,

সৌদিতে নারী কর্মীদের সুরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপ: মন্ত্রণালয়

সময় ডেস্ক ॥ সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের সুরক্ষায় নজরদারি জোরদারে সরকারিভাবে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জাহিদ হোসেন। সম্প্রতি রিয়াদে যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। লিখিত বক্তব্যে জাহিদ হোসেন বলেন, সৌদি আরবে নারী কর্মীরা যতদিন কর্মরত থাকবেন, ততদিন তাদের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে। যে সব নারী কর্মী কাজ ত্যাগ করে পলাতক হয়েছেন, তাদের পুলিশ কোনোভাবেই নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করবে না। নারী কর্মীরা কর্মকাল পূর্ণ করলে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বহন করবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবে কোনো নারী গৃহকর্মী পাঠানোর আগে বাংলাদেশ গৃহকর্তার পারিবারিক বিষয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য খতিয়ে দেখবে। এজন্য সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক প্লাটফর্ম ‘মুসানেদ’-এ নারী কর্মী, সৌদি আরব-বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি ও গৃহকর্তা- সবার যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানা, গৃহকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নারী কর্মীর আগমনের তারিখ, গৃহকর্তার কাছে হস্তান্তরের তারিখ, গৃহকর্মীর দেশে ফেরার বিষয়ে সব তথ্য সন্নিবেশিত করা হবে। এছাড়া ‘মুসানেদ’ সিস্টেমে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ‘অ্যাপ্রুভাল উইন্ডো’ স্থাপনের বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এ যুগ্ম-সচিব বলেন, নিয়োগকর্তা পরিবর্তন, নতুন চুক্তি বা নবায়ন ও দেশে ফেরা সংক্রান্ত তথ্যাদি ছাড়া অন্যান্য তথ্যাদির মধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে। অবশিষ্ট তথ্যাদি হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে। যদি নারী কর্মী মেয়াদ শেষে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন করতে হবে। এ নবায়ন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা বলেন, কোনো বিপদগ্রস্ত নারী কর্মীর সুরক্ষার বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠলে সৌদি আরবের সুরক্ষা ও সহায়তা বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট শ্রমকল্যাণ উইং বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন।
কয়েক বছর আগে গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠাতে শুরু করে। এরপর থেকে সেদেশে গৃহকর্তার হাতে নানা ধরনের নির্যাতনের খবর আসতে থাকে। এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসে। তাদের বয়ানে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে।
এরপর থেকে দেশটিতে নারী কর্মী না পাঠানোর দাবিতে সরব হয়ে ওঠে বিভিন্ন সংগঠন। এ বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সৌদি আরবে আর নারী গৃহকর্মী না পাঠানোর দাবি জানান। এরপর গত ২৭ নভেম্বর রিয়াদে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথ কারিগরি কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা এবং সৌদি আরবের পক্ষে শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার জাবের আব্দুল রহমান আল মাহমুদ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সভায় ভিসা বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে উভয় দেশ একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, এবার আগের তুলনায় অনেক আন্তরিক মনে হয়েছে। সে আলোকে প্রশিক্ষণ, নিয়োগ সবক্ষেত্রে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর