমনী সুরে জেগে উঠেছিল চারদিক। বয়স-শ্রেনী-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের হৃদয়বীণায় নতুন দিনের আবাহনী সুরে মেতে উঠেছিল পুরো চুনারুঘাট। যথারীতি, এবারও বঙ্গাব্দ ১৪২২ কে বরন করতে ২ দিনব্যাপী বর্ষবরন উৎসব উদযাপন করে চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ। বছরের প্রথম দিন ভোরে নববর্ষের গান ও নৃত্যে বর্ষকে বরন করে নেয় চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সঙ্গীত ও নৃত্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্ষবরনের গানে কন্ঠ মিলায় নিহা, সেঁজুতি, বৈশাখী, দয়িতা,অন্তর, পার্থ, অর্নব, পিয়াস, সৃষ্ঠি, উপমা, বৃষ্ঠি, øিগ্ধা, স্বাগতা, ইপ্তি, তামান্ন, মুক্তা, শ্রেষ্ঠা, অন্নপূর্না, ঐশী, মাম্পি, উর্মি, মৌ, দেবাংশু, দেবদূত ও প্রমি। এসময় নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় শ্রেষ্ঠা, তামান্ন, নিহা, হৃদি, ও প্রাচী। ছিল পান্তা-ইলিশ ও মিষ্টান্ন পর্ব। সকাল ১০ টায় চুনারুঘাটের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে শুরু হয় বর্নিল ও বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা। উৎসব প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে চুনারুঘাট পৌরসভার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে উৎসব মঞ্চে শেষ হওয়া শোভাযাত্রায় ছিলেন চুনারুঘাট পৌরসভার মেয়র মো. নাজিম উদ্দিন শামসু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তন্ময় ইসলাম, শরদিন্দু বিকাশ দেব, নারায়ন শর্মা, মিহির দেব, সুপ্রিয় পাল, চন্দন বর্মন,সাজিদুল ইসলাম, তপন বৈদ্য, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ও আবুল কালামসহ চুনারুঘাটের প্রগতিশীল ব্যক্তিরা। উক্ত পরিষদের সভাপতি মো. সালেহউদ্দিন ও সাধারন সম্পাদক বিদ্যুৎ রঞ্জন পাল এর নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় বাঙ্গালী সংস্কৃতির বৈচিত্রময় প্রতীক ও ঐতিহ্য ধারন করে শতশত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহন ছিল উৎসবের প্রধানতম আয়োজন। বৈশাখের ১ম দিনের ২য় পর্ব বিকাল ৪টায় শুরু হয়। ২য় পর্বের শুরুতে মঞ্চস্থ হয় নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তাসের দেশ’। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে লিটল থিয়েটারের তামান্না, নিহা, অর্ণব, পার্থ, সৃষ্ঠি, উপমা, তানিশা, মৌ, মুক্তা, শশী, অন্তর ও শ্রেষ্ঠা। এরপর পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা পাঠ,বাউল ও একক গানের আসর। একক গানের আসরে জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে স্বর্নপদকপ্রাপ্ত শিল্পি নওশীন আবিদা,শান্তা, রাজু পাল, তপু, রাহুল, আয়েশা জাহান ও চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সঙ্গীত শিক্ষক কাজল গোপ। উৎসবের ১ম দিন শেষ হয় রাত ১২টায়।
চুনারুঘাটের ঐতিহ্যবাহী বার্ণি উপলক্ষে আয়োজিত ২য় দিনের উৎসব শুরু হয় বিকাল ৫টায়। কবিতা পাঠ করেন চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সাধারন সম্পাদক বিদ্যুৎ রঞ্জন পাল, পরিমল দেব, ঐশী, রাখি, শ্রেয়াস ও সারগাম পাল রাজ্য। গান, কবিতা ও লিটল থিয়েটারের নাটক এর পর শুরু হয় বাউল ও লোকসঙ্গীতের আসর। গানের শিক্ষক কাজল গোপের সংগীতায়োজনে হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাটের স্গংীত শিল্পিদের মধ্যে শর্মিলী পাল ও আবু সালেহ নাসির ও পংকজ দাস’র পর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় শিল্পি মরিয়ম বেগম সুরমা। রাধারমণের গান, বাউল করিমের মরমী গানসহ বাংলার বিখ্যাত গান পরিবেশন করেন তিনি। রাত ১টায় ২দিন ব্যাপী বর্ষবরন উৎসবের সমাপ্তি ঘোষনা করেন পরিষদের সভাপতি মো. সালেহউদ্দিন। ২দিন ব্যাপী উৎসবের অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন রনি রায়, নিসপা তালুকদার ও আরিফ। বর্ষবরন উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক সোহেল আরমান ও সদস্য সচিব নাহিদ মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সুজন, ঝুটন, শৈবাল, মুন্না, শহিদুল আলম, শান্ত, রনি, নিপা ও সেতু। উৎসব সফল করতে আরো যারা সহযোগিতা করেন তাদের মধ্যে মধু, জসীম, তারেক, পংকজ, শাহ নেওয়াজ, শান্ত, সুজাত, জীবন, সৈকত, ছায়েম, সুমন ও রাহুল। লোকশিল্পি মরিয়ম বেগম সুরমার লোকগানের আসর শেষ হয় রাত ১টায়। তারপরও শেষ করা যায়না। অনুষ্ঠানসূচিমতে রাত ঠিক ১২টায় বর্ষবরন উৎসবের সমাপ্তি ঘোষনা করবে চুনারুঘাট সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ। কিন্তু বিখ্যাত কন্ঠশিল্পি সুরমা’র পরিবেশনা শেষ হচ্ছিল না বলে উৎসবও শেষ হচ্ছিল না। প্রতিবছর প্রতিটি উৎসবই এমন হয় যে, উৎসব কোনমতেই শেষ হতে চায়না। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের মোস্তফা শহীদ মিলনায়তনের সামনে বিশাল মঞ্চের বিপুল আয়োজনে দিনব্যাপী উৎসব মূখর ছিল উপজেলা সদর তথা চুনারুঘাট পৌরসভা।
উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ জেলা তথা সিলেট বিভাগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লীলাভূমি চুনারুঘাটের প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠন চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ এর নিয়মিত আয়োজন নিজস্ব সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা ও বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক গণ প্রতিরোধ বলে মন্তব্য করেন চুনারুঘাটের বিজ্ঞ-সুশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষনের সকল প্রচেষ্টা সফল করার উদ্যমে চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের পথচলায় সকলকে আমন্ত্রন জানান পরিষদ’র সাধারন সম্পাদক বিদ্যুৎ পাল।


     এই বিভাগের আরো খবর