,

নবীগঞ্জ-বাহুবলে স্কুল সরকারী করণ, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাবী মহান জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি

গত ৪ জুন এই মহান সংসদে উপস্থাপিত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটের উপর বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নবম বারের মতো এই সংসদে একটি সুন্দর বাজেট উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানাই সিলেটের কৃতি সন্তান মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে। মানণীয় স্পীকার, আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি সাবেক সফল রাষ্ট্র নায়ক পল্লীবন্দু হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সেই মহান নেত্রী মানণীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে, যারা আমাকে এই সংসদে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই তিনবারের মানণীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-১ এর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণকে। মানণীয় স্পাীকার, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে ২,৯৫,১০০কোটি টাকা । প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭%। মানণীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বেশ কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। দু’এক জায়গায় ব্যর্থতার কথা বললেও অনেক জায়গায় তা এড়িয়ে গেছেন। মানণীয় স্পীকার, বরাবরের মতো এবারের বাজেটও একটি বিশাল উচ্চাভিলাসী বাজেট। তবে বিগত কয়েক বছরে সরকার প্রমাণ করতে পেরেছে যে উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু যে কাজটি সরকার করতে পারেনি তা হলো, প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা কখনো অর্জন করতে পারেনি। আর এই গতানুগতিক বাজেটে এবারোও প্রবৃদ্ধি ৭% অর্জন সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। মানণীয় স্পীকার, রাজনীতির দীর্ঘ পরিক্রমায় জাতীয় পার্টি প্রমান করেছে জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। জাতীয় পার্টি সত্যিকার অর্থেই এই সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। কারণ জাতীয় পার্টি শুধু বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করে না। জাতীয় পার্টি সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজেরও প্রশংসা করছে। মানণীয় স্পীকার, আমি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল)থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্য। আমরা একটি দলের মনোনয়নে নির্বাচন করলেও এই সংসদে ঐ সকল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু তাঁর প্রধানমন্ত্রীনন সমগ্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আবার আমরা বিরোধীদল হলেও সরকারের অন্যতম অংশীদার। কিন্তু জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। উন্নয়নের সুষম ধারায় আমাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। অনেক কিছুই আমাদের বাদ দিয়ে করা হয়। সরকারের এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে উন্নয়নের সুষম বন্টন করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, মাননীয় অর্থমন্ত্রী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে, দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের একটি শ্লোগান ছিল ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’। যদিও গ্রামের সংখ্যা এখন ৬৮ হাজারের অনেক বেশি। তিনি বিশ্বাস করতেন, উন্নয়নের মূলধারা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করতে হয়। এজন্য তিনি গ্রামীন জীবন উন্নয়নের একটি চমৎকার গতি সচ্ঞার করেছিলেন। আমরা যদি এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতাম তাহলে বাংলাদেশ হয়তো আজ উন্নত দেশের কাতারে অবস্থান করতো। মাননীয় স্পীকার, বাজেট ঘোষনার সাথে সাথে আমরা লক্ষ্য করি বাজারে কিছু জিনিসের দাম বেড়ে যায়। অথাৎ যে সকল পন্যের উপর কর বা শুল্ক বৃদ্ধি বা আরোপ করার প্রস্তাব করা হয় সেগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। তারা সেই প্রস্তাব পাসের অপেক্ষা করে না। কিন্তু কোন পন্যের উপর কর বা শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হলে তা কমানো হয় না। মাননীয় স্পীকার, মাহে রমজান শুরু হয়েছে। রহজান মাসকে কেন্দ্র করে আমরা দেখতে পাচ্ছি কোন কারণ ছাড়াই অনেক পন্যের দাম ২ থেকে ৩ গুন বেড়ে গেছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে আমাদেরকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। মাননীয় স্পীকার, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। মাননীয় অর্থমন্ত্রী ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। এজন্য মাননীয় নন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এখনো অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অসহায় জীবন-যাপন করছেন। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণ না করার কারণে তারা রাষ্ট্রীয় স্কীকৃতি পাচ্ছে না। আমি অনুরোধ করবো, এ সকল অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। মামনীয় স্পীকার, শিশু বাজেটের কথা বলা হয়েছে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব দিবে। তাই তাদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। আমি মনে করি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এই শিশু বাজেট পরিকল্পনা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে। মাননীয় স্পীকার, মাননীয় অর্থমন্ত্রী কর ব্যবস্থাকে যৌক্তিকরণের কথা বলেছেন, করের আওতায় বাড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু করের আওতায় বাড়াতে গিয়ে আপনি শিক্ষার উপর কর আরোপ করেছেন। যা জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করবে। মাননীয় স্পীকার, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আবার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হলে অবশ্যই শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কিন্তু আমরা একটি বিষয় সব সময়ই লক্ষ্য করি যে, শিক্ষাখাতে বাজেট স্বল্পতা। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বদাইসংকোচনশীল নীতি গ্রহন করা হয়। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। এমপিও ভুক্তিও একটি চলমান পক্রিয়া। সেখানে এমপিওভূক্তির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যতি এমপিওভূক্তি করতে না পারেন তাহলে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানকে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্কীকৃতি প্রদানের জন্য কোন যৌথিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। আর শিক্ষার গুনগত মান সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী নিজেই তার বাজেট বক্তৃতায় নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এর পর আবার আপনি শিক্ষার উপর নতুন করে কর আরোপ করলেন। তাহলে ফলাফল কি দাঁড়ায়, শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। শিক্ষার উপর যদি কর প্রত্যাহার না করেন, এমপিওভূক্ত অব্যাহত না রাখেন, শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি না করেন তাহলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর আর্থিক চাপ বাড়বে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্য ব্যাহত হবে। তাই শিক্ষা খাতে উদার নীতি গ্রহন করতে হবে, বাজেট বাড়াতে হবে, সকল কর প্রত্যাহার করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, জিডিপির লক্ষমাত্রা অর্জন করতে হলে যে কাজটি প্রথমেই করতে হবে তা হলো প্রশাসন থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক দুনীতি হচ্ছে। জনসাধারণকে যেকোন সেবা গ্রহন করতে হলে তাকে ঘুষ দিতে হয়। অর্থ খরচ ছাড়া কোন সেবা পাওয়া যায় না। শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ভূমি মন্ত্রনালয়, বিচারালয় থেকে শুরু করে যেখানেই যান সেখানেই আপনাকে অর্থ খরচ করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা হাওর, বিল, পাহাড় এবং সমতল ভূমির এক নৈসর্গিক লীলাভূমি। কিন্তু উন্নয়ন এখানে মারাত্মক অবহেলিত। তাই আমার নির্বাচনী এলাকার দু’একটি বিষয় আপনার মাধ্যমে এই সংসদে উর্থাপন করতে চাই। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বিগত কয়েক বছরে নতুন কোন যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি হয় নাই। এলজিইডির অনেক রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলোকে ঠিকমতো মেরামত বা সংস্কার করা হচ্ছে না। কাজির বাজার টু কাদিরগঞ্জ রাস্তাটি এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন রাস্তা। এই রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। মাননীয় স্পীকার, আমি আগেই বলেছি আমার নির্বাচনী এলাকা প্রকৃতির এক নৈসর্গিক লীলাভূমি। সেখানে যদি পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেন তাহলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক সমাগম ঘটবে এবং সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। তাই এ ব্যাপারে মাননীয় পর্যটন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় স্পীকার, আমার নির্বাচনী এলাকা গ্যাস এবং বিদুতের অন্যতম উৎস। এখান থেকে প্রচুর পরিমান গ্যাস, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত। আমার এলাকার গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে সারা বাংলাদেশ আলোকিত হলেও দুঃখজনক হলো আমার নির্বাচনী এলাকার অনেক জনসাধারণ বিদ্যৃৎ এবং গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত। আমি তাদেরকে কোন জবাব দিতে পারি না, মাননীয় স্পীকার, এ ব্যাপারে জনগণ বিভিন্ন সময়ে মানব বন্ধনসহ বিভিন্নভাবে সরকারের নিকট দাবি পেশ করছে। তাই আমার নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেক ঘরে ঘরে গ্যাস-বিদ্যৃৎ সংযোগের জোর দাবী জানাচ্ছি। মাননীয় স্পীকার, শিক্ষায় আমার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা বেশ পিছিয়ে আছে। দুইটি উপজেলায় সরকারী কোন হাইস্কুল বা কলেজ নেই। নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ও বাহুবল ডিগ্রী কলেজকে সরকারী করণের জন্য দাবী জানাই। নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় ও বাহুবল দীননাথ ইনষ্টিউটকে সরকারী করণের জন্য দাবী জানাই। নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ থানায় পুলিশ কোয়াটার খুবই খারাপ অবস্থা। তাই নতুন কোয়াটার করার দাবী জানাই। এছাড়া গত ঘুর্ণিঝড়ে আমার এলাকার অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে তাই আমার এলাকায় কিছু ডেউটিন দেওয়ার দাবী জানাই। মাননীয় স্পীকার, সর্বশেষ মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।


     এই বিভাগের আরো খবর