,

ইসলামী দলগুলোর ৬ দফা দাবি, উত্তাল বায়তুল মোকাররম

সময় ডেস্ক ॥ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে সমমনা ইসলামী দলসমূহ। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মসজিদ এলাকা। গতকার জুমার নামাজের পর পূর্বঘোষিত কর্মসুচি অনুযায়ী ধর্ষণ ও জিনা-ব্যভিচার প্রতিরোধে ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এ সময় একাত্তর টেলিভিশন বর্জনে নানা শ্লোগান দেয়া হয়। ৬টি দলের ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে মিছিলটি বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। তাদের বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। নামাজের আগে থেকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে মিছিল ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সমাবেশে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব এবং সমমনা ইসলামী দলসমুহের সমন্বয়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ধর্ষণ-নির্যাতন বন্ধে শুধু আইন করলেই হবে না আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। জিনা, ব্যভিচার, ধর্ষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশে একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবাই দিশেহারা। অন্যদিকে মা-বোনদের ইজ্জত আব্রু লুন্ঠিত হচ্ছে। হায়েনার মতো নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, হত্যা নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণের উৎস পশ্চিমা নগ্নতা, বেহায়াপনা বন্ধ না হলে ধর্ষণ বন্ধ হবে না। পশ্চিমা সংস্কৃতির কারণে সমাজ থেকে লজ্জা, শরম উঠে যাচ্ছে। অপসংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। আমাদের শিক্ষা নীতি ও পাঠ্য সূচিকে কোরআন সুন্নাহর আলোকে সাজাতে হবে। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার যদি দেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধ করতে না পারে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। সরকার নানাভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সকল দলের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান কাসেমী। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, দেশে একের পর এক অপকর্মের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সরকার নানা কথা বলে ইস্যুকে ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, হয় আপনারা দেশ ভালো করে চালান। নইলে পদত্যাগ করুন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে যখনই ক্রান্তিকাল এসেছে তখন আলেম ওলামারা বসে থাকেনি। এখনও থাকবে না। সরকার অপকর্মকারীদের দমন না করলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাও: আব্দুর রব ইউসুফী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাও: মজিবুর রহমান হামিদী ও মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ। সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- জিনা, ব্যাভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে জনসম্মুখে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; পর্ণোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রাপ্তি ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; নারীর অশ্লীল উপস্থাপনা ও পণ্য হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা; আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং বিচার কাজকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখা এবং নারীর মর্যাদা এবং অধিকার সংরক্ষণে কুরআন-হাদিসের শিক্ষাসমূহ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা। এদিকে প্রায় একই সময় বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ কর্মসুচির অংশ হিসেবে বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, দেশে আইন থাকলেও আইনের বাস্তবায়ন নেই। তাই শুধু আইন পাশ নয়, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। শুধু ধর্ষণের মৃত্যুদণ্ড নয়, যিনা-ব্যভিচার রোধেও আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। তিনি ইসলামী আইনে জিনা-ব্যাভিচার, পরকীয়ার বিচারের দাবিতে ২৩শে অক্টোবর ঢাকায় বিশাল সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাও: মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সভাপতিত্বে সমাবেশে এ সময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাও: গাজী আতাউর রহমান, মাও: আহমদ আবদুল কাইয়ূম ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাও: শেখ ফজলে বারী মাসউদ। ইসলামী দলসমূহের মিছিলের ব্যাপারে মতিঝিল জোনের পুলিশের এসি জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, মিছিলকে পল্টন এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। পোশাকে ছাড়াও গোটা এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ছিল।


     এই বিভাগের আরো খবর