,

আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকবে -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সময় ডেস্ক ॥ আওয়ামী লীগের রাজনীতি হল জনগণের কল্যাণ করা এবং আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশেই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বাণীতে তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালে মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব।
২১তম জাতীয় সম্মেলনে এই আমাদের অঙ্গীকার। দুই দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হবে। কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে দেয়া প্রতিটি ওয়াদা আমরা বাস্তবায়ন করব। সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে এতসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস-জঙ্গি, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা সুখীসমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি, আমরা এগিয়ে যাবই। কোনো অপশক্তি দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। দেশ অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা বিশ্বে এখন উন্নয়ন বিস্ময়। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার এখন ২১ শতাংশ ও মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। দুই কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটির বেশি মানুষ মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর ৯ মাস। যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে দমন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করে শত শত নিরীহ মানুষকে, নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়ে দেয়, প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোটারদের হত্যা করে। বিএনপি-জামায়াতের এই অপরাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে উন্নয়নের গতিকে সচল রেখেছে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগকে কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে পারেনি। তৃণমূলের নেতাকর্মী, সমর্থকরা জীবন দিয়ে সব প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয় জনমানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি জেল, জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম চালিয়ে যান এবং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ’৭১-এর ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পশ্চিম পাকিস্তানের নিভৃত কারাগারে বঙ্গবন্ধু অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। জাতির পিতা ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাঙালির বিজয় বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোন, ১৫ আগস্টের শহীদ, আগস্ট গ্রেনেড হামলার শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেসব নেতাকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম ও শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে গণমানুষের সুবৃহৎ সংগঠনে পরিণত করেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানান তিনি। বাণীতে শেখ হাসিনা দেশের সংগ্রামী জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে অফুরান শুভেচ্ছা জানান। সুত্র: যুগান্তর


     এই বিভাগের আরো খবর