,

ই-পাসপোর্টের যাত্রা বুধবার

সময় ডেস্ক ॥ অবশেষে ইলেকট্রনিকস পাসপোর্টের  (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এজন্য ওইদিন সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে। এরই মধ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বিমানবন্দরে ই-গেটসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করেছে।
নির্ধারণ করা হয়েছে এই পাসপোর্টের ফরম ও ফি। উদ্বোধনের পর থেকেই গ্রাহকরা ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য মিলেছে।

কাগুজে পাসপোর্টের দিন শেষ হয়েছে বহু বছর আগেই। দেশে শুরু হয়েছিল যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট-এমআরপি)। সে ধারণাও শেষের পথে। এখন দুনিয়াজুড়ে চলছে ই-পাসপোর্ট। এরই মধ্যে  বিশ্বের ১১৯টি দেশে চালু হয়েছে। বুধবার থেকে বাংলাদেশও প্রবেশ করতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট যুগে। তবে পাশাপাশি চলবে এমআরপিও।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ২২ জানুয়ারি বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর পর থেকে সাধারণ গ্রাহকও ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বহুল কাঙ্ক্ষিত ই-পাসপোর্ট পেতে অতি জরুরি ফি জমা দিলে সব তথ্য ঠিক থাকলে দুই দিনের মধ্যেই তা হাতে পাবেন গ্রাহক। ফি জমাভেদে পাঁচ বছর ও দশ বছর মেয়াদের এই পাসপোর্টে ৪৮ পৃষ্ঠা ও ৬৪ পৃষ্ঠা থাকবে। ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম সত্যায়ন করতে হবে না। তবে আগের মতোই পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে। ফরমে একজন গ্রাহককে প্রায় ৮৪ ধরনের তথ্য দিতে হবে। এর মধ্যে তারকা চিহ্নিত অন্তত ৪২টি তথ্য অবশ্যই দিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান সমকালকে বলেন, ই-পাসপোর্ট একটি অত্যন্ত নিরাপত্তা সংবলিত ব্যবস্থা। যে কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা ও তার হাত ধরে বাংলাদেশও ঠিক সময়ে ই-পাসপোর্ট দেশের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। এজন্য তারা এরই মধ্যে সব কাজ শেষ করে এনেছেন। এখন শুধু উদ্বোধনের পর গ্রাহকের হাতে হাতে তা যাওয়ার অপেক্ষা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য ভ্যাট ছাড়া সাধারণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং দশ বছরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের জন্য জরুরি ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং দশ বছরের জন্য সাত হাজার টাকা। পাঁচ বছরের অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং দশ বছরের জন্য ফি দিতে হবে নয় হাজার টাকা। এদিকে ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য ভ্যাট ছাড়া সাধারণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং দশ বছরের জন্য সাত হাজার টাকা। একই পৃষ্ঠার পাসপোর্টে পাঁচ বছরের জন্য জরুরি ফি সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং দশ বছরের জন্য নয় হাজার টাকা দিতে হবে। ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টে পাঁচ বছরের জন্য অতি জরুরি ফি সাড়ে ১০ হাজার টাকা এবং ১০ বছরের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার টাকা। তবে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারী এবং শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ই-পাসপোর্টের জন্য বিমানবন্দরে ই-গেট দরকার। এরই মধ্যে ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করে তা যাচাই করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সব ইমিগ্রেশন পয়েন্টে এই গেট স্থাপন করা হবে। তবে এই গেট ছাড়াও ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করা যাবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রচলিত এমআরপির মতো প্রথমে তথ্য সংবলিত দুটি পাতা ই-পাসপোর্টে থাকবে না। সেখানে পলিমারের তৈরি চিপ এবং অ্যান্টেনা থাকবে, যাতে পাসপোর্ট বাহকের নাম, নম্বর, জন্মতারিখসহ মৌলিক তথ্যগুলো থাকবে। এতে মেশিন রিডেবল অপশনও থাকবে। ফলে ই-গেট না থাকলেও ইমিগ্রেশন অফিসার সেটি স্ক্যান করে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম চালাতে পারবেন। ফলে ই-গেট না থাকলেও ইমিগ্রেশন পার হতে বা ঢুকতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ই-গেটের পাশাপাশি প্রচলিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও চালু থাকবে।


     এই বিভাগের আরো খবর