,

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ হাইকোর্টের

সময় ডেস্ক ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুরকারী অপরাধী ও ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সকল ভাস্কর্য রক্ষায় নিরাপত্তা চেয়ে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এবং এসব বিষয়ে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বায়তুল মোকারম মসজিদের খতিবকে তাদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভাংচুরকারী ও উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব, পুলিশের আইজি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট শাখায় রিট দাখিল করেন আইনজীবী উত্তম লাহেরি। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক ও নাহিদ সুলতানা যুথী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
এমনই একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবে এবং ওই বুড়িগঙ্গায় ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলবেন। একইদিন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম একটি অনুষ্ঠানে মামুনুল হকের সুরেই কথা বলেন।
ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতাকারীদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এই গোষ্ঠীর পেছনে বিদেশি মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমালোচনা করেন।
এদিকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও চরমোনাই পীরের ছেলে সৈয়দ ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে সোমবার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


     এই বিভাগের আরো খবর