,

করোনা পরিস্থিতিতেও মুনাফার লোভ ব্যাবসায়ীদের…

সময় ডেস্ক : স্বাভাবিক সময়েই বাজার খরচ জোগাতে হিমশিম খান নিম্ন-মধ্যবিত্তরা করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে তাদের আয় আরও কমেছে। এ অবস্থায় রমজানের আগেই প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। ফলে তার এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। এক রিক্সা চালক জানান, এক মাস ধরে তার বেশিরভাগ দিন কাটে অনেকটা অনাহারে অর্ধাহারে। তিনি আরো জানান, দিনে তার এখন যা আয় হয়, তা দিয়ে ছয়জনের সংসারে দৈনিক আড়াই কেজি মোটা চাল, তেল, হলুদ মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। একটি কিনলে অন্য পণ্য বাকি থাকছে।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অনেকেই একই অভিযোগ করেন। এক মাস ধরে তাদের আয় প্রায় বন্ধ। এর ফলে খাবার জোগানো দুরূহ। এ রকম একটা পরিস্থিতিতেও ব্যবসায়ীরা অন্যান্য বছরের মতোই নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে বলে তাদের মত। সরকারের ত্রাণের ঘোষণার কথা শুনলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। এখন রোজার সময় দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। এতদিন কম দামে ডাল ও সবজি পেলেও এখন তা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
গতকাল ২৪ এপ্রিল (শুক্রবার) দেশের প্রিায় সব বাজারেই রোজার বাড়তি চাহিদার পণ্য কেনাকাটায় ছিল ভিড়। কয়েক দিন ধরে বাজারে বাড়তি কেনাকাটার সুযোগে দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা তুলছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যে। এতে পণ্য কিনতে চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এখন বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে গরিবের আমিষ খ্যাত মসুর ডালের দাম। প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল এতদিন ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত কয়েক দিনে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা হয়েছে। কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে মাঝারি দানা মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় হয়েছে। সরু দানা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
বাজারের ১ খুচরা ব্যবসায়ী এক সংবাদমাধ্যমকে জানান, হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। পাইকারিতেই মোটা মসুর ডাল ৯৪ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। রমজানে পেঁয়াজু তৈরিতে মোটা মসুর ডালের ব্যবহার বেড়ে যায়। এই সুযোগ নিয়ে কম আয়ের মানুষের এ ডালের দাম কেজিতে ৩৫ টাকা বাড়িয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত মাসেও এই ডাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে খুচরায় বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। শুধু মসুর ডাল নয়, খেসারি ডালের কেজিও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল ৫৫ থেকে ৬০, ছোলা ৮০ থেকে ৯০, মুগডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বেড়েই চলছে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। ডাল ছাড়াও হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও অনেক বেড়েছে। রোজার কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চিনির দামও। এখন চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৬৫ টাকা ছিল। আর পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০, দেশি রসুন ১১০ থেকে ১৩০ ও আমদানি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম বেড়ে আদা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ১ ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, বিক্রি বেশি থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। মিল ও আমদানি পর্যায়ে পণ্যেও দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতেও দাম কিছুটা বেড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাজারে চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসুর ডাল, মুরগি, শুকনা মরিচ, পাম তেল ও ছোলার দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম ৩ থেকে ২৭ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এ ছাড়া চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এখন প্রতি কেজি চিড়া ৭০, মুড়ি ৮০ এবং গুড়ের কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে খেজুর ২৫০ বা তার বেশি ও হয়েছে। ফলের মধ্যে মাল্টার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় লেবুর হালি গড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। শসা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বেগুন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁচামরিচসহ বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় উঠেছে। ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়ে ১৩০ ও লেয়ার মুরগি ১৯০, সোনালি ২২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। গরুর মাংস ৬০০ ও খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর