,

আজ থেকে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় টমটম ভাড়া ৫ টাকা

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় টমটম ভাড়া ৫ টাকা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিয়ে পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করলেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক। গতকাল রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে টমটমের পূর্বের ভাড়া বহাল ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইন শৃঙ্খলা কমিটির এই সিদ্ধান্তটি হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। করোনাকালে দীর্ঘদিনের এই জনদাবিটি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেয়ায় জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হবিগঞ্জ পৌরবাসী। পুরুষ যাত্রীর পাশাপাশি অধিকাংশ নারী যাত্রীরা সাংবাদিকদেরকে ফোন করে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানানোর বিষয়টি তুলে ধরার অনুরোধ করেন। জানা যায়, করোনার কারণে প্রায় দুইমাস ধরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ডাবল ভাড়া আদায় করছিলো টমটম মালিক ও চালকরা। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে মারামারিসহ প্রতিনিয়ত
বাকবিতন্ডা লেগেই থাকতো। বলা চলে কতিপয় লোকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে জনপ্রিয় এই পরিবহন খাতটি। যানজট, বিদ্যুতের অপচয়, দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে ২০১০ সালে সরকারিভাবে ব্যাটারি চালিত এই যানটি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে কমখরচে চলাচল আর বেকারত্ব দূরীকরণসহ বিভিন্ন মানবিক কারণে সীমিত পরিসরে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভেতরে চলাচলের অনুমতি দেন তৎকালীন মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। কিন্তু বারবার এই জনপ্রিয় যানবাহনটির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোকের। যারা ভাড়া বাড়াতে নানা ফন্দিফিকির করতে থাকে এবং এই যানবাহন নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠে। তবুও জনগুরুত্ব বিবেচনায় তখনকার সময়ও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি।
করোনার কারণে গত বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করার নির্দেশনা যখন দেয় সরকার তখন থেকেই মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একটি চক্র তাদের মনগড়া মতো ভাড়ার তালিকা করে অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের গণপরিবহনগুলো পূর্বের ভাড়ায় ফিরে গেলেও ফিরেনি হবিগঞ্জ পৌর এলাকার সড়কে চলা টমটম চালক মালিকরা।
আগে পৌর এলাকার বাহির অর্থাৎ ভাঙ্গারপুল থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১০ টাকা, পরে পৌর এলাকার প্রবেশদ্বার পোদ্দার বাড়ি থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত করা হয় ১০ টাকা। দূরত্বের হিসাব করে এ মেনে নেন অনেক যাত্রীরা। বিপত্তি বাধে তখন থেকে যখন পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের সময়ে কথিত মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একটি চক্র মনগড়া তালিকা করে প্রত্যেক টমটমে টানিয়ে দেয়। ওই তালিকায় বানায় তারা পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এবং ভাড়াও নির্ধারণ করে তাদের মতো করে।
সম্প্রতি করোনার ২য় ঢেউ দেশে আঘাত আনলে প্রায় দুই মাস আগে সরকারিভাবে আন্তঃজেলা গণরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ করা হয় এবং হাফ যাত্রী নিয়ে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনার সুযোগ কাজে লাগায় ওই চক্রটি। তারা জেলা প্রশাসনকে আশ্বস্থ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টমটম চালাবে এবং ডাবল ভাড়া নিবে। কিন্তু তারা মানেনি তাদের দেয়া কথা। প্রতিনিয়ত ডাবল ভাড়া ও ডাবল যাত্রী নিয়ে শহরে চলাচল করে। এমনকি উঠানামা করলেও তাদেরকে দিতে হয়েছে ডাবল ভাড়া। না দিলে চালকদের হাতে যাত্রীদের বিশেষ করে নারী যাত্রীদের নাজেহাল হতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে ডাবল ভাড়াই দেয়া হয়।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলেও করোনার অজুহাত দেখিয়ে ডাবল ভাড়া আদায় অব্যাহত রাখে চালকরা। এ নিয়ে আবারও প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠে এবং নজরে আসে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা প্রশাসন চেষ্টা করেছে। কিন্তু অধিকাংশ চালকরাই তা মানেনি। যে কারণে মোবাইল কোর্টসহ তাদেরকে বারবার সতর্ক করা হয়। তারপরও কাজ হয়নি। পরে পত্রিকার সংবাদ পড়ে এবং সাংবাদিকদের অনুরোধে জনদাবির ভিত্তিতে গতকাল আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পূর্বের ভাড়া বহালের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে পৌর মেয়রকে নির্দেশনা দেয়া হলে পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরজুড়ে মাইকিং করিয়ে জানিয়ে দেন। মেয়রের নির্দেশনার বিষয়টি অনেকেই ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে পৌরবাসীর পক্ষ থেকে মেয়রকেও ধন্যবাদ জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে জনদাবির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান অনেকে।
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে মাসিক জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিমসহ জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহীনির প্রধান, ব্যবসায়ি ও পরিবহণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মাসিক জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সরকার সারাদেশে বিধিনিষেধ শুরু করে। এ সময় হবিগঞ্জ শহরের চলাচলরত টমটম ইজিবাইকে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের শর্তে ভাড়া ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়। করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় টমটম ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে সমন্বয় করে ভাড়া কমিয়ে পূর্বের ন্যায় ৫ টাকা করা সিদ্ধান্ত হয়। উল্লেখ্য গত ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাফ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে টমটম এই শর্তে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছিল।


     এই বিভাগের আরো খবর