,

নবীগঞ্জে এক অসহায় পরিবারের সংসার চলে অন্ধ ছেলের উপারর্জনের টাকা দিয়ে

অঞ্জন রায় ॥ নবীগঞ্জে এক অসহায় পরিবারের জীবন চলে অন্ধ ছেলের গানের টাকা দিয়ে। দারিদ্রতার আষ্টেপৃষ্টে বাধাঁ তাদের জীবন মান। পরিবারটি হলো নবীগঞ্জ উপজেলার ১নং পশ্চিম বড় ভাকৈর ইউনিয়নের ফতেহপুর লামাহাটি গ্রামের বাসিন্দা নরেন্দ্র বৈষ্ণব। তার ২ ছেলে ২ মেয়ে। বড় মেয়ে’কে ধারদেনা করে অতিকষ্টে বিয়ে দেয়া হয়। ২য় ছেলে বিশ্বজিৎ বৈষ্ণব (২৪) ও ছোট ছেলে বিধুর বৈষ্ণব (১২) জন্মগত ভাবে অন্ধ। জন্মের পর পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে পায়নি। ছোট মেয়েকে ও ধারদেনা করে বিয়ে দেয়া হয়। পরিবারের কর্তা নরেন্দ্র বৈষ্ণব হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। অনাহারে অর্ধাহারে চলে তাদের সংসার। এমন করুন দশায় পরিবারের হাল ধরেন অন্ধ ছেলে বিশ্বজিৎ বৈষ্ণব। সে মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে হয়ে উঠেন বাউল শিল্পী। এক সময় এই অন্ধ বিশ্বজিৎ বাউল শিল্পী আব্দুস ছালামের সাথে যোগাযোগ করে কিছু তালিম নেন। নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন গান ও বেহালা। অন্ধ ছোট ভাই বিধুর বৈষ্ণব নিজে নিজে ঢোল বাজানো শিখে পেলেন। এক পর্যায়ে দুই অন্ধ ছেলে পরিবারের হাল ধরেন। বাবার চিকিৎসা, পরিবারের সবার মুখে এক মুঠো ভাত যোগাড় করতে বেড়িয়ে পরেন পাড়া মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, হাট বাজারে। জমিয়ে তোলেন গানের আসর। অন্ধ এই বাউল শিল্পীর গানে মুগ্ধ হয়ে উপস্থিত লোকজন যা দেন তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। ছোট ভাই অন্ধ বিধুর বৈষ্ণব ঢোল বাজিয়ে, অসুস্থ বাবা নরেন্দ্র বৈষ্ণব মন্দিরা বাজিয়ে সহযোগিতা করেন। এ সময় তাদের বৃদ্ধা মা মুক্তা রানী বৈষ্ণবও বিভিন্ন ভাবে ছেলেকে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেন। দৈনিক গান গিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করেন তারা। যাতায়াত খরচ বাদে যা তাকে তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। গতকাল বুধবার দুপুরে নবীগঞ্জ শহরে লোকজনের ভীড় দেখে এগিয়ে গেলে এমন দৃশ্য চোখেঁ পড়ে। গানের বিরতিতে কথা হয় তাদের সাথে। এ সময় তার সাথে কথা বলতে গেলে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অন্ধ বিশ্বজিৎ। সে জানায়, সংসারের আহার জুটাতে এবং বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ইচ্ছা করলে ভিক্ষায় নামতে পারতেন তারা। কিন্তু ভিক্ষা করা তাদের পছন্দ নয়। তাই মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে এবং ওস্তাদ বাউল ছালামের কাছে তালিম নিয়ে সে নিজেকে একজন বাউল শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলেন। মাঝে মধ্যে লোকজন আদর করে তাদেরকে বিভিন্ন ষ্টেইজ প্রোগামে নেন। সেখানে হাজার খানেক টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের দুই ভাইকে প্রতিবন্ধি ভাতা দিয়েছেন। তার ভবিষ্যত স্বপ্ন হলো একজন পরিপূর্ণ বাউল শিল্পী হওয়া। বিশ্বজিৎ বলে, তার এই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। দারিদ্রতার আষ্টেপৃষ্টে বাধাঁ। তাই তার দাবী ও অনুরোধ বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্টান ইত্যাদিতে তাদের পরিবারের এই করুন পরিনতির কথা তোলে ধরলে দেশবাসীর কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে। এছাড়াও সরকারের নিকটও তাদের পরিবারের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর