,

ধরা পড়ার মুহূর্তে র‌্যাব সদস্যদের যা বলেছিলেন সাহেদ

সময় ডেস্ক : করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে গত বুধবার সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পরপরই সাহেদ নিজেকে একজন গণমান্য ব্যক্তি বলে দাবি করেছিলেন। সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার মামলা তদন্তে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তারের পরপরই সাহেদ কী বলেছিলেন- জানতে চাইলে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, ধরা পড়ার মুহূর্তে ভারী কণ্ঠে সাহেদ বলছিলেন, ‘আমি একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। পত্রিকার মালিক। আমার রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সে সময় সাহেদ আরও বলেন, ‘নিয়মিত টক শো করি। আমি সাভারের রানা প্লাজার রানা নই। আমাকে রানা বানানো ঠিক হবে না। আমার কাজের জন্য অনুতপ্তও নই।’ গ্রেপ্তারের পরদিনই সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ। শুনানি নিয়ে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে ডিবি হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালেও প্রতারক মো. সাহেদ করিমের দাম্ভিকতা কমেনি। এত এত কুকর্ম করলেও সে জন্য তার বিন্দুমাত্র অনুতাপও নেই; বরং পুলিশ-র‌্যাবের শীর্ষ কর্তাদের কাছে বহুরূপী এ প্রতারক দৃঢ়কণ্ঠে বলছেন, ‘জামিন পাওয়ার পর আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। তখন জীবনের অনেক কাহিনি শোনাব।’ তিনি এও বলেন, ‘একজন সম্পাদক ও প্রকাশককে এভাবে নাজেহাল করা ঠিক হয়নি।’ দাবি করেছেন, তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মন্ত্রী-এমপি হওয়ারও স্বপ্ন ছিল তার।

একাধিক নির্ভরশীল সূত্র সএক সংবাদমাধ্যমকে জানায়, গ্রেপ্তারের আগে একটি ভাড়া গাড়িতে সাতক্ষীরা যান সাহেদ। সেখানে তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। রাতেই ওই আত্মীয়ের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করেন। তবে সাহেদের মামা তাকে সেখানে আশ্রয় দিতে চাননি। গত বুধবার ভোররাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাহেদ স্থানীয় বাচ্চু মাঝির সঙ্গে অবৈধ একটি সিম দিয়ে যোগাযোগ করেন। বাচ্চু মাঝি তাকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, সাহেদদের আদিবাড়িও পশ্চিমবঙ্গে। বাচ্চু মাঝি আগে থেকেই তার চেনাজানা ছিল। দীর্ঘদিন অবৈধপথে লোক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমান্তে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বাচ্চু মাঝির। লবঙ্গবাতি খাল হয়ে ইছামতী নদী হয়ে ভারতে পালানোর ছক ছিল সাহেদের।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর গা-ঢাকা দেন সাহেদ। ওই রাতেই সাহেদ তার মোবাইল সিম বন্ধ করে দেন। তবে সেই রাতে ঢাকার একটি হোটেলে ছিলেন তিনি। এরপর মাধবদী ও কুমিল্লায় যান। কুমিল্লায় এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা ব্যর্থ হলে কুমিল্লায় একটি হোটেলে রাত কাটান। ওই হোটেলের পাশেই একটি সেলুন থেকে চুলে কালো কলপ দেন। আর হোটেলরুমে নিজের গোঁফ কাটান। তৃতীয় দিন কুমিল্লা থেকে নরসিংদীর দিকে রওনা দেন। তবে পথে চেকপোস্টের সামনে পড়ায় গাড়ি ছেড়ে গ্রামের মধ্যে পালিয়ে যান।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পলাতক থাকাকালে সাহেদ মোবাইলে পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একাধিক আইনজীবীর সঙ্গেও তার কথা হয়। গ্রেপ্তার এড়িয়ে আদালতে কীভাবে আত্মসমর্পণ করা যায়, সে পরামর্শ চান তিনি। আত্মসমর্পণ করানোর ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। গ্রেপ্তার ও সাংবাদিকদের এড়িয়ে সরাসরি কারাগারে যাওয়ার প্ল্যান ছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ তাকে এ কাজে সহায়তা করতে রাজি হননি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেকজন কর্মকর্তা কে সংবাদমাধ্যমকে জানান, পলাতক থাকাকালে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক সহযোগীর আশ্রয় চান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানকার কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও অল্পের জন্য ফসকে যান সাহেদ। পলাতক থাকাকালে কখনও নিজের গাড়ি, কখনও রেন্ট-এ-কার, কখনও বাস-লেগুনায় তার যাতায়াত ছিল। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে সাবেক এক রাষ্ট্রদূতের কাছে আশ্রয় চান সাহেদ। তবে ইতিবাচক সাড়া পাননি।

একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকালে অবৈধ সিম ব্যবহার করায় তাকে ধরতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। বারবার অবস্থান বদল করছিলেন তিনি। সাতক্ষীরা থাকাকালে একটি অবৈধ ভারতীয় সিমও ব্যবহার করেন সাহেদ।


     এই বিভাগের আরো খবর