,

কাশ্মির ইস্যু ভারতীয় সংবিধানের এ্যাক্ট ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদ এবং জিপিকেএসসি প্রসঙ্গে ——-মতিয়ার চৌধুরী

আমার আজকের আলোচ্য বিষয় কাশ্মির ইস্যু এবং ভারতীয় সংবিধানের এ্যাক্ট ৩৭০ এবং অনুচ্ছেদ ৩৫-এ এবং জিপিকেএসসি নিয়ে। এবিষয়টি নিতান্তই ভারতের আভ্যন্তরীন। দক্ষিন এশিয়ায় ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত। এই গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানের এই দুটি ধারা নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা সমালোচনা। আর কেনইবা ভারতের মত একটি গণতান্ত্রিক দেশ স্বাধীনতার ৭০ বছর পর কাশ্মির ইস্যুতে এর পরিবর্তন আনল, আর এতে ভারতের চিরশত্রæ পাকিস্থানের মাথা ব্যাথার কারণ এবং এবং জিপিকেএসসি প্রসঙ্গে। ২০১৯সালের ৫ই আগষ্ট ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫- এ অনুচ্ছেদটি রহিত করে। আর ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারটি রহিত করায় এক বছরের ভেতর জম্মুকাশ্মির এবং লাদাখে বেশ পরিবর্তন এসেছে, সংবিধান থেকে এই দুটি ধারা বাতিলের পর থেকে কাশ্মিরে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিনিয়োগ বেড়েছে, বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা,স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় মহারাজার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এঅঞ্চলটি ভারতের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও জম্মুকাশ্মিরে ভারতের অন্যান্য রাজ্য বা বিদেশ থেকে কেউ গিয়ে সেখানে জমি কেনা, চাকুরী বা ব্যবসা বানিজ্যের কোন সুযোগ ছিলনা। এমনকি বাহিরের রাজ্যের লোকদের সাথে কাশ্মিরীদের বিবাহ শাদী ছিল নিষিদ্ধ। সংবিধান থেকে এই দুটি ধারা রহিত করার ফলে জম্মু কাশ্মিরের নাগরিকেরা ইচ্ছে করলে অন্যান্য রাজ্য বা বিদেশীদের সাথে বিবাহ বন্ধন সহ যেকোন ধরনের ব্যবসা বানিজ্য চালাতে পারবে। সেই সাথে দেশীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগ কারীদেরও কাশ্মিরে গিয়ে চাকুরী,ব্যবসা-বানিজ্য এবং জমি
কেনার সুযোগ উম্মুক্ত হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্যে বৈশম্য থাকতে পারেনা সকলের জন্যে সমান সুবিধা এবং সেখানকার নাগরিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ভারেতর কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মির ইস্যুতে সংবিধানের এই দুটি ধারা রহিত করে। এতে একবছরে ব্যবধানে জম্মু-কাশ্মিরের উন্নয়নের ছোয়া লাগতে শুরু করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেদেশের জনগন মনে করেন একটি স্বাধীন দেশে দু‘রকম
রীতি থাকতে পারেনা আর এনিয়ে কাশ্মির সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের নাগরিকরা সংবিধান থেকে এধারাটি রহিত করার
আবেদন জানিয়ে আসছিলেন যুগ যুগ ধরে। তারা মনে করেন কাশ্মিরি নাগরিকরা অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে ব্যবসা বানিজ্য ও চাকুরী সহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও অন্যান্য রাজ্যের নাগরিকরা কাশ্মিরে এসে চাকুরী বা বিনিয়োগ করতে পারবেনা, এটা হতে পারেনা। একটি স্বাধীন দেশে বৈশম্যমূলক আইন থাকতে পারেনা। কাশ্মিরী এবং ভারতীয় জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের এদুটি ধারা রহিত করে। জম্মু কাশ্মির ন্যাপ সহ কাশ্মিরের জনগন সরকারের এসিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পাকিস্থান সমর্থিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং বিচ্ছিহ্নতাবাদীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এতে সেখানে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থার। বিক্ষোভ এবং অচলাবস্থা দূর করতে ভারত সরকার সেখানে
কারফিউ জারি করে। জম্মু-কাশ্মিরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়। এখন অবশ্য সেখানে সবকিছু শান্ত- ফিরে এসেছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। এই বিষয়টিকে ভারতের চিরশত্রু পাকিস্থান মেনে নিতে পারছেনা। পাকিস্থান কাশ্মিরের বিচ্ছিহ্নতাবাদী গোষ্টীকে ইন্দন দেবার পাশাপশি পাকিস্থান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মির এবং জম্মু কাশ্মিরকে একত্র করে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনে নিতে পাকিস্তান সরকারের পৃষ্টপোষকতায় বিদেশে আজাদ কাশ্মিরের নাগরিকদের দ্বারা গঠন করেছে ‘‘গেøাবাল পাকিস্থান এন্ড কাশ্মির সুপ্রিম কাউন্সিল’’ (জিপিকেএসসি) নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি ইউরোপে উভয় কাশ্মিরকে একত্রিত করে পাকিস্থানের আদলে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টায় কাজ করছে। যদিও নাম ‘‘গেøাবাল পাকিস্থান এন্ড কাশ্মির সুপ্রিম কাউন্সিল’’, এই সংগঠনে জম্মু-কাশ্মিরের কোন সদস্য নেই সকলেই পাকিস্থান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরের এবং পাকিস্তানী নাগরিক। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট- চেয়ারম্যান সহ সকলেই পাকিস্থান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরী বংশদ্ভোত ব্রিটিশ পাকিস্থানী। এই সংগঠনের ব্যানারে লন্ডন সহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রায়ই স্বাধীন কাশ্মিরের দাবীতে সভা-সমাবেশ ও সেমিনার করতে দেখা য়ায়। আর এদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করছে পাকিস্থান সরকার। ‘‘গ্লোবাল পাকিস্তান এন্ড কাশ্মির সুপ্রিম কাউন্সিরেল’’ (জিপিকেএসসি) ব্যানারে কাশ্মিরী পতাকা নিয়ে লন্ডনের প্রতিটি সমাবেশ এবং সেমিনারে আজাদ কাশ্মির এবং বৃটেনে বসবাসরত পাকিস্থানী নাগরিকদের দেখা যায়। আর এই সংগঠনটি ভারতীয় সংবিধানের এই দুটি ধারা পূনবহালের দাবী জানিয়ে দিনটিকে কালো দিবস আখ্যায়িত করে ৫ আগষ্ট সমাবেশের ডাক দিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব মনে করে এটি ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়, এতে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়। লন্ডনে বসবারত জম্মু কাশ্মিরের অধিবাসীরা এবং রাজনৈতিক সংগঠন জে-কে-ন্যাপ ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়ে পাকিস্তানকে বার বার সতর্ক করে আসছে। গেল বছর পাকিস্থানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডন সফরে আসলে জম্মু-কাশ্মির ন্যাপ তাকে কাল পতাকা প্রদর্শ করেছে এবং ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়ে পাকিস্থানের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানায় সেই সাথে পাকিস্থান বিরোধী শ্লোগান দেয়। জেকে ন্যাপ নেত্রী সামিনা রাজা বলেন আমরা মহারাজা নির্দেশিত কাশ্মিরে বিশ্বাসী -জম্মু কাশ্মিরের মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেবে। এতে পাকিস্তানের নাগ গলানো উচিত নয়। তিনি বলেন পাকিস্তানের পৃষ্টপোষকতায় পাকিস্তানী জঙ্গিরা কাশ্মিরের প্রবেশ করে বিভিন্ন সময় অপকর্ম চালায়। কাশ্মিরের মানুষ শান্তি এবং স্যাকুলারিজমে বিশ্বাসী। পাকিস্তান যেন তাদের আভ্যন্তরিন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশের ধর্মীয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আজাদ কাশ্মির এবং পাকিস্তানীদের সাথে কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবীতে মিছিল সমাবেশে দেখা যায়। প্রায়ই পাকিস্তানী জঙ্গিরা কাশ্মিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জঙ্গি তৎপরতা চালায় এপর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর হাতে শতাধিক পাকিস্তানী জঙ্গি আটক হয়েছে, এই জঙ্গিদের সকলেই আজাদ কাশ্মিরের নাগরিক। ভারত সব সময়ই বলে আসছে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতায় জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করে নাশকতা চালিয়ে আসছে।


     এই বিভাগের আরো খবর