,

আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল ও মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিনসহ আসামী দুই/আড়াই’শ জন

আনোয়ার হোসেন মিঠু ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহালসহ ৬ মৌজার লোকজন কর্তৃক পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগসহ তান্ডবের ঘটনায় নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুশ শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূর উদ্দিন (বীর প্রতীক) সহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো দুই/আড়াই”শ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার ভোর রাতে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সাতাইহালসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়। এ দিকে মাথা গুজার টাই বাড়ি ঘর হারিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে মানবেতর দিনাতিপাত করছে নারকীয় তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। রবিবার হামলাকারীরা নগদ টাকা, প্রায় ২ হাজার মন ধান, ৮টি টিউবওয়েল ১০/১৫টি গরু, ১৫/২০ টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস-মোরগ, লুটপাট করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তান্ডবের ঘটনায় পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুশ শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদি হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো দুই/আড়াই”শ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ডালিম আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে লেবু মিয়া (৩০), লেদু মিয়া (৩৫), নাঈম (১৭), মহিবুর রহমান মানিক (৪৩), জুলফু মিয়া (২৬), রকিব উল্লাহ ((৬০) ও মামুন (২০) নামে ৭ জনকে গ্রেফতার করে। আটককৃতদের সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক)-এর মালিকানাধীন ফিশারিতে অবস্থানরত পাহারাদার ও তার স্ত্রীকে মারধর করে নোয়াগাঁও গ্রামের কতিপয় লোকজন। আহত দম্পতি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন মিটিং করে মাইকিং করে কথিত প্রভাবশালীদের নির্দেশে প্রায় ৩ কিঃ মিঃ দুরত্বে আরেকটি ইউনিয়নে অবস্থিত নোয়াগাঁও গ্রামে দেশীয় অস্ত্র সহকারে হামলা করার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের লোকজনদের নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে একটু দুরবর্তী স্থানে মিটিং করেন। মিটিং চলাকালে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় শহস্রাধীক লোক বিকল্প রাস্তায় নোয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে হামলা, পাক হানাদার বাহিনীর ন্যায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালায়। এক পর্যায়ে তারা বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ করে প্রায় ২ হাজার মন ধান, ১০/১৫টি গরু, ১৫/২০টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস মোরগ বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যায়। লুটপাট কারীররা উল্লেখিত বাড়িগুলি থেকে ৮টি টিউবওয়লের পাম্প খুলে নিয়ে যায়। এছাড়া অগ্নি সংযোগের ফলে নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত সফর উল্লার পুত্র রমজান মিয়া, হেলাল মিয়া, লুৎফুর মিয়া, সাদ্দক মিয়া, কামাল মিয়া, মাদ্দক মিয়া, হিরন মিয়া, মৃত আরজু মিয়ার পুত্র আব্দাল মিয়া, মৃত আবরু মিয়ার পুত্র আফজল মিয়া, আওলাদ মিয়া, তাজুদ মিয়া, আজাদ মিয়া ও সফর উল্লার পুত্র মুহিবুর রহমানের ১৩টি পাকা-আধা পাকা, টিনসেটের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় হামলার শিকার হয়ে বাড়ি-ঘরে থাকা লোকজন পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ডালিম আহমদ জানান, নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুশ শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদি হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো দুই/আড়াই”শ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর