,

নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় শহরে ভোটের আমেজ, মেয়র পদে নৌকা-ধান ও জগের ত্রিমুখী লড়াই

উত্তম কুমার পাল হিমেল ॥ দীর্ঘ প্রচারণা শেষে ২য় ধাপে ১৬ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হবে নবীগঞ্জ পৌরসভার ৫ম নির্বাচন। নবীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ জন ও ১২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও ৩৭ জন কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ৫২ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবার। গতকাল বুধবার দুপুরে মেয়র ও কাউন্সিলরগণের প্রতীক ঘোষনা করেছেন হবিগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। প্রতীক পাওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। শীতের মৌসুমে প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচারণায় শহরে ভোটের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নবীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী দলের মনোনীত হওয়ায় যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েই লড়বেন তারা। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন আরেকজন। বর্তমান মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী (ধানের শীষ), গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল (নৌকা) এর সমর্থকরা স্যোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে হাটে-মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের পাশাপাশি প্রচারণায় বিভোর রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মাহবুবুল আলম সুমন (জগ) এর সমর্থকরা। এদিকে মেয়র প্রার্থীদের তুলনায় প্রচারণায় পিঁছিয়ে নেই ৯টি ওয়ার্ডের সংরতি মহিলা কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নতুন-পুরাতন বিভিন্ন প্রার্থীরা। তারা প্রতিনিয়ত ভোটারদের ধারে ধারে গিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডকে পৌরসভার মধ্যে উন্নত, আদর্শ ওয়ার্ড ও উন্নয়নের রোড মডেল হিসেবে গড়ে তুলার নির্মিত্তে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন মূলক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাড়া, মহল্লা, শহর ও ওয়ার্ডবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেয়র পদে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসূল চৌধুরী রাহেল (নৌকা), বিএনপির মনোনিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমেদ চৌধুরী (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মাহবুবুর রহমান সুমন (জগ)। নবীগঞ্জ পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ডে নারী পুরুষ মিলে ১৮ হাজার ৮ শত ৭৭ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ৯ হাজার ৭ শত ৫৫ জন এবং পুরুষ ৯ হাজার ১ শত ২২ জন। ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোটারদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে মোটার সংখ্যা হচ্ছেন ২ হাজার ৫৮ জন। এ ওয়ার্ডে প্রার্থীরা হলেন কাউন্সিলর পদে ৩ জন। বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন (পানির বোতল), সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান (উটপাখি) ও মোঃ আক্তার উজ্জামান চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প)। ২নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ সুন্দর আলী (পাঞ্জাবী), আকমল হোসেন আজাদ টেবিল ল্যাম্প), এটি.এম রুবেল মিয়া (উটপাখি), মোঃ সাহেদুর রহমান (ডালিম) ও আঃ ছোবহান (পানির বোতল)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ১ শত ৯৬ জন। ৩নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন। তারা হলেন সাবেক কাউন্সিলর শাহ মোঃ রিজভী আহমেদ খালেদ (উটপাখি) মোঃ অহি চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প) ও মোঃ নানু মিয়া (পানির বোতল)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ৩০ জন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৪ জন। তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা মিলন পারুল (আনারস) সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জাকিয়া আক্তার লাকী (জবা ফুল), মোছাঃ স্বপ্না বেগম (চশমা) ও শামেলা বেগম (অটোরিক্সা)। ৪নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর প্রাণেশ চন্দ্র দেব (টেবিল ল্যাম্প) সাবেক কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ (উটপাখি) ও সমীরন দাশ (পাঞ্জাবী)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৬৬ জন। ৫নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর এটিএম সালাম (টেবিল ল্যাম্প) মোঃ লুৎফুর রহমান (পানির বোতল), মোঃ আমির হোসেন (উটপাখি) মোঃ সুহেলুজ্জামান (পাঞ্জাবী) ও ইসমত আলী (ডালিম)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ১ হাজার ৭ শত ৯৫ জন। ৬নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর জায়েদ চৌধুরী (ডালিম), শেখ মোঃ আবুল হোসেন (পানির বোতল) মোঃ ইসলাম উদ্দিন চৌধুরী (উটপাখি) আল আমিন চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প) মঈনুল ইসলাম চৌধুরী (পাজ্ঞাবী)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ১ হাজার ৭ শত ৮২ জন। ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর মোছাঃ রুকেয়া বেগম অটোরিক্সা) পূর্ণিমা রানী দাশ (আনারস) মোছাঃ তৈয়মুন্নেছা (জবাফুল) মোর্শেদা আক্তার চশমা) ও রওশনারা বেগম টেলিফোন)। ৭নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির মিয়া (পানির বোতল) সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব রুহুল আমিন রফু (উটপাখি) ও ফখরুজ্জামান চৌধুরী (বুলবুল) (পাজ্ঞাবী)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৫৮ জন। ৮নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৪ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর বাবুল চন্দ্র দাশ (পানির বোতল) সাবেক কাউন্সিলর সন্তষ দাস (পানির বোতল) ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন চৌধুরী (ডালিম) এবং দিব্যেন্দু ধর (উটপাখি)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ১ শত ৪২ জন। ৯নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৬ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন (পানির বোতল) শেখ শাহনূর আলম ছানু মিয়া (ডালিম) শাহ ফজলুল করিম (গাজর) মোঃ ফজল আহমদ চৌধুরী (পাঞ্জাবী) শেখ জগলুল হাসান (পানির বোতল) ও শাফি মিয়া তালুকদার (উটপাখি)। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৫০ জন। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর সৈয়দা নাসিমা বেগম (আনারস) মোছাঃ শেলী বেগম (চশমা) ও মোছাঃ রাজিয়া বেগম (অটোরিক্সা)।
১৯৯৭ সালের ৩১ শে জুলাই নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী। এ নির্বাচনে এডভোকেট আব্দুস শহীদ গোলাপকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী। পরে ২০০৪ সালের নির্বাচনেও অধ্যাপক তোফাজ্বল ইসলাম চৌধুরী ২য় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময়ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন এডভোকেট আব্দুস শহীদ গোলাপ। পরে ৩য় বারের ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ নবীগঞ্জ পৌরসভার ২০১৫ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ৪র্থ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করে দলীয় কোন্দলের কারনে হেরে যান। এ নির্বাচন মেয়র পদে নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী। আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০২১ইং তারিখের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনােনয়ন পান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী। আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান অধ্যাপক তেফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী। সরে গিয়ে তিনি এবং আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামীলীগের প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীর নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। কাল রাতে শেষ হয়েছে আনুষ্টানিক প্রচার প্রচারন। এখন শুধু ভেটারদের কাছে প্রার্থীদের কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা শেষ সম্ভল। কাল অনুষ্ঠিত হবে নবীগঞ্জ পৌরসভার ৫ম নির্বাচন। কে হাসবেন শেষ বিজয়ের হাসি। প্রচারনায় ৩ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন অনেকটা এগিয়ে। কারন দলীয় অনেক কেন্দ্রীয় নেতার প্রচারনায় সরগরম করে তোলেছেন পৌর নির্বাচনী মাঠ। তবে অন্য ২ প্রার্থী ও নিজেদর মত করে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। তবে সরকারের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে শেষ পর্যন্ত এ আসনে নতুন কোন চমক আসতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


     এই বিভাগের আরো খবর