,

নবীগঞ্জ পৌরসভায় প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগীতা ॥ নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

মোঃ মুহাহিদ চৌধুরী ॥ নবীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ‘ফ্রি স্টাইলে’ চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা। গণসংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টারিং কিংবা মাইকিং সকল ক্ষেত্রেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্টরা যেন এক রকম নির্বিকার। গণসংযোগ চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে একাধিক প্রার্থীকে অর্থদন্ড করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না আচরণবিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব। যদিও এসব দেখার জন্য তিন জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে রয়েছেন তবুও দিন দিন আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে প্রার্থীদের দাবি তারা আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
এভাবে চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল। এছাড়াও মৌখিক অভিযোগ করেছেন একাধিক সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তেমন কোনো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যপারটি থামছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবশ্রী দাস পার্লি বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালন ভালোভাবেই হচ্ছে। তবুও কিছু জায়গায় লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আচরণবিধি কঠোরভাবে পর্যবেন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আচরন বিধি লঙ্ঘন হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আচরণবিধির’৭-এর ‘খ’ ধারায় রয়েছে, কোনো প্রার্থী পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সময়ের ২৪ ঘন্টা আগে তাহার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে চলছে তার উল্টো। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ও স্বতন্ত্র তিন মেয়র প্রার্থী গণসংযোগকালে একাধিক পথসভা করছেন। এসব পথসভা করায় আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখতে নির্বাচন অফিসে কোনো কর্মকর্তাকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। আচরণবিধির ৮-এ উল্লেখ আছে, প্রার্থীদের পোস্টার সাদাকালো হতে হবে এবং এর আয়তন ৬০ বাই ৪০ সেন্টিমিটারের অধিক হতে পারবে না। কিন্তু অনেক প্রার্থীই এ বিধি মানছেন না। নির্ধারিত আয়তনের পাশাপাশি অনেকে বড় আকারের ব্যানার ফেস্টুনও টানিয়েছেন। নবীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের পোষ্টার বিভিন্ন বাড়ী ও দেওয়াল ভরে ফেলেছেন। ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় টানানো পোস্টারে রাস্তার উপর ছেয়ে ফেলছেন। আচরণবিধির ২০-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ বিধিও মানছেন না প্রার্থীরা। আচরণবিধিতে দুপুর ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, রাত আটটার পর কোনো প্রার্থী গণসংযোগও চালাতে পারবেন না। কিন্তু পৌরসভার অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রচারও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এছাড়া প্রচারে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তাও মানছেন না অনেকে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল বলেন, আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে গণসংযোগ করছি। কোনোরকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। আমার নেতাকর্মী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে বলে দিয়েছি, তারা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ চালাচ্ছি। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দেয়া আছে। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য বিধি ও আচরণবিধি মেনেই তারা প্রচার চালাচ্ছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন বলেন, আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই প্রচারনা চালাচ্ছি এবং আমার শুভাকাঙ্খী যারা আমাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহযোগীতা করছেন তাদেরকেও আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী আইনে জানা গেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুসাশনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ.এস.এম মহসিন চৌধুরী বলেন, পৌরসভার প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত বড় কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এখনই যদি প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা না যায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যার ফলে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন নির্বাচনের সার্বিক বিষয় দেখছে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস। শান্তিপূর্ন নির্বাচনের ব্যাপারে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে আমি প্রস্তুত।


     এই বিভাগের আরো খবর