,

উদ্যোক্তা হিসেবে মাত্র আড়াই মাসেই লাখপতি হবিগঞ্জের জেসি রহমান

জাবেদ তালুকদার ॥ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা জেসি রহমান। অনলাইনে হোমমেইড ফুড (বাড়িতে খাবার বানিয়ে তা ডেরিভারি ম্যান দিয়ে বিক্রি) নিয়ে কাজ করছেন। সফলতার চুড়ান্ত শিখরে পৌছাতে না পারলেও মাত্র ৩ মাস সময়েই যে পর্যায়ে এসেছেন এতে তাকে একজন সফল উদ্যোক্তা বলা যায়। এই পর্যায়ে পৌছানোর নৈপথ্যে রয়েছে নিজের পরিশ্রম, এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় আর তার পরিবারের সমর্থন। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে জেসি রহমানকে, তবে কখনোই দমে যাননি তিনি। নিজের লক্ষের দিকেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। অনলাইনে হোমমেইড ফুইড নিয়ে কাজ করে মাত্র ৩ মাসেই লক্ষাধিক টাকার খাবার বিক্রি করেছেন। প্রশাসন সহ ভিবিন্ন সংস্থার অনুষ্ঠানেও তিনি খাবার পরিবেশন করেন। এই সফল উদ্যোক্তার সাথে কথা হয় দৈনিক হবিগঞ্জ সময়ের স্টাফ রিপোর্টার জাবেদ তালুকদারের। তার উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরুর ক্ষেত্রে সবচাইতে সমর্থন ছিল আমার বাবার। আমাদের ছোট দুই ছেলেকে লালন পালনে অসুবিধা হবে ভেবে আমার স্বামী আমাকে প্রথমে সমর্থন করেননি। তখন আমার বাবা আমার ইচ্ছা দেখে আমার স্বামীর কাছ থেকে এক মাসের সময় নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ”তোমাদের ছেলেদের দেখাশোনায় যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সে (জেসি) কাজ ছেড়ে দিবে।” আমার প্রতি আমার বাবার বিশ্বাস ছিল। সে কারনে প্রথম দিকে বাবা নিজেও আমার বানানো ফুড আইটেম ডেলিভারি চার্জ সহ ক্রয় করে খেয়েছিলেন। কাজটা আপনার কাছে কেমন লাগছে, সহজ নাকি কঠিন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন উদ্যোক্তা হওয়া এতোটা সহজ না। তারমধ্যে একজন মেয়ের জন্য। কেননা একটা মেয়েকে বাচ্চা, সংসার সামলিয়ে একজন উদ্যোক্তা হতে হয়। এমনও অনেক সময় গেছে যে সারারাত জেগে কাজ করেছি, যাতে সময়মত খাবার ডেলিভারি দিতে পারি। কেননা বেশিরভাগ সময়ের আমার ডেলিভারি গুলো সকাল ৯টায় থাকে। আমি সব সময় টাইম মেনটেইন করার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সব সময় টাইম মেইনটেইন হয়। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কার সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি উদ্যোক্তা হবার পেছনে কারো কাছ থেকেই সহযোগিতা পাইনি। কেননা আমার বাসায় হেল্পিং হ্যান্ড বলতে কেউ নেই। আমি একাই সব কাজগুলো করি। আমার বাবার সমর্থনের জন্য আজ আমি এই স্থানে। একজন মেয়ের জন্য তার বাবা জীবনের অনেক বড় আশির্বাদ এটা আমি উদ্যোক্তা হবার পরে আরো ভালেভাবে অনুভব করতে পারছি। উদ্যোক্তা জীবেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কি না? জবাবে বলেন, আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো আমার কাছের মানুষগুলো আমাকে বিভিন্নভাবে খোচাখোচি করেছে। তাদের ভাষ্য ছিলো যে, ”আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো থাকা সত্বেও কেন আমি রান্নার কাজ করতে যাবো? আমার মনে হয় টাকার অভাব পরেছে।” এই ধরনের কথাগুল্য আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তবুও আমি থেমে যাইনি। ইনশাআল্লাহ থামবো না। একজন মেয়ে হয়েও এতো কষ্ট কেন করছেন? জবাবে জেসি রহমান বলেন, মেয়েরা এখন কোন কিছুতেই পিছিয়েই নেই। তবুও আমাদের আধুনিক সমাজে এখনো অনেকেই বলে থাকে মেয়ে মানুষ তাই পারবে না। কিন্তু মেয়েরাও পারে এটা এখন মেয়েরা দেখিয়ে দিচ্ছে। আমি ২০১৫ তে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি তখন থেকেই ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম আর কতো অলস সময় কাটাই তাই একজন উদ্যোক্তা হয়েই দেখিয়ে দেই। আর এটা আমার জন্য কষ্ট না, নিজেকে সমাজের কাছে প্রেজেন্ট করে খুব গর্ববোধ করছি। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য দৈনিক হবিগঞ্জ সময়ের মাধ্যমে জেসি রহমানের প্রথম পরামর্শ হচ্ছে কোয়ালিটি মেইনটেইন। সেটা খাবার বা ড্রেসেই হোক। আর কোয়ালিটি মেইনটেইন টা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। কেননা অনেক নতুন উদ্যোক্তা আছেন যে প্রথমে ভালো কোয়ালিটি দিয়ে পরে সেই কোয়ালিটিটা আর মেইন্টেইন করেন না। আর অবশ্যই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমার সব সময় শুভ কামনা থাকবে।


     এই বিভাগের আরো খবর