,

নবীগঞ্জের ওয়াহিদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ টাকা ও চাল চুরির অভিযোগে বিভু আচার্য্যরে মামলা দায়ের

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জে যৌথ ব্যবসার পুজি আত্মসাত ও ব্যবসার চাল চুরির অভিযোগে উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের ছোট শাখোয়া গ্রামের মুকিম আলীর পুত্র আব্দুল ওয়াহিদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক পার্টনার ডিড রাইটার বিভু আচার্য্য বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-২, অতিরক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ ও সিভিল আদালতে পৃথক ৪ টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার করাগাঁও ইউনিয়নের ছোট শাখোয়া গ্রামের মুকিম আলীর পুত্র আব্দুল ওয়াহিদ একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় বিভু আচার্য্য ও মাছুম চৌধুরীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে বিভু আচার্য্য ও মাছুম চৌধুরীকে লাভজনক ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসার অংশীদার করে ওসমানী রোডস্থ একতা ট্রেডার্স নামীয় একটি ধান-চাউলের আড়ৎ খোলে। বিভু আচার্য্য দলিল লেখার কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং মাছুম চৌধুরীও ব্যবসায় অনবিজ্ঞ থাকায় ৩ পার্টনারের মৌখিক চুক্তিতে ব্যবসার অভিজ্ঞ আব্দুল ওয়াহিদকে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং বিভু আচার্য্যরে নামে ট্রেড লাইসেন্স ও বিভিন্ন ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়। কিছুদিন ব্যবসায় লাভজনক দেখাইয়া সুচতুর আব্দুল ওয়াহিদ ব্যবসাকে আরো বড় করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলনের প্রস্থাব দেয়। এরই প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ ইসলামী ব্যাংক হতে ১৫ লক্ষ টাকা বিভু আচার্য্য ও আব্দুল ওয়াহিদ এর নামীয় ভূমি বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করা হয়। কিছু দিনের মধ্যেই আব্দুল ওয়াহিদ জানায় ইসলামী ব্যাংক হইতে প্রাইম ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মিজানুর রহমান চৌধুরীর সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আমার নিজ নামে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করিয়াছি। ওয়াহিদ জানায় যে প্রাইম ব্যাংকের ম্যানেজার এর সঙ্গে আমার কথা হইয়াছে। সে আমাদেরকে ইসলামী ব্যাংকের বন্ধককৃত ভূমির পরিবর্তে একতা ট্রেডার্স এর নামে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেবে। তড়িগড়ি করে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করিয়া একতা ট্রেডার্সের নামে প্রাইম ব্যাংক হইতে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়। বিভু আচার্য্য একজন সু-পরিচিত ডিডরাইটার হিসাবে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের পাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করাইয়া আব্দুল ওয়াহিদ ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিজ দায়িত্বে রাখে। বিভু আচার্য্যরে সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে বিগত ৩০/১২/২০১২ইং তারিখে ও ০১/০১/২০১৩ইং তারিখে আব্দুল ওয়াহিদ ২৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু উক্ত টাকা ব্যবসার কাজে বিনিয়োগ না করিয়া সুচতুর ওয়াহিদ নিজ কাজে ব্যবহার করে। চালের দোকানে বেচাকেনা ও লেনদেন সঠিক ভাবে না হওয়ায় ৩ পার্টনারের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে নবীগঞ্জ প্রাইম ব্যাংকে যোগাযোগ করে দেখা যায় সি সি লোনের সমস্ত টাকা আব্দুল ওয়াহিদ উত্তোলন করিয়া নিয়ে গেছে। উক্ত টাকার যথাযথ হিসাব প্রদানের জন্য অপর পার্টনারগণ চাপ প্রয়োগ করিলে তাহার পিতা মুকিম আলী ও ভাই সহিদ মিয়া কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করিবে বলে আশ্বস্থ করেন এবং বিশ্বস্থতার জন্য ২৭/১০/২০১৩ইং তারিখে ৫০৫ নং বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক হবিগঞ্জের কার্যালয়ে হাজির হয়ে হলফনামা ঘোষণা করে ব্যাংকের সমুদয় টাকা পরিশোধ করিবে বলে অঙ্গীকার করে এবং ব্যবসায়ের মুল পুজিঁ ১৫ লক্ষ টাকা লাভসহ হিসাব বুজিয়ে দিবে। কিছুদিন যেতে না যেতেই দোকানে থাকা ১শত ৯৬ বস্তা চাউল পাহাড়াদারকে ভয়ভীতি দেখাইয়া রাতের আধারে ট্রাকে উঠাইয়া তাহার সঙ্গীয় লোকজন দিয়ে চুরি করিয়া নেয়। ঘটনার পরদিন অপর পার্টনারগণ দোকান হইতে সংবাদ পেয়ে ঘটনার সত্যতা দেখিয়া নবীগঞ্জ ধান-চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও গণমান্য আরও কিছু ব্যবসায়ীগনকে চুরির বিষয়টি অবহিত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ধান-চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী অভিযুক্ত আব্দুল ওয়াহিদকে তার বড় ভাই শহিদ মিয়ার উপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্থ করিয়া চোরাইকৃত চালের মূল্য ও ব্যবসার পুঁজি বাবদ ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অপর পার্টনারদ্বয় বিভু আচার্য্য ও মাছুম চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া ও ব্যাংক ঋনের সমুদয় টাকা পরিশোধ করার জন্য সিদ্ধান্ত দেন। এ সময় ওয়াহিদের বড় ভাই শহিদ মিয়া ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় ওয়াহিদকে চড় তাপ্পড় দেন। এরই প্রেক্ষিতে ৩শত টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্পের উপর মুরব্বিয়ানগণ ওয়াহিদের কাছ থেকে একখানা অঙ্গীকারনামা রাখেন। কিন্তু প্রতারক আব্দুল ওয়াহিদ সিদ্ধান্ত মোতাবেক টাকা পরিশোধ না করায় অপর পার্টনারগণ বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর চৌধুরীকে অবগত করেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্য্যালয়ে অভিযুক্ত ওয়াহিদ উপস্থিত না হওয়ায় বিষয়টি মিমাংসার জন্য নবীগঞ্জে বিশিষ্ট মুরব্বি সাহিদ মিয়া ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গফুর চৌধুরী ও পৌর কাউন্সিলর যুবরাজ গোপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উল্লেখিত ব্যক্তিগন দীর্ঘদিন চেষ্টা চালানোর পর উনাদেরকে টাকা দেবে বলে আশ্বস্থ করিয়া প্রতারক আব্দুল ওয়াহিদ নবীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিকট হইতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়া আত্ম গোপনে চলে যায়। বিচারকদের রায় অমান্য করায় সহজ সরল বিভু আচার্য্য নিরুপায় হয়ে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে পৃথক ৪ টি মামলা দায়ের করেন। যাহা বর্তমানে চলমান আছে। উল্লেখ্য প্রতারক আব্দুল ওয়াহিদের এ রকম কর্মকান্ডের জন্য তার উপর নবীগঞ্জের আরো কতিপয় ব্যক্তি প্রতারণা, জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছেন। সে জালিয়াতি করিয়া প্রাইম ব্যাংকে বন্ধককৃত ভূমি তাহার আপন চাচা গেদা মিয়ার নিকট রেজিষ্ট্রারী দলিলমূলে বিক্রি করিয়া ব্যাংকের সাথে প্রতারণা করিয়াছে। এছাড়া জনৈক সুজন রায়ের উপর আব্দুল ওয়াহিদ ও শহীদ মিয়ার দায়েরকৃত পঞ্চাশ লক্ষ টাকা চেক ডিজওনার মিথ্যা মামলা হইতে আদালত সুজন রায়কে বে-কসুর খালাস প্রদান করেন। আব্দুল ওয়াহিদ ও তার সঙ্গীয় লোকজনের অপকর্ম ঢাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করিয়া নিজে ও অন্য লোকজন দিয়ে আরো মিথ্যা মামলা করিয়া নিরীহ সংখ্যালঘু মনে করে বিভু আচার্য্যকে হয়রানী ও হেয় প্রতিপন্ন করার পথ বেছে নেয় এবং বিভু আচার্য্যকে গুম ও প্রাণে হত্যার ভয় দেখায়। এতে বিভু আচার্য্য ও তার পরিবারবর্গ চরম নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর