,

স্ত্রী ও সন্তানকে না পাওয়ায় ক্ষোভে যুবকের আত্মহত্যা

হবিগঞ্জে মামলায় হেরে তীব্র অভিমানী হয়ে যান হাফিজুর

জুয়েল চৌধুরী : মামলা করেও স্ত্রী ও সন্তানকে না পাওয়ার ক্ষোভে আদালত চত্বরে এক যুবক ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করেছে। মামলায় হেরে গিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি নিজের বুকে ছুরি চালান। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত যুবকের নাম হাফিজুর রহমান (৩০)। তিনি শহরের কামড়াপুর গ্রামের বাসিন্দা নূর মিয়ার ছেলে বর্তমানে তিনি সুলতান মাহমুদপুরে নানার বাড়ি বসবাস করছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ৪ বছর আগে হাফিজের সাথে বানিয়াচং উপজেলার কুর্শা খাগাউড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের মেয়ে বুশরা বেগমকে (২৫) এর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তারা  এফিডেভিট করে বিয়ে করে। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। যার নাম নিহাল আহমেদ। এক সময় তাদের মধ্যে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে মনোমালিন্যতা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বুশরা বাবার বাড়ি চলে যান। হাফিজ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিকবার শশুর বাড়ি যায়। কিন্তু শশুর বাড়ির লোকজন এতো নিষ্ঠুর তার সাথে দেবেতো দুরের কথা এমনকি দেখা পর্যন্ত করতে দেয় না। সামাজিকভাবে বিচার না পেয়ে নিরূপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেন। সেই মতে গত অক্টোবর মাসে হাফিজ বাদি হয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতের বিচারক আফিয়া আমিন বাপ্পার আদালতে স্ত্রী-সন্তানকে পাওয়ার জন্য মামলা করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে স্ত্রী ও শাশুড়ি খোদেজা বেগমকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। গতকাল গতকাল সোমবার এ মামলায় রায়ের দিন ছিল। এদিন আদালতে হাজির হয়ে বুশরা জানান, তিনি স্বামীর ঘর করবেন না। তিনি তার মায়ের সাথে এসেছেন এবং মা খোদেজার সাথে যেতে চান। আদালত বুশরার জবানবন্দি শেষে তার সন্তানসহ মায়ের জিম্মায় যাওয়ার আদেশ দেন। মামলার শুনানী শেষে সকলেই বেরিয়ে এলে রাগে ও ক্ষোভে অভিমানে হাফিজুর আদালত চত্বরেই নিজের বুকে উপর্যুপুরি ছুরি চালান। এতে তিনি গুরুতর জখম হলে স্থানীয় লোকজন তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে তার স্বজনরা বিষয়টি বুঝতে না পেরে লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে হট্টগোল শুরু হয়। বাদি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট ইউসুফ আলী সবুজ, বুশরার পক্ষে ছিলেন আব্দুল গণি। খবর পেয়ে সদর থানার ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ, এসআই সাহিদ মিয়া, আব্দুর রহিম ও আবু নাইম ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বাক্ষ্য নিয়ে ঘটনাস্থলে একটি টেবিলের নিচ থেকে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেন। এদিকে হাসপাতালে গিয়ে লাশ না পেয়ে তারা খুঁজতে থাকেন। কেউ বলে মারা গেছে, কেউ বলে সিলেট রেফার্ড করা হয়েছে। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় তার বাড়িতে লাশ নেয়া হয়েছে। দৌস মোহাম্মদসহ একদল পুলিশ সুলতান মাহমুদপুরে তার নানার বাড়ি গিয়ে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ওসি মাসুক আলী জানান, ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর