,

করোনায় সিলেটে ডাঃ মঈন উদ্দিনের মৃত্যু

শোকাহত করোনা সনাক্তের পরিক্ষাকারী মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বেনু ভূষন দাশের ফেইসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস

সলিল বরণ দাশ : সিলেট বিভাগে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা রোগ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎকদের পরামর্শমতে তিনি বাসায় কোয়ারেন্টিন অবস্থায় চিকিৎসা নিতে থাকেন। তার শরীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে ৭ এপ্রিল তিনি নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন।
৮ এপ্রিল সেখান থেকে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সোমবার হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সিলেট করোনা রােগীদের জন্য নির্ধারিত শহীদ সামসুউদ্দিন হাসপাতালের করোনা সন্দেহে গত ৫ই এপ্রিল সিলেট মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দিনের করোনা সনাক্তের জন্য গেলে যে প্যাথলজিষ্ট তার করোনা সনাক্তকরণের পরীক্ষা করেন তিনি হলেন শহীদ শামসুউদ্দিন হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বেনু ভূষণ দাশ। গত ৫ই এপ্রিল পরীক্ষা করার সময়ের ডাঃ মঈন উদ্দিনের সাথে কথোপথনের এক আবেগন স্ট্যাটস গতকাল বুধবার তার ফেইসবুক পেইজে দেন। তার সেই আবেগঘন স্ট্যাটাস ইতোমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। উল্লেখ্য যে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বেনু ভূষন দাশ শহীদ সামসুউদ্দিন হাসপাতালে আসার আগে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন।
শহীদ সামসুউদ্দিন হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বেনু ভূষন দাশের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দৈনিক আমাদের সময়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
হাসপাতালের ৩ নাম্বার ওয়ার্ড,করোনা আইসোলেশন সেন্টার করার সুবাদে জেনারেল রোগী সব ছুটি দেওয়া হয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই।
সব বেড ফাঁকা।
ভিতরে আমি সহ ২ জন মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই।
আর এম ও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী (অন্যান্য রোগী সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য ৩ নং ওয়ার্ডে স্যারকে বসানো হয়েছিলো) স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য গিয়েছি,
স্যার বসে আছেন সব ফাঁকা বিছানার একটিতে।
আমি পি পি ই পরিহিত, হাতে কালেকশন ট্রে।
আমিঃ স্যার আদাব,আমার নিজের পরিচয় জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,আপনি কি ডাক্তার মঈন উদ্দিন?
স্যার আমি এসেছি আপনার স্যাম্পল নিতে।
আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্যারঃ জ্বি, আমিই ডাক্তার মঈন উদ্দিন।
আমিঃ স্যাম্পল নিতে নিতে বললাম স্যার কি কি সমস্যা হচ্ছে আপনার?
স্যারঃ হেসে উত্তর দিলেন তেমন বেশি কিছু না,দুয়েকদিন ধরে একটু একটু ফেবারিশ লাগছে,সাথে হালকা গলা ব্যাথা।
সন্দেহ বশত করাচ্ছি,বলা তো যায় না।
আমিঃ স্যার আপনার স্যাম্পল নেওয়া হয়ে গেছে,
রিপোর্ট পাবেন আগামীকাল রাতে অথবা পরশু সকালে।
স্যার পূনরায় আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন, সাবধানে কাজ করো বলে হেসে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলেন।
এটাই ছিলো স্যারের সাথে আমার শেষ কথা ও দেখা।
ওই দিন স্যার ছাড়াও কেবিন সহ প্রায় ছয়/সাত জনের মত স্যাম্পল কালেকশন করি।
দুই/ তিন জনের সমস্যা প্রকট হওয়ায় (শ্বাস কষ্ট,অক্সিজেন মাক্স লাগানো), আমার ধারনা ছিলো অন্য কারো কভিড পজিটিভ আসলেও স্যারের হবে না।
কিন্তু কি নিয়তি?
সব নেগেটিভ, স্যারের টা পজিটিভ।
ক্রমান্বয়ে অবস্থার অবনতি, সিলেট থেকে ঢাকা।
ঢাকার হাসপাতাল থেকে আজ চির নিদ্রায়।
অচিন দেশে,অচিন বেশে, না ফেরার দেশে।।

বিনম্র শ্রদ্ধা।
স্যার আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি।
পরপারে ভালো থাকুন।
আমাদের জন্য দোয়া করুন।

বেনু ভূষণ দাশ
মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট
সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল,সিলেট।
তারিখঃ১৫/০৪/২০২০।


     এই বিভাগের আরো খবর