,

মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত: ডিগ্রি-মাস্টার্স পরীক্ষা নিতে পারবে কওমি মাদরাসা

সময় ডেস্ক ॥ করোনা মহামারির কারণে আটকে থাকা ডিগ্রি ও মাস্টার্স পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো নিতে পারবে কওমি মাদরাসা। মাদরাসাগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এইচএসসি এবং অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয় জোরালো চিন্তা-ভাবনা করলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো সময় আসেনি। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় থেকে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রীরা অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কওমি মাদরাসা উপরের লেভেলের পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য আপিল করেছিল। সরকার সে ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। আদেশ জারি হয়ে যাবে। ওদের পরীক্ষাগুলো হবে ডিগ্রি ও মাস্টার্স লেভেলের। তবে জেনারেল কওমি মাদরাসা খুলবে না। ওই (কিতাব বিভাগ খোলা) বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘তবে সরকার কিছু কন্ডিশন দিয়ে দিয়েছে, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারপর করতে হবে। কবে থেকে পরীক্ষা নিতে পরবে সেটি তাদের বিষয়। তবে সুবিধা মতো সময় নেবে।’ ‘গত ১৭ আগস্ট কিতাব বিভাগের কার্যক্রম চালু ও পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছিল কওমি মাদরাসাগুলো। ওইদিন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদনপত্রটি পৌঁছে দেন কওমি মাদরাসার একটি বোর্ড জাতীয় দ্বিনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্থগিত থাকা এইচএসসি পরীক্ষা এবং আসন্ন জেএসসি- জেডিসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচনা করছে। তারা দেখে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত দেবে। তবে স্কুল, কলেজ এখনও খোলার মতো সময় আসছে বলে মনে হচ্ছে না। কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিন্তাভাবনা করছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে সংসদ টিভি এবং বেতারে ক্লাস পরিচালনা ছাড়াও অনলাইনে পাঠদানের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইভি রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর স্মরণ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভ রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মীকে স্মরণ করেন। বিশেষ করে গ্রেনেড হামলায় নিহত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভী রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক আন্দোলনে-সংগ্রামে মাঠে থাকতেন। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে বসে থাকতেন তিনি। তার মধ্যে কোনো অহমিকা ছিল না। এতো ভালো মনের মানুষের এমন বীভৎস মৃত্যু, সত্যিই বেদনার।’ সোমবার প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। ২৪ অগস্ট আইভি রহমানের ১৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আইভী রহমান রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা একসঙ্গে অনেক রাজনীতি করেছি। খুব আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএইচে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ অগস্ট তাকে মৃত ঘোষণা করে। এইদিনে তার মৃত্যুদিবস পালন করা হয়।’ তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে চার জনই ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। দুইজনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের লাশও কেউ নিতে আসেনি। তারা সন্দেহজনক হামলাকারী হতে পারে অথবা অন্য কেউও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, গ্রেনেড হামলায় আমাদের দলের ২২জন নেতাকর্মী হারিয়েছি। আরও প্রায় ছয়-সাতশ নেতাকর্মী আহত হয়। অনেকে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে পরে আবার মারা গেছেন। শরীরের ভেতরে অনেক স্পিলিন্টার নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন। এছাড়াও বৈঠকে ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন, ২০২০ খসড়া নীতিগত অনুমোদন, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন ও ‘দ্য বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন অর্ডার, ১৯৭৩’ সংশোধণক্রমে প্রণীত ‘দ্য বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন অর্ডার’ (সংশোধন) এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘দ্য বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (সংশোধন) অর্ডার, ১৯৭৩’ অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এখন তা কম। এর ফলে এর পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি অনেক কাজ করা যাবে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গের অপরাধের জন্য শাস্তি-জরিমানাও বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো আইনের সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেগুলো নতুন আইন না করে সংশোধন আকারে হবে। ওই সময়ে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা কেমন ছিল, সেটা বোঝার জন্যই এটি করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর