,

শায়েস্তাগঞ্জে সিএনজি চোরচক্রের প্রধানসহ গ্রেফতার ১০ ॥ ৬টি সিএনজি উদ্ধার করেছে র‌্যাব

জুয়েল চৌধুরী ॥ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৯ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-১ (সিপিসি) শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প এর বিশেষ অভিযানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল হতে চুরি হওয়া ৬টি সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ মানিক-কামরুলসহ (মাইনকা-কামরুল) গ্রুপের ১০ সহযোগী গ্রেফতার হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সাড়ে ১২টায় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ সিপিসি-১ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প এর কমান্ডার মেজর সৌরভ মোঃ অসীম শাতিল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-০৯ সিপিসি-১ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল মেজর সৌরভ মোঃ অসীম শাতিল ও সিনিয়র এএসপি একেএম কামরুজ্জামানে নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৬টি সিএনজিসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মেজর সৌরভ মোঃ অসীম শাতিল জানান, র‌্যাব-৯ দীর্ঘদিন ধরে সিলেট বিভাগের মোটরসাইকেল, গাড়ী, সিএনজি চুরি-ছিনতাইকারী চক্রের অনুসন্ধানে কাজ করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে ২১ এপ্রিল পেশাদার সিএনজি চোর মোঃ আবু তালেব (৪৫) ল্যাংড়া তালেবকে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও র‌্যাব-৯ এর অধিনায়কের সুপরিকল্পিত দিক নির্দেশনায় সিপিসি-১ এর স্পেশাল টিম আরো কিছু চক্রের সন্ধান পায় ও অনুসন্ধানে অগ্রগতি আনতে সক্ষম হয়। ২৮ মে মাধবপুর এলাকা হতে সিএনজি চুরির অভিযাগ পাওয়ার সাথে সাথে স্পেশাল টিম ও সোর্স উক্ত চক্রের সদস্য শমসু মিয়া (৪৫) শনাক্ত দ্রুততার সাথে ৩ জুন গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া ৬টি সিএনজিসহ ১০ জন পেশাদার সিএনজি চোর এবং চোরাই সিএনজি ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) শমসু মিয়া (৪৫)এর তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-০৯ সিপিসি-১ (শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প) এর একটি বিশেষ দল মেজর সৌরভ মোঃ অসীম শাতিল ও সিনিয়র এএসপি একেএম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে মোঃ মহিউদ্দিনকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। মোঃ মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সিলেট বিভাগের চুরি যাওয়া সিএনজি চোরাই পথে বিক্রয় করার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে অপকর্মে লিপ্ত। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মহিউদ্দিন (২৬) এর তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ কামরুল মিয়াকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়। কামরুলের আশপাশের এলাকাবাসীর নিকট হতে জানা যায় যে, কামরুল মিয়া এছাড়াও বিভিন্ন ধরণর প্রতারণামূলক কাজে জড়িত। ধৃত আসামী শমসু মিয়া (৪৫) এর তথ্যের ভিত্তিতে এই গ্যাং এর চুরি, ছিনতাই অপারেশন লিডার মোঃ মানিক মিয়া (৩৭) ও তার অন্যতম সহযোগী মোঃ মশিউর রহমানকে (৪২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মহিউদ্দিন (২৬) এর তথ্যের ভিত্তিতে দ্বীন ইসলাম হৃদয় (২১), অনুকুল রায়কে (১৯), মোঃ মঈন উদ্দিন (২৮), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩৬), মোঃ সেলিম আহম্মেদ মুন্না (৩০) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত হৃদয় যানবাহন সমূহ ছিনতাই, চুরি করার েেত্র চাবি ছাড়া এ সকল যানবাহন চালাতে পারদর্শী এবং এই গ্যাং এর অন্যতম প্রধান সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামী অনুকুল জানায় যে, প্রাথমিক পর্যায়ে অভাব অনটনে এ কাজ করলেও পরবর্তীতে মহিউদ্দিন তাকে মাদক মামলায় পুলিশে ধরিয়ে দিবে ভয় দেখিয়ে এ ধরনের কাজে বাধ্য করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা যায় যে, আসামী মোঃ মহিউদ্দিন এ সকল চুরি, ছিনতাই এর মূল পরিকল্পনাকারী। এেেত্র আসামী মোঃ মহিউদ্দিন সকল নতুন সিএনজি (বিশেষ করে যে সকল সিএনজির এখনো নম্বার প্লেট লাগানো হয়নি) টার্গেট হিসাবে বাছাই করে এবং টার্গেট এর গ্যারেজ চিহিৃত করে। টার্গেট এবং গ্যারেজ চিহিৃত করার পর আসামী মহিউদ্দিন চুরির প্রস্তাব মানিককে দেয়। আাসামী মানিক (মাইনকা) চুরি, ছিনতাই গ্রুপের মূল লিডার। আসামী মোঃ মহিউদ্দিন এর দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী আসামী মানিক প্রাথমিক ভাবে কিছুদিন টার্গেট এবং গ্যারেজ পর্যবেণ করে। অতঃপর চুরির দিন নির্ধারণ করে। চুরি করার ক্ষেত্রে আসামী মানিক তার দলের প্রধান অস্ত্র হিসাবে আসামী হৃদয়কে ব্যবহার করে। আসামী হৃদয় যে কোন যানবাহন চাবি ছাড়া ইঞ্জিন চালু করতে পারদর্শী। আসামী হৃদয় ইঞ্জিন চালু করে দেয়ার পর সে নিজে এবং আসামী মশিউর এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা যানবাহন সমূহ চালিয়ে আসামী মানিকের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসে। আসামী মানিক (মাইনকা) এর নেতৃত্বে চুরি, ছিনতাই অপরাধ কার্যক্রম সংঘটিত হওয়ার পর তারা আবার প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে। একই সাথে ঐ স্থানে আসামী মহিউদ্দিন উপস্থিত হয়। তারপর আসামী মোঃ মহিউদ্দিনই চোরাই গাড়ী বিক্রির অন্যতম সদস্য কামরুলের সাথে একমাত্র যোগাযোগ রা করে। আসামী মোঃ মহিউদ্দিনের মাধ্যমে চোরাই যানবাহন সমূহ আসামী কামরুল গ্রহণ করে এবং উক্ত যানবাহন সমূহ চোরাই পথে বিক্রির প্রকৃয়া সম্পন্ন করে। চোরাই পথে যানবাহনগুলো বিক্রির পর বিক্রিত অর্থের কিছু অংশ আসামী মহিউদ্দিনের মাধ্যমেই চুরি ছিনতাই গ্রুপের মূল লিডার মানিক (মাইনকা) এর হাতে আসে। যা পরবর্তীতে মানিক তার গ্রুপের অন্যন্যা সদস্যদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। সিএনজি চুরি যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সাধারণত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের একটি সিএনজি আসামী কামরুল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করে থাকে। এক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ আসামী মহিউদ্দিন এবং কামরুল নিয়ে থাকে এবং এক-তৃতীয়াংশ বা তার কিছু কম চুরি, ছিনতাই গ্রুপ পেয়ে থাকে। এই সকল প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়। যার ফলে দ্রুততার সাথে আসামীগণকে গ্রেফতার করা ছাড়া সিএনজি সমূহ ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব।


     এই বিভাগের আরো খবর