,

এমসি ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: আজ চার্জশিট দাখিল

সময় ডেস্ক ॥ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার মামলায় দুই মাসেরও বেশি সময় পর চার্জশিট প্রদান করতে যাচ্ছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের। এদিকে, চার্জশিট দাখিলের প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংও করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মামলার আসামিদের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন না পাওয়ায় চার্জশিট দাখিলে বিলম্ব হচ্ছে। সেই প্রতিবেদন গত রবিবার হাতে পায় পুলিশ। ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের সাথে মামলার আসামিদের শনাক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যারাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৫)। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে জোরপূর্বক ওই তরুণী ও তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণ করা হয় তরুণীকে। ওই রাতেই তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। পরে ধর্ষণবিরোধী আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান সংযুক্ত করে সরকার। এদিকে, মামলার পর
গেল ১ ও ৩ অক্টোবর সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান ওরফে রাজন ও আইনুদ্দিন নামের আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এরা সবাই এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠায় পুলিশ। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন এসে পৌঁছেছে সিলেটে।
এদিকে, গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেককে পর্যায়ক্রমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তন্মধ্যে সাইফুর, তারেক, রনি ও অর্জুন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। ধর্ষণে সহায়তার কথা স্বীকার করেন রবিউল ও মাহফুজুর। অন্য দুজনও স্বীকারোক্তি দেন। পুলিশ ছাত্রাবাসে সাইফুরের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা হয়।
ঘটনার ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে তিন দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ থাকার কথা। অথচ ছাত্রাবাস খোলা থাকা ও সেখানে ন্যক্করজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে আহবায়ক করে ২৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। তবে সেটি প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় ১ অক্টোবর। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক গোলাম রাব্বানীকে দিয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ কার্যদিবসে কমিটি জমা দেয় প্রতিবেদন।
গণধর্ষণের ঘটনায বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ১৯ অক্টোবর ১৭৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ওই বেঞ্চে দাখির করা হয়। এসব তদন্ত কমিটির কোনোটির প্রতিবেদনই প্রকাশ করা হয়নি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ১২ অক্টোবর সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করে।


     এই বিভাগের আরো খবর