,

যত বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই Legend

 

সময় ডেস্ক : ছবি দেখেই সবাই হয়ত চিনে গেছেন কে এই লিজেন্ড তবু আবার বললাম উনি হচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী ফুটবলার রোনালদিনহু বিতর্কতে জড়ানোই যার নিত্যনৈমত্যিক কাজ। এবার আসি উনার বিতর্কিত কাজসমূহে

সদ্য জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি কিন্তু বন্দিদশা থেকে পুরোদমে কবে ছাড়া পান সেটাই দেখার বিষয়। তার কারাবন্দি হওয়ার খবর কিংবা হাতে লোহার বেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন ঠিকই। কিন্তু এই রোনালদিনহোর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অর্জনের সঙ্গে যে বিতর্ক ছিল ছায়ার মতো

প্যারিসের পার্টি বয় : ক্যারিয়ার মাত্র শুরু, ব্রাজিলিয়ান ক্লাব গ্রেমিও ছেড়ে প্রথম কোনো ভিনদেশি দলে নাম লেখান তিনি। ২০০১ সালের কথা বলছি, তার নতুন গন্তব্য ফরাসি ক্লাব পিএসজি। সাম্বার দেশ ছেড়ে নতুন শহরে পা দিয়েই রোনালদিনহো নিজেকে বেঁধে রাখতে পারেননি। পেশাদার ফুটবলের গণ্ডিটা পেরিয়ে অন্ধকার জগতে পা দেওয়া শুরু হয়। এ নিয়ে সতীর্থরাও তাকে বহুবার বুঝিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মাঝেমধ্যে অনুশীলন ফেলেও চলে যেতেন নাইটক্লাবে। বিষয়টি একপর্যায়ে পিএসজি কর্তাদের কানে যায়। প্রথমে তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি শোনেননি। অনেকটা গোপনেই পার্টি করে বেড়াতেন। তাতে নামের সঙ্গে যোগ হয় একটা বাড়তি বিশেষণ, ’প্যারিস পার্টি বয়’। তারুণ্যের সেই রোনালদিনহো বল পায়ে যতটা ক্ষুরধার ছিলেন, মাঠের বাইরেও যে ততটা বিতর্কিত এটাই তার প্রমাণ।

অনুশীলনে মদপান : দারুণ সময়, দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন রোনালদিনহো। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোলে সবাইকে চমকে দেন। চারদিকে তার প্রশংসা। ট্রান্সফার মার্কেটে এক লাফে তার দাম আকাশচুম্বী। এরপর মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাকে দলে ভেড়ায় বার্সা। ন্যু ক্যাম্পে এসেই বাজিমাত। ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি লিগ শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে নেন। কিন্তু হঠাৎ পথভ্রষ্ট। লিওনেল মেসি তখন তরুণ এক প্রতিভা। নাম লিখিয়েছেন মাত্র বার্সায়। আর মেসি আসার পর রোনালদিনহোর ওপর নির্ভরতা কমে যায় কাতালানদের। যেটা মোটেও ভালো লাগত না ব্রাজিলিয়ানের। তবে মাঠের রসায়নটা জমতো বেশ। আবারও বাজে নেশায় বুঁদ। মদপান করে অনুশীলনে আসতেন। আর বিষয়টি বার্সার কাছেও ভালো লাগেনি। বাকিরা খারাপ হতে পারে, বিশেষ করে তখনকার উদীয়মান তারকা মেসির ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে এমন ভয়েই শেষ পর্যন্ত রোনালদিনহোকে বিক্রি করে দেয় বার্সা।

মিলানের দিনরাত্রি : পাঁচ-পাঁচটা বছর স্পেনে কাটানোর পর ২০০৮ সালে এসি মিলানে যোগ দেন রোনালদিনহো। সে সময় বার্সায় কোচ হিসেবে মাত্র এসেছিলেন পেপ গার্দিওলা। কাছ থেকে তার এসব কাণ্ড না দেখলেও খবর রাখতেন নিয়মিত। তাই একটা ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে রোনালদিনহোকে নিয়ে কিছু কথাও বলেন তিনি। সবার মতো তার ফুটবলশৈলী নিয়ে পেপেরও দ্বিমত ছিল না। কেবল চরিত্রটা নিয়ে প্রশ্ন। তিনি একপর্যায়ে এও বলেন, ‘ও যে মানের ফুটবলার সেই মানটা তার বাজে আমুদে অভ্যাসের জন্যই ধুলোয় মিশে যাবে। কোথাও বেশি দিন ঠাঁই হবে না তার।’

পেপের কথা যেন মিলে গেল। মিলানে গিয়েও শোধরাননি রোনালদিনহো। সেই আগের মতোই বেহিসেবি চলা। আর রাত-বিরাতে নাইটক্লাবে ফুর্তি করা। একবার তো ধরাই খেলেন। ঘটনাটি ২০১০ সালের নভেম্বরের দিকের, সবাই তখন মিলান ডার্বি নিয়ে ব্যস্ত। আগের দিন কোচ অ্যালেগ্রি অনেকটা বুঝিয়ে পড়িয়ে তৈরি থাকার তাগিদ দেন ছাত্রদের। রোনালদিনহোও ছিলেন অ্যালেগ্রির ওই ক্যাম্পে। কিন্তু রাতেই তাকে পাওয়া গেল মিলানের একটি মদের বারে। তখন স্থানীয় সময় রাত আনুমানিক ২টা বাজবে। বিষয়টি কোচ অ্যালেগ্রির কানে যায়। রেগেমেগে যান তিনি। ড্রেসিংরুমে রোনালদিনহোকে একা ডেকে ভালোই শাসিয়েছেন। এরপর শাস্তি হিসেবে ডার্বিতে তাকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। তার পরের বছরই রোনালদিনহোকে ছেড়ে দেয় মিলান।

ব্রাজিলিয়ান কার্নিভাল : ফুটবলার নাকি অন্য কিছু! ২০১১ সালে সেই নিজ দেশেই ফিরতে হলো রোনালদিনহোকে। এবার খানিকটা মন খারাপ। রঙিন স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীটাকে দেখার আশায় ছাড়িয়ে যান পেশাদারিত্বের সীমারেখা। সেটা যে তার জন্য কোনোক্রমেই সুখবর বয়ে আনছে না কিছুটা হলেও টের পেয়ে যান। তাই ওই সময় মিলান ছড়ার পর একাধিক ভিনদেশি ক্লাব থেকে প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও বেছে নেন স্বদেশি ফ্লামেঙ্গোকে। কয়েকটা দিন বেশ চুপচাপ ছিলেন। তাতে আলোচনাও তাকে নিয়ে থেমে যায়। কিন্তু আবারও বিতর্ক। খবর আসে, প্রতি সপ্তাহে দুটি করে পার্টি করেছেন রোনালদিনহো। ব্রাজিলের বিভিন্ন বার আর নাইটক্লাবে ওড়াচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি পাউন্ড আর ইউরো। কয়েকটা দিন এ নিয়ে খবর বের হওয়ার পর একদিন নিজ মুখে বললেন এসব মিথ্যা। রীতিমতো গুজব বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু মিথ্যা বলে কি আর সত্যকে সর্বদা আড়াল করা যায়। একদিন ছবিসহ ফলাও করে খবর বের হলে রোনালদিনহোকে নিয়ে ক’দিন ধরে চলে তুমুল আলোচনা।

নারী আসক্তি : পুরো ক্যারিয়ারেই তিনি ছিলেন নারীর প্রতি আসক্ত! কখনও নাইটক্লাবে, কখনও বিচে, কখনও আবার হোটেলে নারীদের বশে আনতে ওড়াতের অসংখ্য অর্থ। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে তার দেউলিয়া হওয়ার পেছনে নাকি এই নারী আসক্তিই দায়ী। ২০১৮ সালের দিকে তো একসঙ্গে দুই বিয়ে করে ফেলেন তিনি। প্রিসিলা আর বিয়াত্রিজ নামের দুই নারীকে নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে রাখতেন। তাদের পেছনে খরচ করতেন বহু অর্থ। আবার হাত খরচের জন্য দু’জনকেই সমান দেড় হাজার পাউন্ড দিতেন। এক রকম উপহারও দিতেন। যাতে করে কোনো রকম ঝামেলা না হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে অস্বীকার করেন রোনালদিনহো।

অনুমতি ছাড়া চিনি কল : ফুটবল ছাড়ার পর নিজ দেশ ব্রাজিলের লেক গুয়াইবায় অনুমতি ছাড়া চিনির কল বসানোয় শাস্তির কবলে পড়েছিলেন। এমন অপরাধে তাকে ২৩ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। কিন্তু তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে মিলেছে মাত্র ৬ ডলার ৫৯ সেন্ট। আর জরিমানা পরিশোধ করতে না পারায় ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষ তার পাসপোর্ট জব্দ করেছিল।

জেল-জরিমানা : এই একটাই বাদ ছিল যেটা দেখার বাকি ছিল রোনালদিনহু ভক্তরা, শেষ পর্যন্ত দেখতে হলো রোনালদিনহোভক্তদের। জাল কাগজপত্র করে প্যারাগুয়েতে যাওয়ায় ৩২ দিন জেল খাটতে হয় তাকে। সম্প্রতি মুক্তি মিললেও দেশটির একটি হোটেলে বন্দিভাবে জীবন কাটাতে হবে তাকে। কেননা মামলার পুরোটা জট খুলতে লাগবে আরও সময়। সে পর্যন্ত তার ঠিকানা ওই হোটেল। তাও আবার ১.৩ মিলিয়ন পাউন্ড খরচায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি টাকা।


     এই বিভাগের আরো খবর