,

নবীগঞ্জে কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন, ভরা মৌসুমেও কামারের দোকানে নেই ব্যস্ততা

আলী হাছান লিটন ॥ নবীগঞ্জে কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন ভরা মৌসুমে ও কামারের দোকানে নেই ব্যস্ততা। নবীগঞ্জে বাজারে কামারের দোকানে আগে টুংটাং শব্দে কাজ চলতো। এখন চাষাবাদে ব্যবহার হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি। মাটি কাটার যন্ত্র কোদাল ও কাঁচি বানাতে একসময় মানুষ কামারের দোকানে ভীড় করতেন। কিন্তু এখন আর কাঁচি কোদাল বানাতে কামারের দোকানে মানুষের ভীড় দেখা যায় না। চাষাবাদে কামারের বানানো যন্ত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে এবং ক্রেতার অভাবসহ নানা সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে নবীগঞ্জের কামারের দোকানগুলো। চাষীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে উন্নত প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কামার শিল্পের চাহিদাও অনেকটাই কমে এসেছে। দেশের ঐতিহ্য বহন করে এই কামার শিল্প। কামার শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবীগঞ্জের কামাররা কেউ কাজ করছে আবার কেউবা রয়েছে বসে। কাজের অভাবে অলসতায় কাটছে তাদের দিন। বর্তমানে কৃষকরা সল্প সময়ে জমি চাষাবাদ করতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে আসছেন। ফলে চাষাবাদের জন্য আর তৈরি হচ্ছে না লাঙ্গল। কামারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা এই শিল্প ছেড়ে বিভিন্ন কাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবীকা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী এই কামার শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। লোহা সব সময় পাওয়া যায়। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না ভালো মানের কয়লা। এছাড়া কামার শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কয়লা। এই কয়লা ছাড়া কামার শিল্প চিন্তাই করা যায় না। আগে গরাণ, সুন্দরী, বাবলা, বাইন কাঠের কয়লা পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় মেহগনি, আম, সিরিজ কাঠের কয়লা। এই কয়লা পরিমাণে লাগে বেশি। কয়লা ভালো না হলে লোহা তাড়াতাড়ি গরম হয় না। ফলে একটা জিনিস তৈরি করতে সময়ও লাগে অনেক। তাই এই কামারের দোকানে ব্যস্থতা কমছে দিন দিন। নবীগঞ্জ এলাকার কর্মকার সুকুমার রায় বলেন, “কামার শিল্পের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত আছি। বাপ-দাদার পেশা। লাভ না হলেও ধরে রেখেছি। ছোটবেলা থেকে আমি বাবার সাথে কাজ করতাম। এমন কোন দিন ছিল না যে বাবা চারটি লাঙ্গল আর ১০টি কাঁচি বানাতো না। একটি নিন্মবিত্ত পরিবার থেকে রাষ্ট্রের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত সবার ঘরে ঘরে রয়েছে এই কামার শিল্পের যন্ত্রপাতি। এই কাজে কমপক্ষে দুইজন লোক লাগে। কিন্তু বর্তমানে এই পেশায় কেউ আসে না। আগে আমাদের হাতের তৈরীর যন্ত্রে জমি চাষাবাদ হতো। তাই লাঙ্গলের ব্যবহার ছিল। লাঙ্গল তৈরির কাজও করতাম। কিন্তু এখন চাষ কমে যাওয়ায় লাঙ্গলসহ এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমেছে। মানুষ উন্নত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, “আগে গরুর গাড়ি তৈরি হত। কিন্তু এখন আর লাগে না। তাই গরুর গাড়িও তৈরি হয় না। আগে জমিতে আমন বা বোরো ধান হতো। তখন কাস্তে, কোদাল, কাঁচির ব্যবহার হতো বেশি। কিন্তু এখন আর আমন ধান আগের মতো চাষ হয় না। তাই এসব যন্ত্রপাতিও এখন আর তৈরি হয় না। এখন বেশি তৈরি করি বটি, কোদাল, দা, খোন্তা, কর্ণিক, বাইশ, ছেনি, ছোট কুড়াল, ডাইস ও কাস্তে। কিন্তু আগের মতো এখন এ শিল্পে লাভ হয় না। নবীগঞ্জ এলাকার কর্মকার চান্দ্র দে বলেন, “কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন। বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়। এখন কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে রাজমিস্ত্রির সরঞ্জাম তৈরি করা হয় বেশি। তবে কয়লা সমস্যার কারণে এখন ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। এখন কয়লাগুলো শহরের শহর থেকে প্রতি বস্তা পাঁচ’শ টাকায় কিনি। আগে এক বস্তা কয়লায় দুই দিন চলতো কিন্তু এখন যায় এক মাস। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। আগে প্রতিদিন প্রায় একশটির মতো কাস্তে তৈরি করতাম কিন্তু এখন ১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে কোদাল ও রাজমিস্ত্রির উন্নত যন্ত্রপাতি আসছে আমাদের এখানে। তাই কামার শিল্পের কদর কমেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর