,

‘আর্থ সামাজিক নিরাপত্তাই সমবায়’ হাসনাহেনা উপজেলা সমবায় অফিসার (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। ছোট আয়তনের এই দেশটি আজ জনসংখ্যার ভারে নজু। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ১৬ কোটি ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাভনা রয়েছে। এ সুবিশাল জনবহুল দেশটির আয়তন প্রায় ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইল। লোক বাড়ছে কমছে কৃষি ভূমি ফলে উৎপাদন কমে খাদ্য ঘাটতির চাপে পড়ে অর্থনিতি আজ হুমকির মুখে। ফলে দরিদ্রতা এর বর পরছে আমাদের উপর। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তুু আমাদের বেড়িয়ে আসার উপায় কি? হতাশকারীরা বলবে, বেরিয়ে আসার উপায় নেই। আমরা আশাবাদী, আর আশাবাদী স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে আর সেই স্বপ্নের পথ ধরে হেঠে তারা সফলতার পথ খুজে পায়। যেমন পেয়েছে সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, আমাদের পক্ষে ও সম্ভব। সল্প উন্নত আয়ের সীমানা পেরিয়ে খুব শিগ্রই আমরা একটি মধ্য আয়ের দেশে জায়গা করে নিতে যাচ্ছি। আমরা বঙ্গালীরা স্বপ্ন দেখছি একদিন আমরা ও উন্নত আয়ের দেশে পৌছবো। আমার এই স্বপ্নের পিছনে যে কারনটি, যদি কারো জীবনে ইন্দন যোগায়! তাহলে- ‘আমরা বীরের জাতী’ যে কোন কঠিন বাস্তবতা মোকাবেলায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত। যে জাতি জিবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা আনে, জীবনের বিনিময়ে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীন ভুমি উপহার দেয়- সেই ভূমিতে সোনা একদিন ফলবেই। জনসংখ্যা আজ আমাদের কাছে একটা বোঝা। কিন্তু এভাবে না ভেবে যদি আমরা এটা কে সম্পদ হিসেবে মেনে নিয়ে কাজ করি, তাহলে এই বাড়তি জনসংখ্যা ঘুরিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতির বর্তমান প্রেক্ষাপট। শুধু প্রয়োজন এই বাড়তী জনগোষ্টী কে কর্মট জনগোষ্টীতে পরিনত করা। আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও নীতি নির্ধারনের কর্ম পরিকল্পনা প্রনয়ন। ‘আমরা সমবায়ী’ আমরা আমাদের ভাবনা থেকে বলছি। দারিদ্রতা নিরসনে সমবায় হতে পারে অন্যতম নিয়ামক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমবায় ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলে আজ উন্নয়নের চরম শিখরে পৌছেছে, ৬০এর দশকে গ্রাম-বাংলার উন্নয়নের রুপকার আখতার হামিদের হাত ধরে বাংলাদেশে সমবায়ের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল যা দারিদ্রতা নিরসনে বিশ্বে মডেল হয়েছিল। দেশ স্বাধিনের পর সমবায়ের জয়যাত্রার রথটিকে আরও বেগমান ও সার্বজনীন করার প্রয়াসে জাতীর জনক, বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান, সমবায় কে জাতীয়করন করেন। শুরু হয় সমবায় আন্দোলন। একটি পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়তে থাকে এই আন্দোলনের গতি। মনে করা হয়, দেশী বিদেশী কিছু চক্রান্তকারী যারা সমবায়কে নিজেদের প্রতিদ্বন্ধী ভেবেছে, কিংবা বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট হিসেবে দেখতে পছন্দ করেনি। ভিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেশটিকে ব্যবহার করতে ছেয়েছেন। তাদের ষড়যন্ত্রে সমবায় আন্দোলন গতি পায়নি। আজ সমবায় এসেছে। মানুষ উপলব্ধি করছে, দেশ আমার, আমাকেই ভাবতে হবে। এজন্য সমবেত হতে হবে। প্রয়োজন একটি পতাকা। তাই তারা সমবেত হচ্ছে, সমবায় পতাকাতলে। তাই পুনরায় উজ্জিবিত হচ্ছে সমবায়িরা। সমবায় একটি অর্থনৈতিক আন্দোলন, সমন্বিত উদ্যোগে মূলধন গঠন এবং লাভজনক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে সদস্যদের অর্থনৈতিক কল্ল্যান ও জীবনমানের উন্নয়ন সাধনই সমবায়ের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য সমবায় হচ্ছে, সকলে মিলে উন্নয়নের পথে এগুবার একটি প্রক্রিয়া। কারন সমবায়ের মাধ্যমে উন্নয়নের চেষ্টা করলে যা ব্যাক্তির কাছে দুঃসাধ্য সমষ্টির কাছে সহজসাধ্য। সীমিত আয়ের জনগোষ্টীকে সংঘবদ্ধ করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে সমবায় অনন্য। সমবায় একটি সংঘবদ্ধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সমবায় একটি অর্থনৈতিক আন্দোলন। সমবায় সোশ্যাল মবিলাইজেশন- এর মাধমে গ্রামের সীমিত আয়ের জনগোষ্টীকে সচেতন করে তুলতে পারে এবং গ্রাম পর্যায়ে ব্যাপক কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে। সমবায় সমিতিগুলো স্বল্পবিত্ত সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে। এই সল্প সঞ্চয় থেকে নিজস্ব সম্পদ আহরনের মাধ্যমে বৃহৎ পুজি গঠন করে সমিতি গুলো ভবিষ্যতে দারিদ্র নিরসনে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর ব্রিটেন, জার্মানীসহ ইউরোপের বহুদেশে অর্থনৈতিক অভাব থেকে মুক্তি পেতে সমবায় হয়ে উঠছিল অন্যতম করণ-কৌশল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জাপান যে এত দ্রুত অর্থনৈতিক মোড়ল হল, তারও প্রধান কারনকৌশল সমবায়। এ উপলব্ধি থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধানে সমবায়কে দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু আমরা আমাদের জাতীয় ভাবনা চরিত্র এবং সমবায় আদর্শের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতার কারনেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামীল হতে পারিনি। তাই সময় এসেছে সমবায়কে নিয়ে নতুন করে ভাবার। সর্বশেষে বলবো- অর্থনিতি নিরিখে অভাব অসীম। সম্পদ সীমিত, এই সত্য বস্তু জগতে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু সত্য জগতের সত্য হলো- অভাব সল্পায়ূ। চাহিদা মিটলেই অভাব ফুরিয়ে যায়। সম্পদের মূল কারন শুভ ইচ্ছা, ইচ্ছা আর কাজের সমবায়েই সম্পদের সৃষ্টি। তাই সমবায় শুধু দারিদ্রতা বিমোচনের হাতিয়ার নয়, সার্বিক বিচারে সমবায় উচ্ছতর জীবনে মহত্তের হাতিয়ার। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সমবায় কার্যক্রম।


     এই বিভাগের আরো খবর