,

হবিগঞ্জে ১০ দিনে ধর্ষনের শিকার ৬ নারী

৪ মামলায় দশের অধিক আসামী হলেও গ্রেফতার ৪

জাবেদ ইকবাল তালুকদার : দেশে গত কয়েকদিন ধরে বেড়ে চলেছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে গণধর্ষণ এবং নোয়াখালির বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে অমানসিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে দেশে। শুধু এসবই নয় গত কয়েকদিনে আরো অনেক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার স্বাক্ষী এই দেশবাসী। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সারাদেশেই চলেছে এর ঘোর প্রতিবাদ। হবিগঞ্জেও ঘটেছে মা-মেয়েকে গণধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ওই প্রতিবেদনে হবিগঞ্জ জেলার সকল থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের জেলার সর্বশেষ গত ১০ দিনের ধর্ষণের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হল। সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলার ৯টি থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য হল সারা জেলায় ধর্ষণ নিয়ে থানাগুলোতে ৪টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ গুলোর মধ্যে সত্য মিথ্যার মিশ্রনও থাকতে পারে।

হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ মাসুক আলীর সাথে ফোনালাপে ধর্ষণের ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন- এই মাসে আমাদের থানায় এখন পর্যন্ত ধর্ষণের ১টি মামলা হয়েছে। মামলার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জনৈক এক ছেলের সাথে একই উপজেলার মাদ্রাসা পড়ুয়া এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ওই ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে প্রেমিক। সম্প্রতি ওই ছাত্রী বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিক অনীহা প্রকাশ করে। এরপর প্রেমিককে একমাত্র আসামি করে গত (৬ অক্টোবর) গত মঙ্গলবার বিকেলে সদর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন ওই মাদ্রাসা ছাত্রী। মামলার পর থেকেই প্রেমিক পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমানের সাথে সাথে ফোনালাপে ধর্ষণের ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন- ওই মাসে এ পর্যন্ত আমাদের থানায় ধর্ষণের ১টি মামলা হয়েছে এবং ধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং লোকমূখে প্রচার হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। মামলার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১ম মামলার বাদী একজন যৌনকর্মী ছিল। তার সাথে ২ হাজার টাকায় ৪ জনের যৌনকর্ম করার চুক্তি হয়েছিল কিন্তু তারা ৪ জনের চুক্তিতে ৬ জনে কাজ করে এবং কোন টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায় তাই বাদী নাটকীয়ভাবে ধর্ষণ মামলা সাজিয়েছিল বলে এখন পর্যন্ত তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত কাজ শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে। এ মামলার ১ আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টে পাঠানো হয়েছে এবং বাকি আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোসাররফ তরফদার এর সাথে ফোনালাপে ধর্ষণের ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন- এই মাসে এখন পর্যন্ত তাদের থানায় ধর্ষণের ১টি মামলা হয়েছে মামলায় একজন আসামী ছিল আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) চম্পক ধামের সাথে ফোনালাপে ধর্ষণের ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন এই মাসে এখন পর্যন্ত তাদের থানায় ধর্ষণের ১টি মামলা হয়েছে। মামলার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি মা-মেয়েকে ধর্ষণের মামলা। ওই ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং ওই দুই আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
মাধবপুর, বানিয়াচং, বাহুবল, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ থানা গুলিতে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান এই মাসে এখন পর্যন্ত তাদের থানায় ধর্ষণের কোন অভিযোগ আসে নাই।
জেলার তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যায় এ প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরী করা পর্যন্ত সারা জেলায় সর্বশেষ ১০ দিনে ৬ জন নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১০ দিনে ৬ জন নারী ধর্ষিত হলে দেখা যায় প্রতি ২ দিনেরও কম সময়ে জেলায় একজন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। জেলায় ৪টি ধর্ষণ মামলায় ১০ এর অধিক আসামী হলেও মাত্র ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণ রোধ করতে প্রশাসন তাদের চেস্টা করে গেলেও আমাদের নিজেরা সতর্ক না থাকলে ধর্ষণ রোধ করা অসম্ভব। আমাদের সতর্কতা এবং প্রশাসনের সক্রিয় কাজের মাধ্যমেই ধর্ষণ রোধ করা যেতে পারে।


     এই বিভাগের আরো খবর