,

দুটি ঘটনায় নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগনা উত্তপ্ত

নূরুজ্জামান ফারুকী ॥ নবীগঞ্জ উপজেলায় পৃথক দু’টি ঘটনায় উৎকন্ঠ বিরাজ করছে দিনারপুর পরগনার মানুষদের মাঝে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ওই এলাকার জনপদ। দু’টি ঘটনার জন্যই আলাদা আলাদা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনসহ ঘটনার বিবরণ দিয়ে উভয় পই পোষ্টার লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ৩টি ইউনিয়ন সমন্বয়ে দিনারপুর পরগনায় ভাঙ্গনের আলামত দেখা যাচ্ছে। পৃথক দু’টি ঘটনায় ১১নং গজনাইপুর ও ১৩নং পানিউন্দা ইউনিয়নবাসী আলাদা মেরুতে অবস্থান করছেন। বিষয়ের প্রেক্ষিতে এই দুটি ইউনিয়নের লোকজনরে প্রতি নজরধারী রাখছেন প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মে দিবাগত রাতে নোয়াগাঁও রুক্ষার হাওর পাড়ে অবস্থিত ১১নং গজনাইপুর ইউপির সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক) এর ফিশারীতে নোয়াগাওঁ গ্রামের একদল দূর্বৃত্ত আবুল মিয়ার বসতঘরে ঢুকে জোরপুর্বক তার স্ত্রী ঝাড়ু বেগমকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এতে আবুল মিয়া বাধা দিলে ৬/৭ জনের দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর উপর হামলা চালায়। এই হামলায় আবুল মিয়া (২৭) ও তার স্ত্রী ঝাড়ু বেগম (২২) গুরুতর আহত হয়। আহত ঝাড়ু বেগমের হাতের কব্জি প্রায় দ্বিখন্ডিত হয়ে পরে। মাথায় উর্পযুপরি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এই হামলার ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনার জেরধরে বিগত ২৯ মে শনিবার রাতে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রতিবাদ সভা আহ্বান করা হয়। তারা ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন নোয়াগাওঁ হাওর পাড়ে গিয়ে আহতদের উপর হামলাকারীদের উপরে হামলা করার ঘোষনা দেন। মুহুর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পরে পুরো পরগনায়। বিষয়টি রাতেই স্থানীয় লোকজন ও পানিউন্দা ইউপির চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে ৩০ মে রবিবার সকালেই সাতাইহাল গ্রামে একদল পুলিশ নিয়ে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ মহি উদ্দিন ও থানার অফিসার ইনর্চাজ ডালিম আহমদ। তারা সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজনদের নিয়ে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে নেতৃবৃন্দ কোন প্রকার হট্রগোল হবে না মর্মে প্রশাসনকে আশ^ান দেন। এরই মধ্যে খবর আসে নোয়াগাওঁ হাওর পাড়ে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। দ্রুত প্রশাসনের লোকজন পুলিশসহ ঘটনাস্থলে পৌছেন। দমকল বাহিনীর একটি টিমও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পৌছে। সকলের প্রাণপন চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনলেও ১৩টি বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নোয়াগাওঁ গ্রামের লোকজন ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার অভিযোগ করেন সাতাইহাল ৬ মৌজার লোকজন হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ নারকীয় তান্ডব চালায়। উক্ত তান্ডবলীলায় থমকে যায় নোয়াগাওঁ হাওর পাড়ের জনপদ। ক্ষতিগ্রস্থদের হাহাকার ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। ভুলণ্ঠিত হয় মানবতা। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের ঠাই হয় গাছ তলায়। রাতের বেলায় খাবার নিয়ে হাজির হন ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন। তাদেরকে শান্তনা ও আহার করাতে গিয়ে নিজেও তাদের সাথে খাবার গ্রহন করলেন। এদিকে নোয়াগাওঁ গ্রামে তান্ডবের ঘটনায় পুলিশ গজনাইপুর ইউপির বরখাস্থকৃত চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ সাতাইহাল গ্রামের ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। জেলা প্রশাসক এর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রত্যেক’কে টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। নোয়াগাওঁ গ্রামের লোকজন তিগ্রস্থ বাড়িঘরের ছবি দিয়ে ঘটনাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়ে পোষ্টারিং করেছেন। করেছেন বিশাল মানববন্ধন। অন্যদিকে সাতাইহাল ৬ মৌজার লোকজনদের বিরুদ্ধে ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ গ্রেফতারকৃত নিঃশর্ত মুক্তি দাবী জানান। উভয় পক্ষের পোষ্টার গুলো জেলা সদরের আদালত পাড়াসহ গুরুত্বপুর্ণ স্থানে এবং দিনারপুর পরগনাসহ উপজেলার সর্বত্র পোস্টার লাগিয়ে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর