,

বিসমিল্লাহ’র অলৌকিক শক্তি

সময় ডেস্ক ॥ বিসমিল্লাহ ছাড়া কেন নাযিল হয়েছে? এ বিষয়ে একাধিক বক্তব্য রয়েছে, হযরত আলী রা.এর কথা সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ হচ্ছে রহমত এবং নিরাপত্তার প্রতীক অথচ সূরা তাওবায় কাফের মোশরেকদের নিরাপত্তার অবসান ঘোষণা করা হয়েছে এবং জেহাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মোশরেকরা মুসলমানদের ধোকা দিয়েছে এবং চুক্তি লংঘন করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের সংগে হাত মিলিয়েছে। এ কারণে মোশরেকদের সাথে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। রসূল স. চুক্তির অবসান ঘটিয়ে মোশরেকদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধের ঘোষণা দেন। কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ১১৩টি সূরার শুরুতেই ‘বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম’ শোভিত ও সংযোজিত করেছেন, সুবহানাল্লাহ। এই ‘বিসিমল্লাহ’র ফজীলত অপরিসীম। এই আয়াতটিকে পবিত্র কোরআনের মুকুট বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছেপরম করুণাময় আল্লাহপাকের নামে শুরু করছি-যিনি অতিদয়ালু, করুণাময়। হযরত রাসূলে মকবুল (স) এই আয়াতটিকে আল কোরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীনের অতি দয়া-করুণাসূচক ‘রহমান ও রহিম’ নাম দুটো মানবকূলের জন্য সর্বাগ্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ জন্যও বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম-এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বেশি। নবী (স) বলেছেন যে, কোন ভালো কাজের পূর্বে তাসিময়া তথা বিসিমল্লাহ পাঠ না করে নিলে কাজে রহমত-বরকত আশা করা যায় না। সুফলও পাওয়া যায় না। ‘বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম’ জেকের ও আমলের মাধ্যমে অধিক সওয়াব ছাড়াও অসংখ্য শুভ এবং সৎ কাজ ত্বরিত সম্পন্ন হয়। হজরত ঈমাম গাজ্জালী (রহ) বলেছেন, কোন সৎ, বৈধ ও ভালো কাজ সম্পাদনে এক হাজার বার ‘বিসিমল্লাহ’ পাঠ করে দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করলে আল্লাহপাক তার মনের মকসুদ পূরণ করে দিবেন। হজরত শায়েখ আবু বকর সিরাজ (রহ) বলেছেন, যদি কেউ ছয়শত পঁচিশ (৬২৫) বার ‘বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম’ লিখে সঙ্গে রাখে তবে তার কোন আপদ বিপদের আশংকা থাকবে না। তাফসীরে কাবীরে বলা হয়েছে, হজরত রাসূল (স) বলেছেন কেউ চার হাজার বার ‘বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম’ পাঠ করলে রোজ হাশরে তার পতাকা উড্ডীন থাকবে। হজরত ওমর ফারুক (রা) রোমের সম্রাটকে টুপী ব্যবহার করতে দিলে ‘বিসিমল্লাহির’র টুপীর বরকতে তার শিরঃপীড়া দমন থাকতো। ওলী-আউলিয়া, পীর-মোরশেদ, বোজর্গানে দ্বীন ব্যক্তিরা ‘বিসিমল্লাহের রহমানির রহিম’ আমল করতেন এবং এ আমল দ্বারা অগণিত উপকার পেতেন যা পরীক্ষিত ও সত্য। তাফসীরুল মারেফুল কোরআনে বিসিমল্লাহ সম্পর্কিত স্থানে নানা উপদেশ রয়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ করতে, বাতি নেভাতে, কোন কিছু খাওয়া, পানি পান করা, ওজু করা, যানবাহনে চড়তে ও যানবাহন থেকে নামতে ‘বিসিমল্লাহ’ বলার নির্দেশনা পবিত্র কোরআন-হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহপাক এমন সত্তার নাম যে সত্তার সমস্ত গুণাবলীর এক অসাধারণ প্রকাশ হচ্ছে বিসিমল্লাহ। সূরা তাওবা বিসমিল্লাহ ছাড়া কেন নাযিল হয়েছে? এ বিষয়ে আলেমদের একাধিক বক্তব্য রয়েছে। তবে হযরত আলী (রা.)-এর কথা সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য। হযরত আলী (রা.) বলেছেন,’বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ হচ্ছে রহমত এবং নিরাপত্তার প্রতীক অথচ সূরা তাওবায় কাফের মোশরেকদের নিরাপত্তার অবসান ঘোষণা করা হয়েছে এবং জেহাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। (যাদুল মুছীর, আল্লামা জাওযী) মোশরেকরা যেহেতু মুসলমানদের ধোকা দিয়েছে এবং চুক্তি লংঘন করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের সংগে হাত মিলিয়েছে। এ কারণে মোশরেকদের সাথে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। তা ছাড়া চুক্তি বহাল রাখার কোনো নৈতিক বৈধতাও ছিলো না। এ কারণেই আল্লাহ ও তাঁর রসূল (স.) চুক্তির অবসান ঘটিয়ে মোশরেকদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধের ঘোষণা দেন। যদি এই সূরার শুরু বিসমিল্লাহ দিয়েই হতো তবে আল্লাহর শানের করুনাময়তা এবং দয়া মোশরেকদের জন্যে রহমত এবং নিরাপত্তার প্রতীক হতো। অথচ এই সূরার শুরুতেই নিরাপত্তার অবসান এবং যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং মুসলমানদের আদেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,’মোশরেকদের যেখানে পাবে সেখানেই তোমরা হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, তাদের অবরোধ করবে এবং তাদের (ধরার) জন্যে তোমরা প্রতিটি ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে।’ (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৫)


     এই বিভাগের আরো খবর