,

রোজা যেভাবে রাখবেন

সময় ডেস্ক ॥ রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত আবশ্যক। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য নয়। রাসুল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল, আর প্রতিটি ব্যক্তিই যা নিয়ত করে তাই সে পায়।’ (বুখারি) নিয়ত ছাড়া সারাদিন না খেয়ে থাকলেও রোজা আদায় হবে না। অবশ্য মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়। বরং অন্তরে রোজার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোজার উদ্দেশে সেহরি খেলেই রোজার নিয়ত হয়ে যায়। (আদ দুররুল মুখতার: ৩/৩৪১) নিয়ত কখন করবেন: রমজানের রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা ও নফল রোজার নিয়ত রাতেই করে নেয়া উত্তম। তবে ভুলে গেলে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার (দুপুরের) এক-দেড় ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় তা করে নিতে পারবে। শর্ত হলো, এসময়ের মধ্যে কিছু না খেয়ে থাকতে হবে এবং রোজা ভাঙার অন্যান্য কোনো কারণও না থাকতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৭, আদ দুররুল মুখতার : ৩/৩৩৮) হজরত সালমা ইবনে আকওয়া রা: থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা: এক ব্যক্তিকে আশুরার দিন লোকদের মাঝে এ ঘোষণা করার জন্য পাঠান যে, যে ব্যক্তি খেয়েছে, সে যেন রোজা পূর্ণ করে। আর যে খায়নি, সে যেন না খায়। (বুখারি : ২/৬৭৯) এই হাদিসে যে ব্যক্তি দুপুর পর্যন্ত খায়নি তাকে নিয়ত করে রোজা রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। যদ্বারা বুঝা যায় যেÑ দুপুরের পূর্বে রোজার নিয়ত করা যায়। হাদিসের এই হুকুম সুন্নত রোজার ক্ষেত্রে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনের রোজাকেও এর উপর কিয়াস করা হবে।
তবে অন্যান্য রোজা যথাÑ কাযা রোজা, অনির্দিষ্ট মানতের রোজা ও কাফ্ফারার রোজার নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। অন্যথায় রোজা শুদ্ধ হবে না। আরবি ভাষায় রোজার নিয়ত : আরবি ভাষায় রমজানের রোজার নিয়ত হলোÑ ‘নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্কাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।’ অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রমজানের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত। অথবা, ‘নাওয়াইতু আন আছুমা লিল্লাহি তাআলা’ তথা ‘আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখার নিয়ত করছি।’ এটুকু বললেও নিয়ত হয়ে যাবে।’
রোজা যে কারণে ভাঙে :
এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো রোজাবস্থায় করার কারণে রোজা ভেঙে যায়। আবার এমনও কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করার দ্বারা রোজা ভাঙে না। কিন্তু অনেকেই মনে করেন এসব করার কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই খাওয়া-দাওয়া করে ফেলে। ফলে তার রোজা ভেঙে যায়। এবং কাযা ওয়াজিব হয়। আবার কিছু কাজ আছে যেগুলো করলে রোজা ভাঙে না তবে মাকরুহ হয়। জেনে নেয়া যাক কী কারণে রোজা ভাঙে, কী কারণে ভাঙে না। আর কী কারণে মাকরুহ হয়। যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় ১. নাক বা কানে ওষুধ প্রবেশ করানো। ২. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করা। ৩. কুলি করার সময় গলার মধ্যে পানি চলে যাওয়া। ৪. নারী স্পর্শ বা এসংক্রান্ত কোনো কারণে বীর্য বের হওয়া। ৫. খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য নয়, এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা। ৬. আগরবাতির ধোঁয়া ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করানো। ৭. বিড়ি-সিগারেট পান করা। ৮. ভুলে খেয়ে ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাওয়া। ৯. সুবেহ সাদিকের পর খাবার খাওয়া। ১০. বুঝে হোক বা না বুঝে, সূর্য ডোবার আগে ইফতার করা। ১১. ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করা।
যেসব কারণে রোজা ভাঙে না :
১. মিসওয়াক করা। ২. মাথায় বা শরীরে তেল লাগানো। ৩. চোখে ওষুধ বা সুরমা লাগানে। ৪. গরমের কারণে পিপাসায় গোসল করা। ৫. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৬. ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া। ৭. ভুলে পানাহার করা। ৮. ইচ্ছা ছাড়াই ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা। ৯. কানে পানি প্রবেশ করা। ১০. দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হওয়া।
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় বিনা কারণে জিনিস চিবিয়ে বা লবণ কিংবা কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা। যেমনÑ টুথপেস্ট, মাজন, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজা। ২. গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন গোসল না করে থাকা। ৩. শরীরের কোথাও শিঙা ব্যবহার করা বা রক্ত দান করা। ৪. পরনিন্দা করা। ৫. ঝগড়া করা। ৬. রোজাদার নারী ঠোঁটে রঙিন কোনো বস্তু লাগানো, যা মুখের ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৭. রোজা অবস্থায় দাঁত ওঠানো বা দাঁতে ওষুধ ব্যবহার করা; তবে একান্ত প্রয়োজনে তা জায়েজ।
বমি করলে রোজা ভাঙবে কি? :
রোজা অবস্থায় যদি কারও স্বাভাবিক বমি হয়Ñ যা মানুষকে পেয়ে বসে এবং মানুষ তা ঠেকাতে সক্ষম হয় নয়, সেই বমিতে রোজা ভাঙবে না। অবশ্য এক ছোলা পরিমাণ বমি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পেটের ভেতর চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। সে রোজার কাযা আদায় করা ওয়াজিব। আর কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করে (মুখে আঙুল দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে) তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। চাই পেটের ভেতর কিছু যাক বা না যাক। রাসুল সা. বলেছেনÑ ‘যাকে বমি পেয়ে বসেছে তার জন্য কোনো কাযা নেই, কিন্তু যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে সে যেন কাযা করে’। (তিরমিজি, আবু দাউদ)। অন্য হাদিসে আবু দারদা রা: বলেনÑ ‘নবী সা: বমি করলেন, অতঃপর রোজা ভাঙলেন ও ওজু করলেন।’ [তিরমিজি, আবু দাউদ] শেষের হাদিসটিতে ইচ্ছাকৃত বমির কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, মুখ ভরে বমি না হলে রোজা নষ্ট হবে না (আহছানুল ফাতাওয়া)।


     এই বিভাগের আরো খবর