,

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়!স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎকে জীবন দিতে হয়েছে

সময় ডেস্ক ॥ লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক আসামিকে দিয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গি নেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন শফিউর রহমান ফারাবী। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, অভিজিৎ রায় একজন বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ছিলেন। বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের সঙ্গে আড্ডা শেষে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন তিনি। নাস্তিকতার অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা অর্থাৎ এ মামলার অভিযুক্তরাসহ মূল হামলাকারীরা সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়।’আসামিদের সাজার প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে রায়ে বিচারক বলেন, ‘বাংলাদেশে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে মত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যেহেতু অভিযুক্ত পাঁচ আসামি (জিয়া, আকরাম, সোহেল, মোজাম্মেল ও আরাফাত) আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায় হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা নিয়েছেন, সেজন্য ওই ৫ জন আসামির একই সাজা প্রদান করা হবে বাঞ্ছনীয়।’রায়ে আরও বলা হয়, ‘অভিজিৎ রায় হত্যায় অংশগ্রহণকারী অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তমনা লেখকেরা স্বাধীনভাবে লিখতে ও মত প্রকাশ করতে সাহস পাবেন না। কাজেই ওই আসামিরা কোনো সহানুভুতি পেতে পারে না।’ আদালত বলেন, ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬(২) (অ) ধারায় এই পাঁচ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেই নিহতের আত্মীয়রা শান্তি পাবেন এবং মুক্তমনা লেখকেরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সাহস পাবেন। অন্যদিকে জঙ্গিরা ভবিষ্যতে এমন জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে। অপর আসামি উগ্রপন্থী ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন। তাই হত্যার দায় থেকে তারও মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ফারাবীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২), ৮ (আ) ধারায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়াই সমীচীন।’ ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসির সামনে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান অভিজিৎ। ওই ঘটনায় তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায় পরদিন শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর