,

নবীগঞ্জে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে সংর্ঘষে বৃদ্ধ নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

আনোয়ার হোসেন মিঠু : নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে বিজনা নদীর জমহাল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে জাহির আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ
ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। এ সময় গর্ভবর্তী মহিলা ও শিশুসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাও সংঘঠিত হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ, নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেলের
এএসপি মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। সংঘর্ষের পর গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের আগে ও পরে উভয় পক্ষের ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাযায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে বিজনা নদীর জমহাল নিয়ে ওই গ্রামের বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, সাবেক মেম্বার মনর মিয়া ও কাচন মিয়া গংদের সাথে একই গ্রামের শফিক মিয়া ও রয়মান মিয়া গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জ- বাহুবল এর সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংরা সালিশের সময় রায় মানলেও এলাকায় গিয়ে তা অমান্য করে পুর্বের ন্যায় তারা তাদের অবস্থানে ফিরে যায়। বুধবার সকালে কাচন মিয়ার বাড়ীর সামন দিয়ে সিএনজি ষ্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে শফিক মিয়ার পক্ষের লতিফ মিয়া ও তার স্ত্রীকে মারধোর করে রাজা মেম্বার গং পক্ষের লোকজন। এ খবর শফিক মিয়া গংদের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাতেই দাঙ্গা হাঙ্গামা এড়াতে উভয় পক্ষের ৫ জনকে আটক থানার নিয়ে আসে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের লোকজনের পিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই জাহির আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন হাফিজুন্নেছা (৩৫), ছুরুক মিয়া (৩৩), কুরুস মিয়া(৩০), জুসনা বেগম(৪০), ফয়জুর রহমান (৪০), ইছমত মিয়া (৩৫), মকবুল হোসেন (১৭), আকবর মিয়া (৩০), মস্তফা মিয়া (১৫), আবু তাহের (২৮), বিরাম উদ্দিন (৫০), রফি মিয়া (৩০), জলি বেগম (১৮), তোফাজ্জল মিয়া (২৮), আছিয়া বেগম (২৯), সুফান মিয়া (৪০),শহিদ মিয়া (৪৫), আকবর মিয়া (২৬), মিছবাহ উদ্দিন (৩০), মানিক মিয়া (৪০), সালাম মিয়া (৫০), সামসুল হক (৪৫), সজল মিয়া (৩০)। বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়ায় অন্যান্য আহতদের নাম সংগ্রহ করা যায়নি। সংঘর্ষের পর আরো ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান জানান, গ্রামের জলমহাল, মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দু’টি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিষয়টি নবীগঞ্জ- বাহুবল এর সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বসে মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু তার পরেও এ ঘটনা সংগঠিত হয়। আমরা খবর পেয়ে রাতেই উভয় পক্ষের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর